Ameen Qudir

Published:
2019-10-20 04:56:42 BdST

জীবন দিয়ে সৌদৗ ফেরত ডা. আলম প্রমাণ দিলেন : দেশের মানুষের সেবা করতেই তিনি গ্রামে ফিরেছিলেন



ডেস্ক/ সংবাদদাতা
______________________

সৌদী আরবে বিশাল বেতন ও সুযোগ সুবিধার চাকুরি ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন ডা. শাহ আলম। তার পবিত্র উদ্দেশ্য ছিল, আর বিদেশীদের সেবা নয়; দেশের মানুষের সেবা করবেন। সেজন্য একদম প্রত্যন্ত পল্লীতে গিয়ে প্রায় বিনা মূল্যে সেবা দিতেন রোগীদের । কিন্তু স্বদেশেই ঘাপটি মেরে থাকা ঘাতকরা এই মহান মানবসেবীকে বাঁচতে দিল না। কতল করল তাকে নির্মমভাবে , যখন তিনি শত রোগীর জীবন সেবা দিয়ে চট্টগ্রামে নিজ পরিবার পরিজনের কাছে ফিরছিলেন।
মদিনা হাসপাতালে শিশু বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন ডাক্তার মো. শাহ আলম। নিজ এলাকার প্রতি অকুণ্ঠ ভালবাসা থেকে মদিনার চাকরি ছেড়ে ২ বছর আগে বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি। সীতাকুণ্ডের কুমিরা বাজারে গড়ে তোলেন বেবী কেয়ার নামে ক্লিনিক। সেখানে নামমাত্র ফি তে সেবা দিচ্ছিলেন। বেশীর ভাগ সময় নিা ফিতেও গরিব রোগীদের দেখতেন অকাতরে।

মোহাম্মদ শাহ আলমের নিকট আত্মীয় ব্যারিষ্টার মীর হেলাল জানান, অত্যন্ত ঠাণ্ডা ও শান্ত মানুষটা সৌদি আরবের মদিনা হাসপাতালে শিশু বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। হঠাৎ উনার মাথায় আসলো উনার নিজ এলাকার প্রতি উনার দায়বদ্ধতা আছে। তাই তৎক্ষণাৎ মদিনার চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশে ফেরত চলে আসলেন এবং নেমে পড়লেন কুমিরার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি আধুনিক ও মানসম্মত শিশু সেবা ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায়। এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যেই দিন রাত পরিশ্রম করে সে ক্লিনিক চালু করে সেবা দেয়া শুরু করলেন এলাকাবাসীদের।

কিন্তু এই দেশে তো আর ভালো গুণী লোকের কদর নেই, নেই এদেশে থাকার অধিকার। তাই এই সোনার মনের নিরীহ এবং অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র স্বভাবের ডাক্তার শাহ আলম ভাইকে লাশ হয়ে পড়ে থাকতে হলো কুমিরার জঙ্গলে। আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে বিচারের আশা করি না।

শুক্রবার সকাল আটটার দিকে কুমিরার ঘাটগড় এলাকার রাস্তার পাশ থেকে প্রবাস ফেরা ডাক্তার মো. শাহ আলমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত শাহ আলমের স্বজনদের অভিযোগ, তাকে পূর্বপরিকল্পতভাবে হত্যা করে ওই স্থানে ফেলে গেছে খুনিরা।
ডাক্তার মোহাম্মদ শাহ আলম কুমিরার স্থানীয় মৃত আজিজুল হক মাষ্টারের ছেলে।

মৃত ডাক্তার মোহাম্মদ শাহ আলমের স্বজরা জানান, প্রতিদিনের মত রোগী দেখে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে চেম্বার থেকে চট্টগ্রাম মহানগরের বাসার উদ্দেশ্যে বের হন তিনি। পথেই দুর্বৃত্তরা তাকে খুন করে সড়কের পাশে ফেলে যায়।

পুলিশ জানায়, উপজেলার বড় কুমিরা ফেরিঘাট বাইপাস ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে শুক্রবার সকালে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।

সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম শেখ বলেন, প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। কিন্তু আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর ধারণা পাল্টে যায়। খুনের মোটিভ থাকায় সিআইডিকে কল করা হয়। পরে সিআইডি এসে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। সে সময় কোনো পরিচয় না পাওয়ায় অজ্ঞাত লাশ হিসেবেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ চৌধুরী জানান, কুমিরা হাইওয়ে সড়কে পাওয়া লাশটি ডাক্তার শাহ আলমের। দীর্ঘ ৩০ বছর আরবের মদিনা হাসপাতালে শিশু বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এলাকার মানুষ সেবা দেয়া জন্য ছোট কুমিরা বাজারে বেবী কেয়ার নামে ক্লিনিক খুলেছেন তিনি। রাতে চেম্বার থেকে চট্টগ্রাম নগরের বাসায় যাওয়ার পথে তাকে কেউ পরিকল্পিতভাবে খুন করে রাস্তার পাশে ফেলে গেছে।

 

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়