Ameen Qudir

Published:
2020-02-16 07:16:59 BdST

সুস্থ থাকলে হয়ত আমাদের বন্ধু রাজকুমার হয়ে উঠতেন স্বনামধন্য ডা.রাজকুমার শীল


ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালীর সৌজন্যে পাওয়া সংগৃহীত লেখা 
________________________

সময়:আনুমানিক দুপুর ১ টা বেজে ৪৫ মিনিট। স্থান:বহিঃবিভাগ,বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,দিনাজপুর।আমরা কয়েকজন মেডিকেল অফিসার ডিউটি রুমে আছি।রোগী আসা প্রায় শেষের দিকে। এমন সময় প্রায় ৭০ বছর বয়সী একজন মহিলা আসলেন। সাথে ৪৮ আর ৫২ বছর বয়সের দুজন ছেলে।কি সমস্যা জিজ্ঞেস করাতে হাতের কাগজ গুলো এগিয়ে দিয়ে বললেন, প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য দরখাস্ত করবেন ছেলের জন্য।অনেক কাগজের সাথে পাবনা মানসিক হাসপাতালের দুইটি ছাড়পত্র পেলাম।প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না,কোন ছেলে রোগী।পরে ভদ্রমহিলা বুঝিয়ে বললেন,তার দুই ছেলের জন্যই দরখাস্ত করবেন।দুইজনেরই একই অসুখ।দুইজনের মধ্যে একজনের ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর সই দেখে,কিছুটা আশ্চর্য হলাম।নাম লেখা রাজকুমার শীল।হাতের লেখাটা কেন যেন তার চেহারার সাথে মিলছেনা।সুন্দর লেখা।জিজ্ঞাসা করলাম,আপনি কতদুর পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন।বললেন,ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলাম।নিজের কান কে বিশ্বাস হচ্ছে না।একে একে উনার সব কিছু বললেন।কে-৪০ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।ঢাকা কলেজ শেষে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন।দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফার্মাকোলজি তে ফেল করে পরে কয়েকবার পরীক্ষা দিয়েছিলেন।তারপর মানসিক অসুস্থতার (সিজোফ্রেনিয়া) জন্য বাড়ী থেকে নিরুদ্দেশ ছিলেন ১৪/১৫ বছর।সে সময় একটি কারখানায় কাজ করতেন।১ বছরের মত পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি ও ছিলেন।প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি ও পেয়েছিলেন,বললেন তার মা।কথা বার্তায় ও বেশ প্রকৃতস্থ মনে হলে।নিয়মিত ওষুধ খেয়ে এখন আগের তুলনায় বেশ ভাল আছেন বলে জানালেন।মেডিকেলের পড়াশোনার ও কিছু বিষয় উনার এখনো মনে আছে। বাবা পেশায় নাপিত হলে ও চারজন ছেলের একজন বাদে কাউকেই সেই পেশায় আসতে দেননি।আরেক ছেলেকে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন।
বর্তমানে তিনি একটি ভুষির কারখানায় কাজ করেন।কোনদিন ১০/২০ কোনদিন ৩০ টাকা মজুরি পান।
অনুমতি নিয়ে এক সময়ের এই মেধাবী মানুষটির ছবি তুললাম।কে ৪০ ব্যাচের আমার শ্রদ্ধেয় একজন স্যারের ছবি দেখিয়ে বললাম চিনতে পারেন কিনা? মাথা দোলালেন। হয়ত কিছুটা চিনতে পেরেছেন।মনে করার চেষ্টা করলেন।উনার মা ও ছেলের ক্লাসমেট এর ছবি দেখলেন।আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন।

কে জানে,সুস্থ থাকলে হয়ত এই রাজকুমার শীল হয়ে
উঠতেন স্বনামধন্য ডা.রাজকুমার শীল।

একজন ভাগ্যবিড়ম্বিত এবং আর্থিকভাবে অসহায় মেধাবী ছাত্রের এমন পরিণতি মেনে নেয়ার মত নয়।
ঢাকা মেডিকেলের কে -৪০ ব্যাচ সহ,যে কেউ যদি উনাদের কোনভাবে সাহায্য /যোগাযোগ করতে চান তাহলে উনার মায়ের ফোন নাম্বার সহ ঠিকানা আমার কাছ থেকে নিতে পারেন।
এক রত্নগর্ভা মায়ের করুণ আকুতি
_______________________

তাঁর মা পার্বতী রাণী শীল জানিয়েছেন, প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছিল রাজকুমার। অসুস্থতার পর বর্তমানে সে কথাবার্তায় কিছুটা স্বাভাবিক। নিয়মিত ওষুধ খেয়ে আগের তুলনায় অনেকটা ভালো।

রাজকুমারের বাবা পেশায় নাপিত হলেও চার ছেলের একজন বাদে কাউকেই সেই পেশায় আসতে দেননি। তার আরও দুই ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন।

রাজকুমারের আরেক ভাই একই রোগে আক্রান্ত। রাজধানীর তিতুমীর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি।

রাজকুমার বর্তমানে একটি ভুষি কারখানায় কাজ করেন। দিন শেষে ৩০-৫০ টাকা মজুরি পান। আর এভাবেই চলছে এ মেধাবী মানুষটির জীবন।

সামর্থবান না হওয়ায় তাদের সাহায্যার্থে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য দরখাস্ত করেছেন তাদের ৭০ বছর বয়সী মা।
তিনি বলেন, ‘অসুস্থ হওয়ায় তারা বড় কোনো কাজ করতে পারে না। কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে আমাদের বড় উপকার হতো।’

তাদের সাহায্য পাঠাবার নম্বর
০১৭০৭১৪৪৫৯৭ (বিকাশ)
পার্বতী রাণী শীল (তাদের মা)

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়