Ameen Qudir
Published:2019-03-05 21:11:06 BdST
বিএসএমএমইউ ও দেশে সেরা চিকিৎসা থাকলেও কেন বিদেশে নেয়ার পরামর্শ : নেপথ্য কারণ ও জবাব
লেখকের ছবি ।
ডা. সুলতানা এলগিন
_________________________
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়: বিএসএমএমইউ বা ঢাকা মেডিকেল বা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মেডিকেলে যদি কম খরচে বিশ্ব মানের চিকিৎসা মেলেই ; তবে রোগীদের বিদেশে পাঠাচ্ছেন কেন! যদি বিশ্বসেরা চিকিসেক ডা. দেবী শেঠির বলা : বিএসএমএমইউর চিকিৎসা ইউরোপ আমেরিকার চেয়ে কোন অংশে কম নয়: উক্তি সত্যই হয় ; তবে তিনি বা বাংলাদেশের শীর্ষ চিকিৎসকরা ভিআইপি রোগীদের বিদেশে পাঠাতে পরামর্শ দেন কেন !
বাংলাদেশের চিকিৎসা নিয়ে ডা. দেবী শেঠির কুন্ঠাহীন প্রশংসা ও সত্য ভাষণের পর এই প্রশ্ন এখন লাখো লাখো বাংলাদেশীর মনে। তারা নানা ফোরামে প্রশ্নটি সয়লাব করে ফেলছেন।
এর উত্তর দিয়েছেন স্বয়ং অধ্যাপক ডা. এ বিএম রুহুল হক ; সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও ছিলেন।
তিনি বলেছেন, ভিভিআইপি বা ভিআইপি রোগীদের বিদেশ পাঠানোর প্রেসক্রিপশন দেশীয় ডাক্তারদের হীনমন্যতা বা অযোগ্যতার জন্য নয়।এটা পারিপার্শ্বিক কারণে।
সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রীর এই বক্তব্য একদম সঠিক । এটা জনমনস্তত্ত্বের জন্য। চিকিৎসা পেশা বিল্ডিং বানানোর মত যান্ত্রিক কারিগরি নয়। এটা স্বাস্থ্য কারিগরি। এর সাথে মানুষের প্রবল প্রচন্ড দুর্বার আবেগ জড়িত থাকে।
কোন বিল্ডিংএ রড সিমেন্ট কম হলে মানুষ সব ভেঙে চুরমার করেন না। কিন্তু স্বাস্থ্যসেক্টরে চিকিৎসায় স্বাভাবিক পরিনতিও মেনে নিতে পারেন না। সাধারণ মৃত্যুতে তারা নানা ছল ছুতোয় প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখায়।
ভিআইপিরা যে সব ঘটনায় বিদেশ যান , সেরকম রোগ ব্যাধি , অপারেশনে বাংলাদেশের সুযোগ্য ডাক্তাররা প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে বাচিয়ে তুলছেন। জীবন দান করছেন পূনরায়। বাঁচলে রোগীই যেন গাজী ।সে যেন নিজেই বেঁচে উঠেছে। কেউ ডাক্তারের প্রশংসা করে না। কিন্তু স্বাভাবিক অন্য কোন পরিনতি ঘটলে আবেগের ভয়ংকর প্রকাশ ঘটায়। এ কারণেই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে যাদের সঙ্গতি আছে, তাদের বিদেশে পাঠানো হয়। অর্থবান রোগীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে।
অনেক রোগীর আত্মীয়স্বজন টাকার গরমে বা ক্ষমতার গরমে ডাক্তারের কাছে এসে যখন বলেন ," ডাক্তার সাব রোগীর তো মনে হয় ক্রিটিক্যাল অবস্থা। আপনারা কি তারে বাচাইতে পারবেন। না পারলে কন। তারে সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া, বেঙ্গালোর চেন্নাই লইয়া যাই। দেবী শেঠির এপয়েন্টমেন্ট কোন ব্যাপার না। টাকা পয়সাও কোন ব্যাপার না । " দম্ভপূর্ণ এরকম দীর্ঘ বক্তৃতা রোগীর স্বজনের কাছে থেকে শোনার পর কোন ডাক্তার আর ঝামেলায় যাবে! বিদেশী ডাক্তারদের সঙ্গে নানা কারণে সেমিনারে সম্মেলনে দেশীয় ডাক্তার মানে আমাদেরও পরিচয় বন্ধুত্ব হয়। সেখানে পাঠান হয়। তাতে রোগীও খুশি। বন্ধুত্বও মজবুত। তারাও বেংগালোর, চেন্নাই থেকে রোগী আমাদের কাছেও কিছু কিছু পাঠান। আমরাও দেখি।
রোগী পক্ষের টাকা ও ক্ষমতার দম্ভে ফল হল, যে চিকিৎসা দেশে বিএসএমএমইউ বা ঢাকা মেডিকেলে যৎ সামান্য টাকায় হত , সেটা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তারা বিদেশে করিয়ে আসেন। আর মিডিয়া তখন বলে, কমিশন খেয়ে অমুক ডাক্তার বিদেশে রোগী পাঠায়। কেউ নেপখ্য দম্ভের কাহিনি আর বলে না।
বাস্তবে তাতে দেশেরও ক্ষতি। অর্থনীতিরও ক্ষতি। ক্ষমতা বা টাকার দম্ভঅলাদের এই দুর্বার অহংকার না কমলে এটা কমবে না। ডাক্তাররা মার খাচ্ছে মাঝেমধ্যেই অকারনে। কে আর সেধে আরও মার খেতে যাবেন। উপরতলার এই বিদেশ গমন রোগ নীচেও নামছে। এখন মিডিয়াও বাংলাদেশের ডাক্তারদের কুৎসার বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। তাতে দরিদ্র রোগীরাও ঘর বাড়ি বেচে চেন্নাই বেঙ্গালোর ছুটছেন নানা রোগে।
একই ঘটনা আমাদের টাশিয়ারি লেভেলেও ঘটে। সে কথা লিখেছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার পাওয়া লেখক ডাক্তার জাকির তালুকদার। তিনি বলেন সকৌতুকে: এটুকু জানি যে এই ধরনের শত শত রোগীর চিকিৎসা হয় এই দেশে। আপনাদের অভিজ্ঞতা কম নেই। তাহলে চিকিৎসা না করার কারণ কি এটাই যে অন্য রোগী মারা গেলে কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না, কিন্তু ওবায়দুল কাদের মরলে আপনাদের অনেক ধরনের জবাবদিহি করতে হতো। সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে দেবার কারণ কি এটাই?
আমাদের নাটোর হাসপাতালে লোকাল ভিআইপি বা তাদের আত্মীয়রা চিকিৎসা নিতে নিয়ে গেলেই লিখে দেওয়া হয়-- ‘রেফার্ড টু রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।’
__________________________
লেখক ডা. সুলতানা এলগিন । মানসিক সম্পর্ক বিদ।
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ। কনসালটেন্ট , ওসিডি ক্লিনিক; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
আপনার মতামত দিন: