Ameen Qudir
Published:2020-02-02 07:10:29 BdST
১২ টাকাতেই রক্তের সব পরীক্ষা
ডেস্ক
____________________
রক্তের মূল উপাদানগুলি কমা-বাড়া করছে কি না, এ বার তার প্রাথমিক পরীক্ষাগুলি করা যাবে মাত্র ১০ রুপিতে ;বাংলাদেশী টাকাতে খরচ মাত্র ১২ টাকা । এখন রিক্সার ন্যূনতম ভাড়াও যার চেয়ে বেশি। খুব গড়পড়তা প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে যে পরীক্ষাগুলি করতে এখন খরচ হয় ৫০০/৬০০রুপি। আর একটু নামীদামি ল্যাবে সেই সব পরীক্ষা করানোর খরচ পড়ে ২৫০০ রুপি বা তারও বেশি। আর বাংলাদেশের ৫০০০ টাকা থেকে ১০০০০টাকার বেশী। সেটাই কম খরচের পথ দেখাল কর্মবিজ্ঞান।
শুধু তাই নয়, সেই সব পরীক্ষার জন্য আর আমার, আপনার শরীর থেকে গোটা সিরিঞ্জ ভরে রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এক বিন্দু (এক লিটারের ১০ লক্ষ ভাগের মাত্র ১ ভাগ) রক্ত নিলেই জানা যাবে আমার, আপনার রক্তে হিমাটোক্রিট, হিমোগ্লোবিন, শ্বেত রক্তকণিকা (হোয়াইট ব্লাড সেল্স বা ডব্লিউবিসি), লোহিত রক্তকণিকা (রেড ব্লাড সেল্স বা আরবিসি) ও অণুচক্রিকার (প্লেটলেট্স) সংখ্যা যেমন থাকার কথা তেমনই রয়েছে, নাকি কমা-বাড়া করছে।
জ্বর থেকে ক্যানসার, সব কিছুতেই প্রাথমিক ভাবে রক্তের যে পরীক্ষাগুলি করতে বলেন চিকিৎসকরা, তা খুব সহজে, খুব সস্তায় করার অভিনব উপায় বাতলালেন খড়্গপুরে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি)’-র অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একদল গবেষক। যাঁদের অন্যতম রাহুল অগ্রবাল, দেবদীপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব সরকার ও অর্ক ভৌমিক। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘বায়োসেন্সরস অ্যান্ড বায়োইলেকট্রনিক্স’-এ।
আমাদের রক্ত স্বাভাবিক রয়েছে কি না বুঝতে এই পরীক্ষাগুলি করাতে বলেন চিকিৎসকরা। যার আদত নাম- ‘কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি)’। তাতে দেখা হয়, রক্তে যে পরিমাণে হিমাটোক্রিট, হিমোগ্লোবিন, আরবিসি, ডব্লিউবিসি, প্লেটলেট্স থাকার কথা, তা রয়েছে কি না। ওই রক্তকণিকাগুলির পরিমাণে কমা-বাড়া বুঝেই জ্বর থেকে ক্যানসার সব ক্ষেত্রেই পরবর্তী পদক্ষেপ করেন চিকিৎসকরা।
চালু পদ্ধতি কী? সমস্যা কোথায়?
খরচটা বেশি পড়ে কারণ, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিগুলিতে যে সব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সেই সব পরীক্ষা করা হয়, সেগুলি বেশ দামি। তাদের বলা হয়, ‘সেন্ট্রিফিউজ’। তাদের রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কম নয়। সেই পরীক্ষাগুলি করার জন্য প্রশিক্ষিতদের নিয়োগ করতে হয়। সেই ব্যয়ভারও যথেষ্টই। তা ছাড়া প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্রগুলি আদৌ পোর্টেবল নয়। সেগুলিকে সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় না।
প্রধান গবেষক, খড়্গপুরের আইআইটি-র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী পত্রিকাকে বলেছেন, ‘‘ওই সব খরচ কমাতেই আমরা এই পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছি। শুধু তাই নয়, আমাদের বানানো যন্ত্রটি পোর্টেবল। খুব হাল্কা। একটা কম্পিউটার সিডির মতো। আমাদের পদ্ধতিতে রক্তের ওই সব পরীক্ষা করাতে খরচ পড়বে বড়জোর ১০ রুপি। খুব গড়পড়তা প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে যে পরীক্ষাগুলি করতে এখন খরচ হয় আড়াইশো/তিনশো রুপি। আর একটু নামীদামি ল্যাবে খরচ পড়ে ৫শ রুপি বা বা তারও বেশি।’’
সুমনদের যন্ত্রের অভিনবত্ব কোথায়?
নতুন যন্ত্রটি, বলা যায়, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির সেন্ট্রিফিউজেরই ক্ষুদ্রতম সংস্করণ।
সুমন জানিয়েছেন, তাঁরা ব্যবহার করেছেন একটি পলিকার্বনেট ডিস্ক। যা একটি সিডি-র মতো হাল্কা। সেই ডিস্কটিকে তাঁরা একটি মোটর দিয়ে খুব জোরে ঘুরিয়েছেন। ডিস্কটি ঘুরছে মিনিটে ১০০ থেকে ১ হাজার পাক।
কী ভাবে রক্তকণিকাগুলির পরিমাণ মাপা হচ্ছে?
সুমনের কথায়, ‘‘রক্তের বিভিন্ন উপাদানের ঘনত্ব বিভিন্ন রকমের হয়। নমুনা রক্ত নিয়ে খুব জোরে ঘোরা কোনও ডিস্কের উপর রাখলে সেই নমুনা রক্তের উপাদানগুলি ডিস্কের উপর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। যেগুলির ঘনত্ব কম, সেগুলি ডিস্কের উপরে কিছুটা বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর যে উপাদানগুলির ঘনত্ব কম, সেগুলি ডিস্কের উপর থাকে ভিতরের দিকে। সেই সবের ছবি তুলেই রক্তের উপাদানগুলির পরিমাণ মাপতে পারা যায়। প্রতি একক আয়তনে রক্তের ওই উপাদান ক’টা থাকতে পারে, সেই হিসাবটা কষে।’’
নতুন পদ্ধতিতে কতটা সফল গবেষকরা?
তাঁদের দাবি, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে চালু অটোমেটেড হিমাটোলজির পদ্ধতিতে রক্তপরীক্ষায় যে ফলাফলগুলি পাওয়া যায়, তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে পাওয়া ফলাফলগুলির ৯৫ শতাংশই তার সঙ্গে মিলে গিয়েছে। ফলে, এই পদ্ধতি যে অত্যন্ত নিখুঁত, তা নিয়ে অন্তত কোনও সন্দেহ নেই।
সৌজন্যে: আনন্দবাজার পত্রিকা
আপনার মতামত দিন: