Ameen Qudir

Published:
2016-12-27 17:13:03 BdST

অঙ্গদান করে সবার সঙ্গে




 


ব্রেন টিউমার ধরা পড়েছিল স্কুলে পড়ার সময়েই। কিন্তু সে জন্য ভেঙে পড়েননি। বরং, রোগের সঙ্গে লড়াই করে বেছে নিয়েছিলেন অন্যের সেবা করার কাজ। মৃত্যুতেও তার ব্যতিক্রম হল না।

খাতায়কলমে সুরভি বরাট মারা গিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু, তিনি বেঁচে থাকবেন অন্য কারও শরীরে। বেঁচে থাকবেন আত্মীয়-পরিজন-পড়শি-সহকর্মীদের মনে।

মাস ছয়েক আগে দুর্গাপুরের হাসপাতালে নার্সের চাকরি নিলেও অসুস্থতার জন্য মাঝে-মাঝেই আসতে পারতেন না। সে জন্য পরে বাড়তি কাজ করার জেদ ধরতেন। চিকিৎসায় যখন শরীর তেমন সাড়া দিচ্ছে না, আসানসোলের হিলভিউ এলাকার বাসিন্দা সুরভি বাবা-মাকে অনুরোধ করেছিলেন, মৃত্যুর পরে যেন তাঁর অঙ্গদান করা হয়। রবিবার কলকাতায় ইএম বাইপাসের এক হাসপাতালে মেয়ের ব্রেন ডেথের পরেই অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেন অশোক ও রুনা বরাট। দান করা হয় কিডনি ও যকৃত। সোমবার দুপুরে সুরভির শেষকৃত্য হয় আসানসোলে। তাঁর বোন, ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী রোহিণী সোমবার বাড়িতে বসে বলছিল, ‘‘না থেকেও কয়েক জনের মধ্যে বেঁচে থাকবে আমার দিদি। এটাই পরম শান্তি।’’

সুরভি যখন মণিমালা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী, মাথায় টিউমার ধরে পড়ে। এ রাজ্যের নানা হাসপাতাল, এমনকী ভিন্‌ রাজ্যে চিকিৎসা করান অশোকবাবুরা। দক্ষিণ ভারতের এক হাসপাতালে কয়েক বার অস্ত্রোপচারও হয়। তারই মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন সুরভি। আসানসোলের বিসি কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন থেকে নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নেন।

দুর্গাপুরের শোভাপুরে বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি নিয়ে সেখানকার হস্টেলেই থাকছিলেন। শরীর খুব খারাপ হলে বাড়ি ফিরতেন। সহকর্মীরা জানান, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে কাজ করতেন সুরভি। সামান্য সুস্থ হলেই হাসপাতালে ফেরার জন্য জোরাজুরি করতেন। ফোন করে বলতেন, ‘ডিউটিতে ফিরছি। গিয়ে বাড়তি কাজ করে পুষিয়ে দেব।’ এক সহকর্মীর কথায়, ‘‘যত দিন ছিল, খুব দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছে। সব সময় সবার উপকার করতে চাইত। মৃত্যুর পরেও সেটাই করে গেল।’’

পুজোর আগে বেতন পেয়ে বাবা, মা, বোনের জন্য নতুন জামাকাপড় কেনেন সুরভি। নতুন বছরে বাড়ির সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই অসুস্থতা বাড়তে থাকে। ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে ভর্তি করানো হয় কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার সময় থেকে সঙ্গে ছিলেন অশোকবাবুদের প্রতিবেশী তথা চিকিৎসক ঝুমা রায়। তিনি বলেন, ‘‘এ বার চিকিৎসায় ও একেবারে সাড়া দিচ্ছিল না। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক মতো কাজ করছিল না। শেষে মস্তিষ্কও কাজ করা বন্ধ করে দিল।’’

এ দিন সকাল থেকে আসানসোলে বাড়ির সামনে ছিল ছোট ছোট জটলা। দুপুর সওয়া ২টো নাগাদ সুরভির দেহ নিয়ে বাড়ি পৌঁছন বাবা-মা। গাড়ির আওয়াজ পেয়েই রাস্তায় নেমে আসেন পড়শিরা। মা রুনাদেবী বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। প্রতিবেশী চায়না মণ্ডল, শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘সুরভি এ ভাবে চলে গেল, ভাবতে পারছি না। কিন্তু যাওয়ার সময়ে যে কাজ করে গেল, সবাই ওকে মনে রাখবে!’’

বিকেল পৌনে ৩টে নাগাদ শববাহী গাড়ি রওনা দেয় শ্মশানের দিকে। অশোকবাবু বলেন, ‘‘মেয়ের শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করতে পেরেছি, এটুকুই শুধু সান্ত্বনা।’’

______________________________

সুশান্ত বণিক ও সুব্রত সীট
আসানসোল ও দুর্গাপুর

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়