Ameen Qudir

Published:
2019-07-03 22:06:05 BdST

হাজার হাজার শিশু ক্যান্সার রোগীকে চিকিৎসা বঞ্চিত করা যে কতটা ভয়াবহ বুঝতে পারছেন?


 


নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের প্রখ্যাত চিকিৎসক ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন মেধাবী শিক্ষার্থী ডা. সিনহা মনসুর বিস্ময়ভরে লিখেছেন এক দীর্ঘ লেখা। অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ!লেখাটি প্রকাশ করা হল।

অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ!

নড়াইল হাসপাতালে চিকিৎসকের সাথে মাশরাফির অশালীন আচরণের প্রতিবাদে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক মন্তব্য করেছিলেন।এদের ম্যধ্যে ৬ জন চিকিৎসককে ‘শোকজ’ করা হয়েছে।দুইজন চিকিৎসককে বদলী করা হয়েছে।এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু রক্তরোগ ও ক্যান্সার বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ কে রেজাউল করিম।উল্লেখ্য যে, শিশু ক্যান্সার বিষয়ে বাংলাদেশে মাত্র তিনজন অধ্যাপক রয়েছেন।তিনি তাঁদের মধ্যে একজন।প্রথমে তাকে শোকজ করা হয়েছে। দু’মাস পর উনাকে রাংগামাটি মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়েছে।

রাংগামাটি মেডিকেল কলেজে শিশু ক্যান্সার বিভাগই নেই! সেখানে এই অধ্যাপকের কি করবেন? কাকে সেবা দেবেন?
মাশরাফি কান্ডের ২ মাস পরে অধ্যাপক রেজাউল করিমকে দুর্গম অঞ্চলে বদলির মাধ্যমে হাজার হাজার শিশু ক্যান্সার রোগীকে চিকিৎসা বঞ্চিত করা যে কতটা ভয়াবহ তা কি আপনারা বুঝতে পারছেন?

একজন এম.পি/ক্রিকেটারের সমালোচনায় লেখা দু’লাইনের একটি মন্তব্যের বিপরীতে হাজার হাজার ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসাকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দেয়া ? কি ভয়াবহ!
এটা কি মাথাভারী প্রশাসনের মাথায় ঢুকে?

মাশরাফিরা জনগণের টাকায় সারা দুনিয়ায় চিকিৎসা করাতে পারেন, কিন্তু এই দরিদ্র ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের দৌড় সরকারি হাসপাতালে একচিলতে কড়িডোর! সেটা থেকে তাদেরকে বনচিত করার অধিকার আপনাদেরকে কে দিয়েছে?

দ্বিতীয় চিকিৎসকের নাম আমিনুল ইসলাম।বদলী হওয়ার আগ পর্যন্ত উনি ছিলেন পোষ্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সের কো-অর্ডিনেটর ও সুপারভাইজার। রেসিডেন্টদের সাথে রাউন্ড, ক্লাশ, ব্রংকোসকপি, morning session এসব করেই কেটে যেত তার দিন।সপ্তাহে ছয় দিনের পরিবর্তে তিনি তিনদিন প্রাকটিস করতেন! যাতে করে বেশীর ভাগ সময়টা তিনি শিক্ষকতায় দিতে পারেন!

দু:খভরে আমিনুল ইসলাম বলেছেন:
'ঢাকায় যেহেতু আমার কোন শিকড় নেই, আমার কোন বাচ্চাও ঢাকার স্কুলে পড়েনা -আমি দূরে কোথাও চলে যেতে বাধ্য হচ্ছি এ নিয়ে তেমন দুঃখবোধও নেই। শুধু দুঃখ হচ্ছে এ রেসিডেন্টদের সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত হব। তাদের নিয়ে আর রাউন্ডে দেয়া হবেনা, তাদের ক্লাশ পরীক্ষায় আমার কোন সংশ্লেষ থাকবেনা, নতুন কোন ব্যাচের সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক গড়ে উঠবেনা- এ সব চিন্তায় শুধু বুকের কোনে এক হিমস্রোত বয়ে যায়। Pulmonology র যে সব কাজকর্ম এদেশ সেদেশ ঘূরে শিখে এসেছিলাম তা ও আর করে দেখানোর সূযোগ হবেনা সেটাও হতাশার। আরো কষ্টের হলো আমাদের ডাক্তারদেরই কেউ আমাদের ফাসিয়ে দিয়েছে! রাষ্ট্র আমাদের উপর শোধ নিতে গিয়ে নিজেই ঠকছে না তো?
'যারে তুমি নীচে ফেল
সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে!
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে!

এই দুইজন চিকিৎসকের বদলীর সাথে কর্তব্যে অবহেলা, দূরনীতি বা চোরামির কোন সম্পর্ক নেই।যা আছে তা হলো আমাদের সংকীরনতা।তাদের অপরাধ প্রজাতন্ত্রের করমচারি হয়ে তারা মন্তব্য করেছেন! মন্তব্য করা যাবে না!

দেশে ব্যাংক ডাকাতি হবে, দেশের টাকা বিদেশে চলে যাবে,, ঋন-খেলাপীরা নূতন উদ্যোমে মাঠে নামবে। কথা বলা যাবে না।কথায় কথায় ‘রাবিশ’ শুধু আমলা বা মন্ত্রীরা বলবেন। অর্থমন্ত্রী ঋন-খেলাপীদের নিয়ে নূতন নূতন পরিকল্পনা করবেন। কথা বলা যাবে না!
এদের জন্যেই কবি বহু আগে বলে গিয়েছেন:
‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই - প্রীতি নেই - করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব'লে মনে হয়
মহত্‍‌ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়’!

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়