Ameen Qudir

Published:
2019-05-02 19:37:05 BdST

এমপি বঙ্গতাজ কন্যা সিমিন হোসেন রিমির ভদ্র সভ্য উন্নত ব্যবহারে মুগ্ধ চিকিৎসক


 

 


ডাঃ মোঃ জোবায়ের মিয়া
________________________

একজন জনপ্রতিনিধি এবং তাঁর মহানুভবতা!

২০১০ সালে আমি চলতি দায়িত্বে সহকারী অধ্যাপক পদে পাবনা মেডিকেল কলেজে কাজ করি সেই সাথে অধ্যক্ষের আদেশে এবং পরিচালকের অনুমতি নিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে মানসিক হাসপাতালে কনসালটেন্ট এর দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় বহিঃবিভাগে রোগী দেখার সময় একটি ফোন আসে। আমি রিসিভ করার পর ঐ প্রান্ত থেকে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে উনিঁ তাঁর পরিচয় দিয়ে বলেন আমি সিমিন হোসেন রিমি এমপি বলছি। আমি একটু ইতস্তত হয়ে বললাম জ্বি স্যার বলেন আমি ডাঃ জোবায়ের বলছি। আরো অভিভূত হই তাঁর পরের কথায়। তিঁনি বললেন, আমি জানি ডাক্তার সাহেব এই মূহুর্তে আপনি রোগী দেখায় অনেক ব্যস্ত। কি করবো বলুন, এলাকার গরীব অসহায় এক মুরুব্বি তাঁর ছেলেকে নিয়ে আপনাদের হাসপাতালে ৩ দিন ধরে ভর্তির জন্য সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করছে। নিরুপায় হয়ে আপনার মোবাইল নাম্বার যোগাড় করে আমাকে ফোন দিতে বলেছে। যদি সম্ভব হয় ওকে আজ ভর্তি করে নিন। আমি বললাম আপনি অনেক ব্যস্ততার মাঝে ফোন দিয়েছেন। আমি পরিচালক স্যারের অনুমতি নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা করবো। মানসিক হাসপাতাল পাবনায় ফ্রি বেড সব সময় পাওয়া যায় না। অনেককে এক সপ্তাহ পর্যন্তও অপেক্ষা করে থাকতে হতো সেই সময়। কারন হিসেবে আমরা দেখেছি ৫০০ বেডের হাসপাতালে সারা বাংলাদেশ থেকে মানসিক রোগীরা আসেন চিকিৎসা নিতে। একবার ভর্তি করানোর পর ভালো হয়ে গেলেও অনেকে বাসায় নিতে চান না। হাসপাতাল থেকে লোক দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় দেখা যায় অভিভাবক বাসা বদল করে ফেলেছেন। এমনও দেখা গেছে তারা ইচ্ছাকৃত ভুল ঠিকানা দিয়ে রোগী ভর্তি করায়। পরবর্তীতে অভিভাবকদের না পেয়ে আবার মানসিক হাসপাতালে ফেরত আনা হয়। সেই রোগী বছরের পর বছর হাসপাতালে থাকে এবং সেখানেই তার ইহ জীবন ত্যাগ করেন। এই সকল কারনে নতুন রোগী ভর্তির অপেক্ষায় থাকেন অনেক দিন। যাদের তদবির নেই সেই সকল গরীব এবং অসহায় রোগীদের ভতি' হতে আরো বেশী সময় লাগে। যে বিষয়টি সবসময় আমাদের ডাক্তারদের পীড়া দেয়। তদবির সাধারণত পরিচালক স্যারের কাছেই বেশী আসতো। সেই দিনও স্যারের কাছে অনেকগুলি তদবির ছিল। বেড ফাঁকা ছিলো মাত্র তিনটি।

মানসিক হাসপাতালে বিছানা ছাড়া কোন রোগী ভর্তি করার নিয়ম নেই কারন প্রতিটি রোগীর খাবার, ঔষধ সরকারি ভাবে দেওয়া হয়। সেই জন্যই হয়তো ভতি'র চাপও বেশি থাকে সব সময়।

সিমিন হোসেন রিমি এমপি মহোদয়ের ব্যবহারে আমি খুবই প্রীত হই। আমি পরিচালক স্যার কে তাঁর রোগী ভর্তির জন্য অনুরোধ করি এবং তাঁর টেলিফোনের কথা বলি। উঁনি বললেন স্থানীয় এম পি সাহেবের ২ জনের জন্য রিকোয়েস্ট আছে। একজন সচিবের সুপারিশ আছে। তুমি যেটা ভালো মনে করো তাই করো। আমি স্থানীয় এম পি সাহেবের এপিএস কে অনুরোধ করলাম যে ভাই আপনার একজন রোগী আগামীকাল ভর্তি ' করান। দূরের রোগীদের একটু আগে সুযোগ দিন। উনি আমার কথা মানলেন। আমি সিমিন হোসেন রিমি এম পি মহোদয়ের একজন, সচিব মহোদয়ের একজন এবং স্থানীয় এম পি মহোদয়ের একজন গরীব রোগী ফ্রি বেডে ভর্তি করালাম। সেদিন থেকে আজও সিমিন হোসেন রিমি এম পি মহোদয়ের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারটি আমার কাছে সেইভ করা আছে।

সেই রোগিটি গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকায় ভালো হয়ে ফেরত গিয়ে এম পি মহোদয়ের সাথে দেখা করে আমার প্রশংসা করে। সেই থেকে মোবাইলে অন্তত ১০/১২ বার এম পি মহোদয় সেই স্নেহ সুলভ কন্ঠে আমাকে ফোন করেছেন এবং অনেক রোগী পাঠিয়েছেন। তাদের যথাসাধ্য সেবা দিয়েছি।আমি ২০১৬ সালে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে বদলি হয়ে আসার পর তাঁকে ফোন করি। তিঁনি ফোন পেয়েই বলেন ডাঃ জোবায়ের কেমন আছেন? আপনি গাজীপুরে এসেছেন জেনে খুব খুশী হলাম। আমার কাপাসিয়ার মানসিক রোগীদের আর পাবনায় যেতে হবেনা। আমার এলাকার রোগীরা আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এক দিন আমার বাসায় আসবেন কিন্তু । আমি বললাম, আপনাকে আপা বলতে পারি। উনি বললেন অবশ্যই। আমি তাঁকে বললাম, আমার বাবার মুখে আপনার বাবার প্রশংসা শুনেছি। আজ বুঝলাম ব্যবহারেই বংশের পরিচয়!
_______________________


ডাঃ মোঃ জোবায়ের মিয়া
সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
মনোরোগ বিভাগ
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়