Ameen Qudir

Published:
2016-12-28 16:45:10 BdST

গ্রামে সত্যিকার চিকিৎসা পরিস্থিতি


 

 

ডা. মৌমিতা শীল
__________________________

গ্রামে সত্যিকার চিকিৎসা পরিস্থিতিটা কেমন?

দিন দুয়েক আগে বরিশালে গেলাম,প্রায় অজপাড়া গ্রামে বলা যায় । এখন অবস্থা কিছুটা উন্নত ।
বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম, কিন্তু বেড়ানোর চে রোগী দেখতে হলো বেশী!!!
অবশ্যই বিনা পারিশ্রমিকে ।

যা চোখে পড়লো :
(১) এখানে ডাক্তার বলতে ওষুধের দোকানদার বা সামান্য ট্রেনিং নেয়া (কি যে সেই ট্রেনিং, তার নাম-ধাম উল্লেখ করে হাসাতে চাই না!)
(২) আ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া কারোর নাকি রোগ ভালোই হয় না এখানে(!)
ব্যাপারটা সত্যি!! আমি ভালমতই খেয়াল করেছি, বাচ্চাদের ছোট থেকে আ্যন্টিবায়োটিক খাইয়ে খাইয়ে অনেক গুলি ড্রাগের প্রতি রেজিস্ট্যান্ট বানিয়ে তবেই বড় হাসপাতাল বা অন্তত 'সিম্পল্ এমবিবিএস '-এর কাছে আনে তারা! কিছু করার থাকে না,আরও হায়ার জেনারেশনের আ্যন্টিবায়োটিক দেয়া ছাড়া।

(৩) Antihipertensive,NSAIDS, Omeprazole,Esomeprazole, যেকোনো pain-killer আর কাশের সিরাপ, দোকাকানদার কাম্ ডাক্তার (?) অহরহ দিয়ে থাকে। রোগীরা বিনা বাক্যব্যায়ে খায়!! সেরে যাওয়াই মূখ্য। অধিকাংশের এমন অবস্থা যে কি রোগ হয়েছে তা জানাও যেনো দরকারি না! সারলেই হয়!

(৪) গ্যাসের ট্যাবলেট আর প্রেশারের বড়ির ব্যাবহার ভয়াবহ! মুড়ির মতন খায় পারলে!
একটা ব্যবস্থা পত্রে একটি Antihipertensive drug দেখলাম দিনে ৩বার খেতে বলা হয়েছে,কিন্তু রোগীকে জিজ্ঞাস করে জানা গেলো তার প্রেশার আদৌ কোনোদিন মেপে দেখে ওষুধটি দেয়া হয় নি (!!!!!) রোগীর কম্পলেইন ছিলো ঘাড়ের পিছনে ব্যাথা,ব্যাস্ ডায়াগনোসিস করা কম্প্লিট-হাই প্রেসার!! কী আশ্চর্য।

(৫) প্রেশার মাপতে দেখলাম একজন পল্লীচিকিৎসক কে (!!)। ৪০-৪৫ বছর বয়স্ক
রোগীটির প্রেশার ১০০/৬০ মি.মি.পারদ।
ডাক্তার সাহেব বল্লেন "আপ্নের হাই প্রসার " (!!!!) আন্নে Frexit খায়েন (!!)" এই তো অবস্থা!

(৬) ম্যাক্সিমাম বাচ্চা অপুষ্টিতে ভুগছে। মায়েদের কোনো ধারনাই নেই যে বাচ্চাকে কি খাওয়ানো উচিত!
তারা জন্মের পর থেকেই "তোলা" খাবার খাওয়ায়,
৬মাস গেলে সুজি (!)
আর ২-৩ বছর বয়স হলে একটু একটু ভাত খাওয়ায় (!)

কম্পলেইন একটাই-''বাচ্চা খায় নাহ্!'"
আরে বাচ্চা খাবে কি? বাড়িতে সুজি আর বাইরে গেলে চিপস চকলেট,এরপরে আবার সুস্বাস্থ্যও আশা করে!! সঠিক চার্ট বানিয়ে খেতে পরামর্শ দিলে বলবে-"চেস্টা করছি,খায় না!"
চেস্টা তো একবেলাতেই সীমাবদ্ধ, সে চেস্টায় কি ফল ফলবে!

