Ameen Qudir
Published:2019-03-28 21:56:58 BdST
ওষুধের দোকানীকে বলে চিকিৎসা করিয়ে চিকিৎসকের ফি বাঁচাতে গেলে ক্ষতিই বেশি
ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
_________________________
মানুষের মগজ ধোলাই যার ইংরেজি ব্রেন ওয়াশ, করা আদৌ খুব কঠিন নয়, বরং বেশ সহজ।
বয়স ও পুরুষ / মহিলা নির্বিশেষে। আর হ্যাঁ, তৃতীয় লিঙ্গেও। (এখানে লিঙ্গ অর্থ প্রকার, জননেন্দ্রিয় নয়).
আমাদের নব্বই এর দশক থেকে হটাৎ বোঝানো শুরু হলো যে চর্বি জাতীয় ( ফ্যাটফ্যাটে ফ্যাট) খাদ্য অতিশয় খারাপ, খেলেই নির্ঘাৎ অসুখে পক্ষাঘাত অথবা মৃত্যু, ঘোর অকালে। মাখন, ঘি, ডিম, চর্বি যুক্ত স্বাদু মাংস ( সেকালে এতো খাসি ছিল না, পাঁঠা ই দিব্যি চলতো) , এমনকি সর্ষের তেল অবধি অতি বদ, বিষতুল্য।
পরিবর্তে, বলা হলো, ছাপানো হলো, দেখানো হলো, খুব ভালো হলো মার্জারিন, বনস্পতি ( ডালদা আর বনস্পতি সমার্থক ছিলো প্রায়) , প্রায় চর্বি হীন মুরগী র মাংস ই । এমনকি বড়ো, চর্বি ওলা মাছ ও ব্রাত্য, মাছের সুস্বাদু ডিম ও তাই ( আহা!) । আদর্শ হলো সূর্যমুখী তেল, চারা পোনা, সাধারণত যা কাঁটায় পূর্ণ ।
আর খুব ফল খেতে বলা হলো, আর একটু বেশি শিক্ষিত কিছু বাঙালী বলতে আরম্ভ করলেন, আমি ফ্রুটস খাই।
এবারে সমুদ্রের ঢেউ এর মতো বাজারে আছড়ে পড়লো প্যাকেজড ১০০% ফলের রস। কমলালেবু সারা বছর মেলে না, আমও না, তারপরে কমলা লেবুর খোসা ছাড়াও রে, আলাদা করো রে, চিবোও রে, বিচি ফেল রে ; আমের বেলা, খোসা ছাড়াও রে, আঁটি চোষো রে, পোষাকে গড়িয়ে আম্ররস দু ফোঁটা পড়লে দাগ হয়ে যায়, কি মুশকিল, লিচুও সারা বছর মেলে না, অনেকগুলো তেমন মিষ্টি ও হয় না, সঙ্গে লিচুর পাতা অবধি কিনতে হয়, সব লিচু ই নাকি মুজফফর পুরের লিচু ইত্যাদি সাত সতেরো। তার থেকে সারা বছর পাওয়া যায়,নামী কোম্পানির প্যাকেজড ফলের রস, আলাদা আলাদা ফলের, এমন কি মিক্সড ফ্রুট ও মেলে, কি অনায়াস, কি সহজ, কি স্বাদু, আবার ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করা যায়, পান করা যায়, না আছে বিচি, না আছে খোসা, গ্লাসে ভারি নয়নমোহন ও বটে, দাম টা বেশি বটে, তবে কিনা ভালো জিনিষের দাম বেশি হওয়াটাই দস্তুর, বাচ্ছা থেকে বৃদ্ধ সকলের জন্যই ভারি সুবিধের ও বটে। চিবোনোর বখেড়া নেই।
গণজন মেনেও নিলেন দিব্যি। সিজনাল বা বছরের কোন নির্দিষ্ট সময়ের আর ধার ধারতে হলো না।
আমাদের আগের বা তার আগের প্রজন্ম কিছুটি জানতেন না। মোবাইল ফোন আর গুগল ঘাঁটাঘাঁটি করা আমরাই সঅব জানি।
আরো কুড়ি বছর পরে রাস্তা ঘাটে, শপিং মলে, স্টেশনে, এয়ারপোর্টে, পাতাল রেলে, মর্ত্য রেলে সব কি সুন্দর সব চেহারা। কেউ কেউ ১০০ সংখ্যার সঙ্গে লুকোচুরি খেলছেন ওজনের নিরিখে।
শহর ও শহর তলীতে পুরনো ব্যায়াম কেন্দ্র পাল্টে ঝাঁ চকচকে মহার্ঘ জিম, সকালে হাঁটাটাই স্টাইল স্টেটমেন্ট, এমনিতে কিন্তু কেউ এক বাস স্টপ ও হাঁটবেন না। অটোমেটিক অটো বা টোটো চাই। সাইকেল এখন পাসে ( Passé) বা অতীত, নানা মডেলের বাইক, নিদেনপক্ষে স্কুটার চালাতেই হবে।
কি হলো এতদ্বারা? কি কি হলো?
মানুষের হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস এর আধিক্য দৃষ্টিকটু ভাবে হলো।
গড় আয়ু অনেক বাড়লো, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার সৌজন্যে, কিন্তু অসুখ ও বাড়লো তারি সঙ্গে তাল মিলিয়ে।
যে পরিবর্তন গুলো হলো, তাদের অধিকাংশ, বা খাদ্যাভ্যাস,এবং জীবনশৈলী, আবার আগের জায়গাতে ফেরাতে পারলেই কিন্তু শতকরা ৭০% বা আরো বেশি সমস্যার সমাধান, নিজে নিজেই হয়ে যাবে।
বাকিটুকু যাঁরা নিজেদের যথাযথভাবে আপডেট করেছেন, এমন চিকিৎসক দের পরামর্শ নিতে হবে।
মাফ করবেন, এইগুলি সর্দি জ্বর বা পাতলা পায়খানার মতো ওষুধের দোকানের অমুক দা কে বলে চিকিৎসা করিয়ে চিকিৎসকের ফি বাঁচাতে গেলে লাভ কম হয়ে ক্ষতি ই বেশি।
এছাড়াও সরকারি হাসপাতালে মাত্র দু টাকায় যে কেউ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও নিতে পারেন বৈকি!!
আবার এঁদের নিজস্ব চেম্বারেও দেখানো যায় বৈকি। সেখানে খরচ একটু বেশি।
ট্রেনে একই পথ একই সময়ে যেমন সেকেন্ড ক্লাস, ৩ এসি, ২ এসি, এসি ফার্স্ট এ ও যাওয়া যায়, ভাড়ার তারতম্য অনেক, আরাম আয়েশে, সুবিধার ও।।
_________________________
ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
সুলেখক । কবি।
Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC
আপনার মতামত দিন: