Ameen Qudir

Published:
2019-05-29 21:32:02 BdST

চিকিৎসকরা অক্লান্ত শ্রমে মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছেন: তা নিয়ে ভিডিও বানালেন চিত্র পরিচালক





ডেস্ক
________________________

"আমার চোখে এই ডাক্তারগণ তারকা। আমার দেশের কৃষক শ্রমিকরাই রিয়েল হিরো। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই এই পেশাজীবি মহান নায়কদেরকে।" এই বিবৃতি একজন চিত্রপরিচালকের। তিনি সচক্ষে ডাক্তারদের অক্লান্ত মানবসেবার নজির দেখে এই কথা বলেন তার লেখায়।

শর্ট ফিল্ম পরিচালক, আলোকচিত্রী ও লেখক শাহরিয়ার সোহাগ চিকিৎসকদের প্রতিদিনের লড়াই নিয়ে অনন্য এক লেখা লিখেছেন। একটি ভিডিও চিত্রও ইনটারনেটে দিয়েছেন , যাতে দেখা যায় , চিকিৎসকরা কি অক্লান্ত পরিশ্রম করে মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছেন। শাহরিয়ার সোহাগ বলছেন এই ভাবে :
আজ একটা গল্প বলি আপনাদের।
কারণে অকারণে আমার আপনার গালি হজম করে আমাদের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসা মানুষগুলোর গল্প। ১৫ মে ২০১৯, রাত ১১টা। আমি তখন আমার একটি ব্যক্তিগত কাজে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ড হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে। সেই ওয়ার্ডে পুরুষ মহিলা মিলে অন্তত আড়াইশো রোগীর জন্য তখন দায়িত্বরত ছিলেন ৩ জন ডাক্তার। ডাঃ সুব্রত বিশ্বাস, ডাঃ আশিস বসু, ডাঃ রোখসানা ইসলাম এবং ডাঃ সুমাইয়া রহমান ইলমা। এর মধ্যে ডাঃ সুব্রত বিশ্বাস এইচ.এম.ও, অবৈতনিক মেডিকেল অফিসার।
বাকি ডাক্তারগন ইন্টার্নী করছেন অত্র মেডিকেল থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে।
এবার গল্পে আসি। ইন্টার্নী ডাক্তারগণের ডিউটি টাইম ছিল সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা। ৯টার পর থেকে রাতের ডিউটিতে ছিলেন ডাঃ সুব্রত, ডাঃ প্রিতম, ডাঃ হায়দার। তবে রোগীর প্রচন্ড চাপ বেড়ে যায় হঠাৎ ই। ইন্টার্নী ডাক্তাররা তাদের ডিউটি টাইম শেষ করেও যেতে পারছিলেন না রোগীর চাপে। একটু চাপ কমাতে আমি ডাঃ ইলমাকে নিয়ে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা বিষ খাওয়া রোগী আসলো।

____________________

 

ভিডিও চিত্রের লিঙ্ক : https://www.facebook.com/shahriar.sohag/videos/2160841360681697/?t=14

 


