Ameen Qudir

Published:
2019-09-27 23:02:52 BdST

কলকাতার ডাক্তার নিয়ে ঢাকার এক ভুক্তভোগী ডাক্তারের প্রামাণ্য অভিজ্ঞতা


ডেস্ক
_____________________
ডা. আখতার মাহমুদ লিটন। বাংলাদেশের একজন সজ্জন লোকসেবী চিকিৎসক।রোগীদের প্রতি সদা নিবেদিত প্রাণ দরদী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। কর্মরত আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালে। তিনি একটি ওষুধের জন্য গিয়েছিলেন কলকাতায়। তারপর ওষুধ সন্ধান সূত্রে মুখোমুখি হন কলকাতার একজন ব্যস্ত ডাক্তারের। যার ভিজিট ১৩০০ রূপি। যার সিরিয়াল পাওয়া অতি কষ্টকর। কেমন ব্যবহার পেলেন সেই ব্যস্ত ডাক্তারের কাছে; আসুন তার জবানিতেই শুনি।
ডা. আখতার মাহমুদ লিটন লিখেছেন এভাবেই:
"কয়েক বছর আগে একটা ঔষধের ( ঢাকাতে ও পাওয়া যায় দাম অত্যন্ত বেশী) ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে কলকাতায় গিয়েছিলাম। প্রথমেই ধাক্কা খেলাম, বলল এই ঔষধ টা আমরা কেবলমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের ই কমমূল্যে দিয়ে থাকি, আপনার রেগুলার দামে নিতে হবে, হতাশ হয়ে বললাম এই কথা তো আপনি আমাকে টেলিফোনেই বলতে পারতেন তাহলে এত ঝক্কিঝামেলা করে এখানে আসতে হতো না,
পরে উনি একজন ডাক্তারের ফোন নাম্বার দিয়ে উনার সাথে দেখা করতে বললেন। মনে মনে ভাবলাম ধূর দেখা করে আর কি হবে? দুই একদিন ঘুরেফিরে চলে যাই, স্ত্রী বলল বলছে যখন চলো দেখা করেই যাই। অগ্যতা পরের দিন সকালে উনাকে ফোন করে বললাম স্যার আমি বাংলাদেশ থেকে আসছি, আপনার সাথে দেখা করতে চাই, উনি একটু অবাক হয়ে বললেন একদিনে তো সিরিয়াল পাবেন না,তারপর ও হাসপাতালে যোগাযোগ করতে বললেন।

সূর্যের চেয়ে বালির তাপ বেশী। কাউন্টারে বলার পর বললো, আরে দাদা উনাকে একদিনে কিভাবে দেখাবেন? একমাস আগ থেকে সিরিয়াল লাগে, তারপর অনেকটা অনুনয় এবং ডাক্তার স্যারের কথা বলার পর বিকেলের দিকে একটা সিরিয়াল দিলেন, টাকা জমা দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ১২ টার দিকে ডায়াবেটিস জনিত কারণে ক্ষুধার উদ্রেক হইলে বললাম আমি কি একটু বাইরে যেতে পারি? এসিস্ট্যান্ট বলল সেটা আপনার ব্যাপার, এরি মধ্যে ডেকে ফেললে আমরা কিছু জানি না। স্ত্রী বলল, তুমি যে ডাক্তার পরিচয় দাও, বললাম কি যে বলো? দেশেই কোন পাত্তা পাই না আর এইটা তো কলকাতা!
অবশেষে তিনটার দিকে সহকারী চিকিৎসক ইতিহাস নিলেন এবং চারটার দিকে কাংখিত চিকিৎসকের রুমে প্রবেশ করলাম, ইতিহাস নেয়ার পাঁচ মিনিট পরে নিজে চিকিৎসক সেই পরিচয় দিলাম, মোট ১৫ মিনিট সময় দিলেন।
আহ! কি ব্যবহার এবং কথাবার্তা! কোন মানুষের ব্যবহার এত সুন্দর হতে পারে! আমার স্ত্রী তো উনার ব্যবহারে অজ্ঞান হওয়ার দশা, বিস্মিত হয়ে বলল ডাক্তারদের ব্যবহার এত ভাল হয়!
ডাক্তার সাহেব আমাদের সামনেই দিল্লীতে ফোন করলেন এই ব্যাপারে এবং আমাকে কালকে দুপুর ১২টায় দেখা করতে বললেন।
ভিজিট ১৩০০ রুপি। এসিস্ট্যান্ট ডেকে বললেন হাসপাতালের ২০০ রুপি রেখে বাকী টাকা ফেরত দিতে, আমি বললাম যদি ভিজিট টা নিতেন তাহলে খুব খুশী হতাম, বললেন এইটা একটা প্রফেশনাল ব্যাপার, একজন চিকিৎসক কি আর একজন চিকিৎসক, চিকিৎসক এর মা বা ছেলে মেয়ের থেকে ভিজিট নিতে পারে?
পরের দিন দুপুর ১২ টায় দেখা করে আসার পর থেকেই ফোন আসা শুরু করল, একজন দিল্লি থেকে ফোন করল, আমি হিন্দি ও বুঝি না ইংরাজীতে ও কাঁচা। কোন মতে ইয়েস নো ভেরি গুড বলে শেষ করলাম, আর একজন ফোন করে রাত আটটায় হোটেলে এসে দেখা করলেন এবং বললেন স্যার বলছেন আপনি একজন ডাক্তার এবং স্যারের বন্ধু। বন্ধু শুনে আমি অবাক হয়ে ভাবলাম কি মহান মানুষ!
লোকটি বললেন যেহেতু স্যার বলছেন এবং আপনি স্যারের বাংলাদেশের বন্ধু তাই ঔষধটা আপনাকে আমরা চল্লিশ পারসেন্ট ডিসকাউন্ট এ দিবো।
তারপর দিলখুশ মনে ঔষধ নিয়ে আমাদের দেশে চলে আসলাম, লেখাটি অনেক বড় হয়ে গেল।
( এখানে অনেকে বলবেন ভারতীয় রা ব্যাবসা বুঝে তাই আপনাদের সাথে ভাল ব্যবহার করছে, আরে ভাই ভাল ব্যবহার তো আপ্নে আমি চাইলেও করতে পারবো না, ঠিক আছে চলেন আমরাও ব্যাবসা করি এবং ভাল ব্যবহার এবং উপকার করার চেষ্টা করি।)"

 

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়