Ameen Qudir

Published:
2019-10-27 07:05:14 BdST

ওয়াদা মেনে এখনও হাসপাতালে রোগী দেখেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী


 

ডা. সফিউল আলম
ভুটান থেকে ফিরে
_________________________


ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লেটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র হওয়ায় তাকে আমরা পরম আপন করে নিয়েছি। তিনি পিএম হয়েও রোগী দেখেন, সেটা বাংলাদেশের সবারই জানা। এবার এক ব্যাক্তিগত ভ্রমণে ভুটানে গিয়েছিলাম। তখন সবচেয়ে বেশী জানার কৌতুহল ছিল , তিনি ওই রোগী দেখা এখন চালাচ্ছেন কিনা। নাকি প্রধানমন্ত্রী হয়ে স্ট্যান্ট বাজি করে এখন সটকে পড়লেন কিনা । অবাক হয়ে জানলাম , না তার কথার কোন ব্যত্যয় হয় নি। তিনি এখনও তার কথা রেখে চলেছেন।
বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপে জানলাম,
তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও আচা র আচরণে কোন পরিবর্তন আসে নি। চলেন সাধারণ মানুষের মত। কোন হামবড়া ভাব নেই। তাকে ঘিরে কোন কড়াকড়িও নেই। দারুণ জনপ্রিয় তিনি। দেশ চালানোর শত ব্যস্ততা। তাতে কি! এরপরও সপ্তাহে একটি দিন বের করেন জনগণকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য। প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে তিনি নিজ দেশের হাসপাতালে যান।

শুরু করেন চিকিৎসা সেবা। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, যিনি পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে।



তার সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার তিনি ছুটে যান দেশটির ন্যাশনাল রেফারেল হাসপাতালে। গায়ে জড়িয়ে নেন এপ্রন। পঞ্চাশ বছর বয়সী এই মানুষটি হাতে তুলে নেন স্ক্যালপেল। সারেন কোনও না কোনও রোগীর অস্ত্রোপচারও।
হাসপাতালের ব্যস্ত করিডোর ধরে পায়চারি করেন প্রধানমন্ত্রী। নার্স ও হাসপাতালের অন্যান্যরা স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাজ করে যান।
হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীকে দেখে ভুটানের জনগণ চোখ কপালে তোলে না। কারণ এতে তারা অভ্যস্ত।
ভুটানের রাজতন্ত্রের সমাপ্তি হয় ২০০৮ সালে। ২০১৮ সালে সাড়ে সাত লাখ মানুষের ভোটে প্রধানমন্ত্রী হন শেরিং।

বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন শেরিং। তখন তিনি বলছিলেন, ভালো ডাক্তার হতে হলে আগে ভালো মানুষ হতে হবে। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে তাদের মন জয় করতে হবে। মানবিক হতে হবে। সে কথা তিনি অক্ষরে অক্ষরে মানছেন। শুধু তাই নয়, ভাল নেতা হলে যে মানুষ ও মানবিক হতে হবে, সেটাও মানছেন।
তার কথা,
মানুষের জন্য কাজ করার অনেক সুযোগ আছে নেতা ও ডাক্তারদের। শুধু চিকিৎসা সেবা নয় সামাজিক-রাজনৈতিক অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তারদের অবদান রাখার সুযোগ আছে।
লোটে শেরিং বলেন, আমি চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে এসেছি। কিন্তু আমার পেশাকে ছাড়তে পারিনি। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমি চাকরি না করে, বিদেশে না গিয়ে ভুটানের মানুষকে নিয়ে ভেবেছি। তাদেরকে বুঝতে চেষ্টা করেছি। তাদেরকে নিয়ে কাজ করেছি। তাই আজ আমি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হলেও, ডাক্তারি করাটা আমার কাজ। এ কাজ এতই ভালো লাগার, যে এ কাজ আমার অবসর সময়ের সঙ্গী। কেউ অবসরে গলফ খেলে, কেউ শিকার করে, আর আমি সার্জারি করি। তাই আমার ছুটির দিনটা আমি হাসপাতালেই কাটাই।

১৯৯১ সালের নভেম্বরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হয়ে এসেছিলেন লোটে শেরিং। এরপর এমবিবিএস পাস করে জেনারেল সার্জারি নিয়ে লোটে শেরিং এফসিপিএস করেছিলেন ঢাকাতেই।
ময়মনসিংহ মেডিকেলের পাশাপাশি কিছুদিন হাতে কলমে কাজ করেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজেও।
এরপর ২০০২ সালে দেশে ফিরে কয়েক বছর চাকরির পর রাজনীতিতে যুক্ত হন বন্ধু টান্ডি দর্জির প্রতিষ্ঠিত দলে যোগ দেয়ার মাধ্যমে। দর্জি বর্তমানে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তবে তিনি লোটে শেরিংয়ের মতো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকেই এমবিবিএস করেন।

২০১৩ সালের নির্বাচনে তাদের দল হেরে গেলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশটির ক্ষমতায় যায় তাদের দল ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন লোটে শেরিং।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়