__________________________


ডিউটি টাইম ভুলে ইলমা রোগীর ট্রলির সাথে দৌড় দিল আমাকে রেখেই। আমিও ছুটলাম। যতটুকু বুঝলাম রোগীর অবস্থা খুব একটা সুবিধার না। ইয়াং ছেলে। ডাঃ সুব্রত বিশ্বাস, ডাঃ আশিস বসু, ডাঃ রোখসানা এবং ডাঃ ইলমা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন একটা জীবন বাঁচাতে। হাসপাতালের গুমোট গন্ধে আমার নাক জ্বলছে। আর এই মানুষগুলো এই গন্ধকে আপন করেছে আমাদের জীবন কে সুন্দর করতে। প্রসঙ্গে আসি।
রোগী মেঝেতে শুয়ে। হাসপাতালের বেডগুলো তখন খালি নেই। চারজন ডাক্তার মিলে করছেন সর্বচ্চো চেষ্টা। উৎসুক অন্যান্য রোগীর আত্নীয়রা ভীড় করে তাঁদের স্বাভাবিক কাজে বাঁধা দিচ্ছে। উৎসুক জনতার এই নির্বুদ্ধিতা এর আগেও দেখেছি। তবে ডাক্তারদের যে কোনো কর্মকান্ড কাছ থেকে দেখার সব ধরনের অনুমতি ছিল আমার। দ্রুত রোগীর দুই হাতে ক্যানুলা করা হয়। ওপিসি পয়জনিং, ইনজেকশন এট্রোপিন দিতে হবে। দ্রুত ইনজেকশন প্রস্তুতে হেল্প করছেন একজন নার্স। আর দুই হাতের ক্যানুলা দিয়ে ইনজেকশন পুষ করছেন ডাঃ ইলমা এবং ডাঃ রোখসানা। বাকি ডাঃ সুব্রত এবং ডাঃ আশিস ক্যাথেটার করলেন(প্রস্রাবের নল পরালেন)। গুনে গুণে একশোটা ইনজেকশন দিতেই হঠাৎ রোগী বমি করে দিল ডাক্তার রোখসানার গায়ে। বমিতে ভিজে গেল ডাক্তার রোখসানা, তার বিপি মেশিন, স্থেথিস্কোপ, সাদা এপ্রোন। বমির সেই গুমোট পানিতে ভিজে গেলেন ডাক্তার ইলমাও। তার যেন খেয়াল নেই সেদিকে। জীবন বাঁচানোটা আগে। এর মধ্যে তাকে অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া হল। মৃত প্রায় একটা জীবনকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে তাদের সে কি ব্যস্ততা! দীর্ঘসময়ের চেষ্টায় রোগীর অবস্থার উন্নতির দিকে আসলো। একটা কথা কি জানেন, এই রোগী মারা গেলে রোগীর আত্মীয় এবং সাংবাদিকেরা বলত কসাই ডাক্তার ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলছে। তাদেরই বা কি দোষ, এদেশে তো সবাই ডাক্তার। কখনো কখনো সত্যিকারের ডাক্তাদের চেয়েও বড়মাপের বলে দাবি করে নিজেরা।
রাত ৯ টায় ডিউটি শেষ হওয়া ডাক্তারগুলো সেদিন ডিউটি করেছে রাত ২টা পর্যন্ত। পরদিন সকাল ৮টাই আবার ডিউটি। হাসপাতালের সবাই ক্লান্ত হয়ে যায়, ডাক্তার ছাড়া।

ডাক্তার। আমার কাছে এমন এক দেবতা যাকে দেখা যায়। তিনিও অদৃশ্য সৃষ্টিকর্তা দ্বারা প্রভাবিত। একটা জীবন বাঁচানোর উপলক্ষ্য তিনি। একটা জীবন কি খুব সামান্য! আমার কাছে সেটা কখনোই না। আমরা কখনই ডাক্তারদেরকে ভালো চোখে দেখি না। তবে দিনশেষে অসুস্থ হলে এই ডাক্তারদের কাছেই যাই। আর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে সেই ডাক্তাদেরকেই গালি দিতে দিতে বাড়িতে ফিরি। আমরা কি অদ্ভুত প্রাণী, তাই না!
এই যে তাদের বাড়তি ডিউটি টাইম মূল্যায়িত হয় না। বরংচো বাড়তি ডিউটি টাইমের জন্য গালিটাও বেশি নিচ্ছেন। তবুও তারা করেই চলেছেন আমাদের জন্য। তারা কিন্তু দিব্যি পারতেন ডিউটি টাইম শেষ করে একটা ফ্রেশ ঘুম দিতে। তারা কিন্তু এমনটা করেন নি।

আমি গত কয়েকদিন হাসপাতালে এই ডাক্তারদের প্রাত্যহিক জীবন নিয়ে জানার চেষ্টা করছি। তবে এটাই তাদের নিয়মিত কাজ। ডাক্তাদেরকে গালি দেওয়ার আগে একটাবার কষ্ট করে হাসপাতাল ঘুরে আসুন। কি বলবেন, তারা কেন ডাক্তারি পড়েছেন, কেন ডাক্তার হয়েছেন? এর জবাবে আমি বলবো তাদের মন চেয়েছে পড়েছে, আপনি কেন তাদের কাছে যান? তারা কি আপনাকে জোর করে নিয়ে যায় নাকি আপনি নিজে তাদের কাছে যান? আর ডাক্তারি পেশাতে এত এত ইনকাম, তাহলে আপনি কেন ডাক্তারি পড়েন নি?

চলুন সবাই মিলে মানুষ হই। প্রতিটা মানুষকে সম্মান দিই তাদের কাজের জন্য। আমাদের সুন্দর জীবনের জন্য এই মহান মানুষগুলোকেও সুন্দর রাখাটা খুব জরুরী।
আমার চোখে এই ডাক্তারগণ তারকা। আমার দেশের কৃষক শ্রমিকরাই রিয়েল হিরো। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই এই পেশাজীবি মহান নায়কদেরকে।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়