Ameen Qudir

Published:
2016-12-31 20:12:37 BdST

পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের পাশাপাশি বিশ্বমানের হাসপাতালও করুন


 

 

 নাভীম কবির প্রতীক , এমবিবিএস শিক্ষার্থী
_____________________________

বাংলাদেশে অনেক সেতু হয়,রাস্তা হয়,ফ্লাইওভার হয়,মেট্রোরেলের প্রস্তাব আসে।কিন্তু সরকারী উদ্যোগে একটি আধুনিক বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাব আসেনা।বাজেট দিয়ে দায়িত্ব সারা যায় কিন্তু দেশের স্বাস্থ্য খাতের চেহারা বদলানো যায়না।

 

আমাদের মন্ত্রী,এমপি,ভিআইপি,বা মোটামুটি লেভেলের স্বচ্ছল মানুষেরা দুদিন পর চেক আপের জন্য দেশ ত্যাগ করেন মাঝে মধ্যে।অনেকে দূরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা করাতেও যান।গন্তব্য ভারত,থাইল্যান্ড বা সিংগাপুর।তাদের টাকা আছে, যেতেই পারেন।আমাদের টারশিয়ারী লেভেলের হাসপাতাল থেকে শুরু করে ইউনিয়ন সাবসেন্টার গুলোর সেবাগ্রহীতা গ্রামের চাষাভুষা আর স্বল্প আয়ের মানুষ।ভিআইপিদের সাথে তাদের কি তুলনা হয়?

 

সংবিধানে দেশের সবার সমান অধিকার।বিত্ত বা বর্ণ সেখানে মুখ্য নয়,বাংলাদেশী এটাই হওয়া উচিত ছিল সুবিধা প্রাপ্তির মাপকাঠি। কিন্তু মাপকাঠি হল বিত্তই।সবাই মেনেও নিয়েছে।

 

আমাদের চিকিৎসকদের যোগ্যতা বা আন্তরিকতা কোনটাই স্বল্প ছিলনা।অন্তত বৃক্ষমানব,খাদিজা বা গুলি খাওয়া শিশুর চিকিৎসা কোনটাই বিফল হয়নি।স্বল্প সুবিধা দিয়েও তারা সফলতা দেখিয়েছেন।


ডায়াগোনোসিসের অনেক সফলতাই আমরা দেখিছি আগে কিন্তু বিশ্বাস করেছি বিদেশে বিফল হবার পর।বৃক্ষমানবের বিরল রোগটির চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী বিভাগের অধ্যাপকবৃন্দ বিশেষ করে সামন্ত লাল সেন স্যারের তৎপরতা প্রশংসনীয়।


চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক সার্জারীর বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপিকা তাহমিনা বানু ম্যাডামের বিষয়টি একটু উল্লেখ করি।বিরল কিছু সার্জারীর নেতৃত্ব তিনি দিয়েছিলেন যেটা আপাত দৃষ্টিতে দুরূহ ছিল।

কিন্তু তাদের এই ঝুকির পিছনে মানবতা।আর একটি উদাহরণ দেই,একটি কুড়িয়ে পাওয়া মুমূর্ষু শিশুর চিকিৎসা দেয়ার সময়ে পিতামাতার পরিচয় ফাইলে লিখার সময়ে নিজের নাম মায়ের স্থানে লিখতে বলেছিলেন।

এই কথাগুলো অনেকের কান পর্যন্ত পৌছায়না।পৌছায়না বলেই কসাই বলে আমরা এক হাত নিতে প্রস্তুত থাকি, আর এখন দিয়েও ফেলি।অক্সিজেন সিলিন্ডারের স্বল্পতা বা না থাকা বা এক্সরে মেশিন না থাকার দায়ভার চাপিয়ে দেই আমরা ডাক্তারের কাধে,ভেবে দেখিনা তার চিকিৎসা প্রদান সুবিধা কতটা পর্যাপ্ত।

ডাক্তারদের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকার কারণে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা না দিতে পারাকে ডাক্তারের ব্যর্থতা বলে পত্রিকায় প্রকাশ করছে সাংবাদিকরা।দেশের স্বাস্থ্য সেবা বিমুখ হচ্ছে মানুষ।

অথচ,চিকিৎসকদের সফলতার কথাগুলো প্রচারে এলে আমরা দেবী শেঠির জায়গায় এবিএম আব্দুল্লাহ, কাজী দীন মুহম্মদ স্যারের নাম শুনতাম,বাহিরের মানুষ ও আসত।

 

কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয়ের কথা প্রায়ই শোনা যায়।এই দাবির বাস্তবতা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।ডাক্তারদের মনিটরিং এর আগে জরুরী স্বাস্থ্য সেবার আধুনিকায়ন। হলফ করে বলা যায়,সিংগাপুর,থাইল্যান্ডের মত বিশ্বমানের হাসপাতাল সরকারী উদ্যোগে করার সদিচ্ছা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এখনো দেখা যায়নি।কারণ আমাদের উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি এখনো উচু দালান আর রাস্তা ঘাট কেন্দ্রিক।আমাদের সাথে পার্থক্য ওদের এখানেই।

 

ক্ষতি কি আমার দেশের চাষী যদি দেশেই সিংগাপুরের চিকিৎসা সেবা পায়?এটা কি বিলাসিতা হবে ভাবতে যে অন্তত এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সেবায় সিংগাপুর,থাইল্যান্ডের মত হোক?

__________________________


নাভীম কবির প্রতীক , চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ । সুলেখক। এমবিবিএস শিক্ষার্থী।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়