Ameen Qudir

Published:
2019-07-01 20:20:59 BdST

সিজারিয়ান সেকশান এমন ছুরি:যার দুইদিকেই ধার, করলেও কাটে , না করলেও কাটে


 



_______________________

ডা. অসিত বর্দ্ধন
_________________________

সিজারিয়ান সেকশান এমন একটা ছুরি যার দুইদিকেই ধার আছে, করলেও কাটে , না করলেও কাটে। রোগীকেও কাটে, ডাক্তারকেও কাটে। হাইকোর্টে একটা রিট হয়েছে অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধ করার জন্য। জনমনে একটা ধারনা আছে, যে সিজার করলে বেশি টাকা পাওয়া যায়, তাই হাসপাতাল ও ডাক্তারের যোগসাজশে সিজার বেশি হয়। তাই সম্ভবত এই রিট হয়েছে।

আমাদের দেশে সত্যিকারের পরিসংখ্যানের বড় অভাব। যা আছে তা প্রক্ষেপিত। মানে ১০ জনে যদি ৩টা সিজার হয়, তাহলে প্রতি লাখে ৩০হাজার সিজার হবে , এমন। সত্যকারের ১ লাখ ডেলিভারির হিসাব থাকলে হয়ত এই সংখ্যাটা অন্য রকম হতে পারত।

আরেকটি বড় সমস্যা যেটা নিয়ে আলোচনা কম হয় , তা হচ্ছে মান নির্ধারণ! ধরুন আমেরিকায় যে কারণে সিজার করা নিয়ম বিরুদ্ধ, সেটা বাংলাদেশে নিয়মের মধ্যে পড়তে পারে। আবার বাংলাদেশে যে কারণে সিজার হয় , আমেরিকাতে সে কারণে সিজার করা অপরাধ হতে পারে।

সিজার অপারেশন করার কারণ অনেক হতে পারে। প্রথমত গর্ভস্থ শিশুর সুরক্ষা। মায়ের বা শিশুর এমন অবস্থা যা শিশুর জীবন হানি ঘটাতে পারে। দ্বিতীয়ত স্বাভাবিক প্রসব মায়ের জন্য শারীরিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে, অথবা মায়ের শারীরিক সমস্যার জন্য স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব নয়। তৃতীয়ত দুর্ঘটনা। চতুর্থত শিশুর শারীরিক অবস্থান পরমাপের যন্ত্রপাতি না থাকা। পঞ্চমত ভৌগলিক কারণ। ষষ্ঠ কারণ জনবল। সপ্তম কারণ সামাজিক প্রবণতা। এমন আরও অনেক কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে।

প্রত্যেকটি কারণের আবার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। এর সাথে যোগ হয়েছে সামাজিক কুসংস্কার, অজ্ঞানতা, অবিশ্বাস! যেমন একটা কুসংস্কার হচ্ছে যে সিজার এর বাচ্চা অপুষ্ট হয়। অথবা সিজার করলে মায়ের শারীরিক ক্ষতি হয়! অজ্ঞানতার উদাহরণ হচ্ছে প্রয়োজনীয় সিজার করার সিদ্ধান্ত নিতে বেশি সময় নিলে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। হয়ত দেখা যাবে সিজার করেও মৃত শিশু ভূমিষ্ঠ হচ্ছে। অবিশ্বাস এর উদাহরণ হচ্ছে যে ডাক্তার ইচ্ছে করেই সিজার করে। অপ্রয়োজনীয় সিজার। কুসংস্কার, অজ্ঞানতা, অবিশ্বাস মিলেই জনমনে অপ্রয়োজনীয় সিজারের ধারনা জন্মায়। এই ভুল ধারনা থেকে আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীও রেহাই পাননা।

বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেন একটি ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। সচেতনতা তৈরির জন্য। সব পক্ষের মধ্যে সচেতনতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সহযোগিতা। গর্ভ ধারণের পর থেকে প্রসবের আগে পর্যন্ত কাউন্সেলিং এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যারা এই ক্যাম্পেইনের উদ্যোক্তা তারা কাউন্সেলিং এর দায়িত্ব নিতে পারেন। কারণ চিকিৎসকদের পক্ষে অসংখ্য রোগীর নিয়মিত কাউন্সেলিং প্রায় অসম্ভব।

রিট এর আগেও হয়েছে, যেমন প্রেস্ক্রিপশান নিয়ে, এন্টিবায়োটিক লেখা নিয়ে। এখন হল সিজার নিয়ে। আগের দুটো রিট ও তার কার্যকারিতা দেখলে বোঝার উপায় নেই যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ দায়িত্ব নিয়ে তা পালনে উদ্যোগ নিয়েছে। এই রিট শুধু রিট করার জন্য করা হলে কোন সুফল বয়ে আনবে না, যদি না সংশ্লিষ্ট বিভাগ দায়িত্ব না নেন।

চিকিৎসকদের ও রোগীদের সমস্ত তথ্য ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডারে থাকলে , এবং তা বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের কাছে সহজলভ্য হলে তবেই প্রয়োজনীয় তথ্য বিশ্লেষণ করে দায় নিরূপণ করা সম্ভব। এজন্য ক্লাউড বেযড সেন্ট্রাল ডাটাবেসের কোনো বিকল্প নেই। BDEMR এরকম একটি ডাটা বেসের উদ্যক্তা।

_______________________

ডা. অসিত বর্দ্ধন । পাঠক ধন্য সুলেখক। তার তৈরী করা অ্যাপস ডাক্তারদের কল্যাণে এখন জনপ্রিয়।
কানাডায় কর্মরত এনেস্থেসিওলজিস্ট, BDEMR নামের সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়