Ameen Qudir

Published:
2019-03-08 23:39:23 BdST

শুক্রবারের বিশেষ কলামকয়লা বোঝাই করে সংসার সামলান বদনি মাঝি: রেল চালিয়ে জীবনকে জয় করলেন সালমা


 


ডেস্ক
______________________

আজ মানুষের জীবন জয়ের কাহিনি। আজ নারীর জগৎ জয়ের লড়াইর কাহিনি। বদনি মাঝির কাহিনি শোনপুর বাজারি প্রকল্পের। আর সালমার কাহিনী টাঙ্গাইলের। বদনি মাঝিকে নিয়ে লিখেছেন নীলোৎপল রায়চৌধুরী। সালমার কাহিনি ডয়েচে ভেলের ।

‘শোভেল অপারেটর’ বদনি মাঝি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
তিন মেয়ে, ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে গোছানো সংসার ছিল পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরের হরিপুরের বাসিন্দা বদনি মাঝির। ২০০৫-এ বিপদ। পেশায় খনিকর্মী স্বামীর মৃত্যু হয়। মৃতের নিকটাত্মীয় হিসেবে স্ত্রী যোগ দেন কাজে। প্রথম দিকে কর্মক্ষেত্রে মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা। কিন্তু, সেই সমস্যাকে পিছু ফেলে বদনিদেবীই হলেন ইস্টার্ন কোল ফিল্ডের (ইসিএল) মহিলা ‘শোভেল’ (কয়লা ডাম্পারে তোলার যন্ত্র) চালক।

বৃহস্পতিবার শোনপুর বাজারি প্রকল্পের কর্মী বদনিদেবী শোভেলে ওঠার আগে জানান, কাজে যোগ দেওয়ার পরে প্রথমে তাঁকে সাধারণ মজুরের কাজ করতে বলা হয়। কিন্তু, দিন কয়েকের মধ্যেই তাঁর মনে হয়, এমন ভারী কাজ করাটা সম্ভব নয়। তখনই ঠিক করেন, ‘শোভেল অপারেটর’ হবেন। সেই সময়ে প্রকল্পে এই কাজে এক জনও মহিলাকর্মী ছিলেন না।

এই কাজটিও মোটেই হালকা নয়, জানান ইসিএল কর্তারা। ঠিক মতো মাপ করে শোভেলের নির্দিষ্ট যন্ত্রাংশ ওঠানো-নামানোর জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট পেশিশক্তির। জরুরি, ধৈর্য্যও। বদনিদেবীর ইচ্ছের কথা জেনে তাঁকে প্রশিক্ষণ দেন ‘ফিটার’ জগন্নাথ মণ্ডল। তিনি জানান, মাত্র তিন মাসেই কাজ শিখে নেন বদনিদেবী।

ওই কাজ করেই গুছিয়ে নেওয়া কর্মক্ষেত্র, বাড়ি। বদনিদেবী বলেন, ‘‘শোভেলের সাহায্যে কয়লা, মাটি, পাথর ডাম্পারে বোঝাই করা হয়। প্রতি দিন ৫০ টনের বেশি কয়লা বোঝাই করি।’’ এই কাজে কৃতিত্বের জন্য সংস্থার তরফে তিন বার পুরস্কার মিলেছে। সাফল্য মিলেছে সংস্থার ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেও।

বছর ৫৭-র বদনিদেবী জানান, নিজের উপার্জনে দুই মেয়ে সুকুরমণি ও সাবিত্রীর বিয়ে দিয়েছেন। স্বামী মারা যাওয়ার সময়ে ছোট মেয়ে বিমলা ও ছেলে মধু বেশ ছোট। এখন তাঁরাই মায়ের ভরসা। কলকাতার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বিমলা জানান, মা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে হরিপুরের ঝিঙেধাওড়ায় বাড়ি তৈরি করিয়েছেন। ‘‘মা আমাদের কাছে, পাড়ার মেয়েদের কাছে প্রেরণা,’’ বলেন বছর বাইশের মধু।