 

(৭) প্রায় প্রতিটা reproductive age এর বিবাহিত মহিলারা মাসিক নিয়ে আতংকে দিন কাটায়, প্রতিমাসে(!!) তারা কোনোধরনের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ধারে কাছে যায় না (!!) কনসিভ করলে বাসায় বসে মিসোপ্রোস্টলের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করে (!!!)
অধিকাংশই রক্তশূন্য,
এদের একটা বড় অংশ যৌনবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত,
তারা সেগুলোর কোনো সুচিকিৎসা নেয় না,
সাধারনত তারা গাছ-গাছড়া,ঝাড়-ফুঁক,পানি পড়া, আজেবাজে স্টেরয়েড মলম (?) এসব দিয়ে রোগ সারানোর (!) চেস্টা করে (যার ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ,কিন্তু তা নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যাথা নেই!!)

 

 

(৮) অধিকাংশ মহিলার একই কম্পলেইনঃ
মাথাব্যাথা,
গায়ে ব্যাথা,
চোখে অন্ধকার দ্যাখে,
দুর্বল লাগে,
হাত পা জ্বালা পোড়া,
মাথা ঘুরানো ইত্যাদি ইত্যাদি উপসর্গ,যেগুলোর বেশিরভাগই মনে হয়েছে অবসাদজনিত কারন থেকে উদ্ভূত।
(৯) একটু বেশি বয়স্ক মহিলাদের প্রধান কম্পলেইন :
কোমোর ব্যাথা,
পায়ে ব্যাথা,
জয়েন্ট পেইন।
এবং তারা চিকিৎসা হিসেবে সাধারণত কেরোসিন তেল মাখে

একটা MBBS ডাক্তারের যে কি দূর্ঘট এরকম হাজার হাজার গ্রামে,তার হিসাব নাই (!)
বল্লেই বলবেন প্রতি উপজেলায় health complex আছে।
তা অবশ্যই আছে,আর সেখানে রোগী অনুপাতে কয়জন ডাক্তার আছে, একজন মেধাবী, বিসিএস ক্যাডার ডাক্তারের জন্য কি ধরনের মানবেতর ব্যাবস্থা রয়েছে, জীবন ধারনের,তাও জানি আমরা!
প্রতি বছর কি ডাক্তার নিয়োগ দেয়া যায় না?

নিজ নিজ গ্রামে (কমপক্ষে পরপর ৩টি গ্রামে) অন্তত ১জন বা ২জন করে ডাক্তার যদি নিয়োগ পান,একজন ক্যাডারের উপযুক্ত বাসস্থান,অন্যান্য সকল সুবিধা,পূর্ন নিরাপত্তা,
যাতায়াতের সম্পূর্ন সুযোগ-সুবিধা ও হাসপাতেলের প্রশাসনিক ক্ষমতা সহ, মাত্র একবছরের জন্য (গ্রাম ভিত্তিক মাতত্র ১বছরের পোস্টিং,পরের বছর উপজেলা স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সে ট্রান্সফার ও পরে রেফারেল হাসপাতালে), তাহলে এই অবস্থার সম্পূর্ন পরিবর্তন হওয়া কিন্তু সম্ভব।

 

 

 

প্রতিবছর ডাক্তারদের জন্য ক্যাডারভিত্তিক আলাদা পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান নিয়ে কবে আমরা সোচ্চার হবো!

জুডিশিয়াল ক্যাডার নিজেদের আলাদা পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যাবস্থা করে নিয়েছে। আমরা কেনো চুপ করে আছি।
এরকমটা হলে ডাক্তাররা চাকুরি সংকট থেবে মুক্তি পেতেন,
রোগীদের দূরবস্থা কাটতো,
আর ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালের বদমায়েশি বন্ধ হতো।

_______________________

 

 

 

ডা. মৌমিতা শীল । সুলেখক।

Medical Officer : Doctor Zahed Memorial Shishu Hospital,Faridpur
Former Intern Doctor : Faridpur Medical College Hospital
Studied Faridpur Medical College,Faridpur

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়