Ameen Qudir

Published:
2019-03-23 07:57:59 BdST

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী যে বার্তা দিলেন


 


ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
__________________________
১.

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে দেখলে বোঝা যায় কেন মানুষের সেকুলার হওয়াটা মানুষের জন্যই খুব জরুরি।

ক্রাইস্টচার্চ ট্র‍্যাজেডির পর তাঁর এই Gesture মুসলিমদের আহত হৃদয়ে যে প্রশান্তির ঢেউ জাগিয়েছে সেটা আর কোন কিছু দিয়ে সম্ভব ছিলনা।

এভাবেই একটি সমাজ এগিয়ে যায়। বিভক্ত মানুষ এক হয়ে যায়।

পৃথিবীতে দুইদল মানুষ আছে। একদল মানুষকে বিভক্ত করে আরেকদল মানুষকে এক করে।

পৃথিবীতে হিউম্যান রাইটসকে সবচেয়ে সম্মান করে যে রাষ্ট্রগুলি তার একটি হলো নিউজিল্যান্ড৷ আমরা কি কেবল প্রধানমন্ত্রীর হিজাব পরাকেই বাহবা দেব নাকি সংবেদনশীল, সংষ্কারহীন, মানবিক মুক্তমনকে?

একদল মানুষ প্রচার করেছে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুসলমান হয়ে গেছে৷ কেউ কেউ বলছে নিউজিল্যান্ডে ইসলামের বিজয় হয়েছে৷ এসব কথা আসলে মানসিক দারিদ্র থেকে আসে, যা এই অঞ্চলের মুসলিমদের একটা বড় অংশের প্রধান অসুখ। তারা সেকুলারিজমের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারেনা। একজন মানুষ মুসলিম না হয়েও কেবল ভাতৃত্ববোধে উদবুদ্ধ হয়ে মুসলিমদের পোশাক পরতে পারে সেটা তারা ভাবতেও পারেনা। মূলত তাদের এই অসুখের ভেতরই লুকিয়ে থাকে হিংস্রতা। তাদের কাছে পুরো ব্যাপারটা বাইনারি। হয় মুসলমান হও, হেজাব পর, নয়তো তুমি বিধর্মী।

একটা সেকুলার সমাজ মানুষকে মানসিকভাবে কতটা নিরাপত্তা দিতে পারে তার উদাহরণ নিউজিল্যান্ডের মত দেশগুলি। ২০১৩ সাল থেকে সেখানে সমাকমী বিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে সিদ্ধ৷ এলজিবিটিদের অধিকার সংরক্ষণে তারা অন্যতম পাইওনিয়ার। তারপরও সমকামকে ঘৃণা করা মুসলিমেরাও সেইদেশের নাগরিকত্ব পেলে দুনিয়ায় বেহেশত পাবার স্বাদ পায়। এরকম অনুভুতি কোন মুসলিম দেশে গিয়ে পেতে দেখিনি। ব্যাপারটা শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নয়। কারণ টাকা পয়সা তো সৌদি আরবেরও কম নেই৷ ব্যাপারটা আসলে মানবিক মূল্যবোধের। যার জন্য একটি সমাজকে লিবারেল হতে হয়। ইনক্লুসিভ হতে হয়।


একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।
কিছুদিন আগে ভারতে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি ধুতি পরেছিলাম। আমার এই ধুতি পরিধানের উদ্দেশ্য ছিল আমার গানের সময়কাল ও বিষয়বস্তুর সাথে পোশাকের একটা সমন্বয় সাধন করা। আমি পোশাকের ভেতর দিয়ে একধরণের সম্প্রীতির কথাও বলতে চেয়েছিলাম। আমাদের অভিন্ন সংষ্কৃতির কথা বলতে চেয়েছিলাম। আমার সেই ধুতি পরিধানের ছবি দেখে এদেশের অনেক শিক্ষিত ধার্মিক মুসলমান আমাকে শুধু আক্রমণই করেননি কেউ কেউ তাদের টাইম লাইনে আমাকে হেয় করে স্বতন্ত্র স্ট্যটাসও দিয়েছিলেন। তাদের একজন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। আমার সরাসরি শিক্ষক না হলেও তাঁকে আমি শ্রদ্ধাবশত স্যার সম্বোধন করতাম। আমাদের সেই স্যারেরা এখন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

৩.
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অতিথি বরণের ভারতীয় রীতি অনুযায়ী চন্দন ফোঁটা নিতে দেখে একজন ভ্রষ্ট রাজনীতিক প্রকাশ্য জনসভায় গালি দিয়ে বলেছিলেন 'তিলক ওয়ালী মুখ্যমন্ত্রী'। এটাতো আমরা সবাই জানি যে তিনি অসংখ্য মানুষের মনের কথা বলেছিলেন৷

তারা এমন কথাও বলে যে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে।

৪.
কিছুদিন পর আসবে পয়লা বৈশাখ। কোন কোন পোশাক পরা উচিত নয়, পয়লা বৈশাখের উৎসবে যাওয়া উচিত নয় তাই নিয়ে শুরু হবে এদেশের তৌহিদী জনতার বয়ান। তারাই এই বয়ান দেবেন যারা নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর মসজিদে যাওয়া, কোরান তিলওয়াত শোনা, রেডিও টিভিতে আজান দেওয়া নিয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছেন৷ কেউ কেউ নিউজিল্যান্ডে ইসলামের বিজয় নিশান দেখতে পেয়েছেন।

যাই হোক, এইসব স্বার্থপর হিংসা ছড়ানো মানুষদের ভেতর একজনও যদি বোঝে সেকুলার সমাজের গুরুত্ব তাহলেই মংগল।
___________________________

ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল । প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, রক্তরোগ।

 

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়