কর্মক্ষেত্রেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বদনিদেবী, মন্তব্য প্রকল্পের ‘সিনিয়র ওভারম্যান’ বিবেকানন্দ মণ্ডল। বদনিদেবীর পরে এই প্রকল্পে একই কাজে যোগ দিয়েছেন বিন্দু পাসোয়ান, বিদ্যাবতী সিংহ ও পার্বতী ভুঁইয়ারা। তাঁরাও বলেন, ‘‘মেয়েরাও যে এই কাজটা পারে, তা বদনি দিদিই দেখিয়েছেন।’’ বদনিদেবী তবে এই সাফল্য ভাগ করতে চান তাঁর সমস্ত সহকর্মীদের সঙ্গে।

ইসিএল সূত্রে জানা যায়, সংস্থায় এই মুহূর্তে ৬১,৮৭৪ জন কর্মীর মধ্যে মহিলা, ৩৮৬০ জন। এই সংখ্যাটা নিশ্চিত ভাবেই আরও বাড়বে, আজ নারী দিবসে বিশ্বাস বদনিদেবীর।


নারী রেল চালক সালমার সাফল্য গল্প

চৌদ্দ বছর আগে বাংলাদেশ রেলওয়েতে চালক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের মেয়ে সালমা খাতুন। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ব্যতিক্রমধর্মী কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিলো আমার। যেটা সাধারণত কেউ করে না। চ্যালেঞ্জিং ধরণের কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিলো আমার। তবে ইচ্ছা পূরণকরাটা আমার জন্য এতো সহজ ছিলো না। আমি ছিলাম গ্রামের নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।

ডয়চে ভেলেকে তিনি আরো বলেন, আমি যখন চাকরিতে যোগদান করি তখন আমার বিভাগে ৫০০ পুরুষ কর্মী ছিলেন। তার বিপরীতে আমিই ছিলাম একমাত্র নারী।
কর্মী। আমি যখন ট্রেনিং এ যাই তখন আমার পুরুষ সহকর্মীদের অনেকেই আমাকে দেখতে আসতো এই ভেবে যে রেলওয়েতে একজন মেয়ে সহকর্মী এসেছে।

তাদের অনেকেই বলতেন যে এটি অনেক চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা। তবে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম যে, আমি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করবো। এই মনোবল থাকার কারণেই সম্ভবত আমি আজ ১৪ বছর ধরে সফলতার সাথে কাজ করে আসছি। অনেক সাহস নিয়ে এ কাজটি করতে হয়েছে আমাকে।

রেলওয়েতে চালক হিসেবে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার মতো অর্থনৈতিক সামর্থ্যও ছিলো না আমার পরিবারের। গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

তবে আমার জেদে বাবা-মা আমাকে তখন এইচএসসিতে ভর্তি করান। তবে শেষ পর্যন্ত আমাদের পরিবারে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন লেগেই ছিলো। যার কারণে এইচএসসি পাস করার পর আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি জানান, আমি যখন একটা কিছু করার উপায় খুঁজছিলাম, তখন আমার বড় ভাই আমাকে একদিন বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে বললে, তুমি চাইলে এখানে আবেদন করতে পার। চাকরির এ সুযোগটি আমার ইচ্ছার সাথে মিলে যায়, আর তাই আমি আবেদন করি।

সালমা বলেন, আসলে যাত্রীরা আমাকে দেখে খুব অবাক হয়। প্রথম দিকে আরো বেশি অবাক হতো। যাত্রীরা অনেকেই প্রশ্ন করতো, আপনি মেয়ে মানুষ ট্রেন চালাচ্ছেন? আবার অনেক মেয়েই বলে যে আপনাকে দেখে আমরা অনুপ্রাণীত হই।

আনন্দবাজার পত্রিকা ও ডয়েচেভেলের সৌজন্যে।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়