Ameen Qudir
Published:2019-03-03 08:04:09 BdST
গাড়ি, বাইক নিয়মিত সার্ভিসিংএ কোন দ্বিধা নেই, যত দ্বিধা ও চরম অবহেলা শরীরের বেলায়
ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
____________________________
২২বছর আগে প্রথম একটি দৃশ্যতঃ অদ্ভুত পানীয়ের স্বাদ নিতে হয়েছিলো। অদ্ভুত অর্থে অপূর্বদৃষ্ট। ডিসেম্বর মাসের শেষে উত্তর সিকিম এর লাচুং এ। শীতকাল এবং নদী জমে যাওয়া বরফে। রাতে এবং সকালে সেই শ্বেতশুভ্র বরফে সূর্যোদয়ের সাত রং এর নয়নমোহন, নয়নমনোহর খেলা। বেশ দুপুরে নদী হতো তরল। সেই নদীই আরো পরে ও আরো নীচে খরস্রোতা তিস্তা।
লাচুং এবং ইয়ুংথাম বা ফুলের উপত্যকা যেতে রাজধানী গ্যাংটক থেকেই প্যাকেজ বুক করতে হতো। গ্যাংটক থেকে রওনা হয়ে মংগন হয়ে লাচুং। পুরোটাই চড়াই, তাই মাহীন্দ্রা জীপেও সন্ধ্যে হয়ে যেত। মাঝে উত্তর সিকিমের জেলা সদর মংগন এ দুপুরের খাওয়া।
এই পথে যাননি এমন মানুষ বা বাঙালী কম, তাই বিস্তারিত বর্ণনে গেলুম না।
তা, লাচুং এ হোটেল তেমন তখন ছিলো না, বলা ভালো আজো বোধহয় নেই। কোন পরিবারের বাড়ি তে হোম স্টে। সন্ধ্যে নাগাদ পৌঁছে শীতে কাঁপতে কাঁপতে কাঠের বাড়ি র হোম স্টে তে ঢুকে মালপত্র নির্ধারিত ঘরে রেখেই বৈঠকখানায়। সেখানে দিব্যি আগুন জ্বলছে। শুধু ঘর যে গরম হচ্ছে তা নয়, রান্নাও হচ্ছে বৈকি।
এখানেই সেই পানীয়ের সঙ্গে প্রথম রঁদেভ্যু। আমাদের সঙ্গী নেপালি কিশোর টি বললে, পান করবেন, নইলে গৃহকর্তা কত্রী অখুশি হবেন। অগত্যা।
গরম পানীয় চা এর রং এর, কিন্তু ওপরে মাখন ভাসছে। একটু কষা, সামান্য নোনতা। মাখন চা। পানের পরেই শীত কাঁপুনি কমলো বৈকি।
ঘর টিই পুরো রেফ্রিজারেটর, ছাত থেকে ঝুলছে বরাহ মাংস এবং সম্ভবতঃ ইয়াক বা চমরী গাই এর মাংস, এবং ঐ আগুনে সেঁকা বা ঝলসানো হচ্ছে। মাঝে মাঝেই মুখে চলছে আর সুস্বাদু লাগছে ঝলসানো মাংসের টুকরো। আরেকটু কড়া পানীয়, ছাং ও ছিলো বৈকি।
পরে জেনেছি তিব্বত জুড়েই মাখন চা পানের রেওয়াজ আছে। ওই পরিবার ও মূলতঃ তিব্বতি, লেপচা এবং এরাই সিকিমের অন্যতম আদি বাসিন্দা এবং ধর্মে বৌদ্ধ। এখন পুরো সিকিম জুড়েই হিন্দু নেপালি এবং বৌদ্ধ তিব্বতি দের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, কয়েক হাজার বছর ধরে। না কখনো ধর্মীয় দাঙ্গা হাঙ্গামার কোন খবর নেই। আমাদের চোখে প্রায় একরকম হলেও চেহারায় বা মুখশ্রী তে সামান্য তফাৎ আছেই, ওঁরা বুঝতে পারেন। যেমন ফরাসি আর ইংরেজ সাহেব মেম রা আমাদের চোখে একই হলেও ওঁদের মধ্যেও ফারাক আছে বৈকি!
শুরু করেছিলুম কোথায় আর কোথায় চলে এলুম। আমাদের সমতলে কিন্তু মাখন চা বা মাখন কফি খাওয়ার রেওয়াজের কথা কখনো শুনিনি।
এখন আমারি নিজের অতি প্রিয় প্রভাতী পানীয় হলো বাটার কফি।
এর সুবিধে, চটপটে বানানো যায়, চিনি বা দুধ লাগে না, আর পানের পরে পরেই দিব্য চাঙ্গা লাগে, ঘুম ভাব উধাও হয় এবং ক্ষুধাবোধ টিও চলে যায় বিলক্ষণ। ( আমার ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত - পড়ুন রোগী রোগিণী দের অভিজ্ঞতা, যে ক্ষুধাবোধ একটি অভ্যাস মাত্র, যাকে জয় করা যায় সহজেই।)
কি লাভ -- সকালে এই কফি পান করলে একটুও কার্বোহাইড্রেট নেই বলে ইনসুলিন নামক হরমোন টির ক্ষরণ হয় ন্যূনতম। এদিকে সকালে উঠেই কাজ কর্মের জন্য এনার্জি, প্রয়োজন, এবং খালিপেটে এনার্জি দেওয়ার মতো কার্বোহাইড্রেট না খেলে, শরীর বাধ্য হবে জমা এনার্জি বা ফ্যাট কে ব্যবহার করতে, এবং মেদাধিক্য ও ডায়বেটিস, দুই অসুখেই, এমনকি এই দুই এর অনুপস্থিতি তেও দিব্য উপকারী। কারণ শরীর যদি ফ্যাট কে ইন্ধন হিসেবে ব্যবহার করে তখন, মস্তিষ্ক এমনকি হৃদপেশী ও চমৎকার ভাবে কাজ করতে পারে অনেকক্ষণ।।
ভারি জলখাবার খেয়ে হাই ওঠে বা ঘুম ঘুম পায় এই কারণে যে আমাদের পৌষ্টিক তন্ত্র অনেকখানি রক্ত সরবরাহ নিয়ে নেয় খাদ্যগ্রহণ এবং পরিপাক জনিত কাজ করতে গিয়ে।
তবে, আবারো লিখি, চিকিৎসক এর পরামর্শ বিনে দীর্ঘদিন না ব্যবহার ই বোধকরি ভালো কারণ আমাদের কাছে এখনো দীর্ঘকালীন তথ্যাদি নেই। তদুপরি কফি র ক্যাফিন হৃদযন্ত্রের কোন বিবাদ থাকলে না ব্যবহার করাই ভালো। আমরা অনেকেই জানি না আমাদের হৃদযন্ত্রের অবস্থা, কারণ আমরা ৫ - ১০ লাখ টাকার গাড়ি অথবা ৬০,০০০ টাকার মোটরবাইক নিয়মিত ব্যবধানে ' service করাতে দ্বিধা করিনে, কিন্তু নিজেদের একটিমাত্র শরীরের বেলায় চরম অবহেলা করতেও দ্বিধা করিনে। অনেকটা এমন ভাব, যে আমার শরীর আমি বুঝবো না, বুঝবে একজন অজানা চিকিৎসক! ঈসস।।
_________________________
ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
সুলেখক । কবি।
Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC
আপনার মতামত দিন: