Ameen Qudir

Published:
2019-03-01 23:40:35 BdST

অমর স্মৃতি কথাবায়ান্নোর ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের আমরা যারা পদাতিক সৈনিক


 

 

অধ্যাপক ডা. হেদায়েতুল ইসলাম
______________________________

তখন আমি ঢাকা কলেজের (সিদ্দিক বাজারে অবস্থিত) প্রথম বর্ষের ছাত্র। বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারীতে আমরা ঢাকা কলেজের ছাত্ররা কলেজ থেকে শোভাযাত্রা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আমতলায় যোগদান করি। ঐ দিনের ঐতিহাসিক সভার শেষে নেতৃস্থানীয় ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা যারা পদাতিক সৈনিক ছিলাম সভা শেষে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা না থাকায় বাড়ি চলে যাই। কিন্তু বিকাল বেলায় খবর পাই মর্তুজা বশির গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। খবরটি ছিলো ভুল। আসলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন ভাষা শহীদ রফিক। মর্তুজা বশির তাকে কোলে নিয়ে রাস্তায় বসে ছিলেন। এই খবরটুকু তাড়াহুড়ো করে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের কাপ্তান বাজারের বাসায় খবর নিয়ে আসেন। আামাদের বাসায় তখন আর্ট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুর রাজ্জাক, রশিদ চৌধুরী, মর্তুজা বশির, এমদাদুল হক ও অন্যান্যরা ভাষা আন্দোলনকে জোরদার করার জন্য পোষ্টার আঁকতেন যেগুলো শোভাযত্রায় ও আলোচনা সভায় ব্যবহার করা হতো। এই পোস্টার গুলের মাঝে আামার ছোট চাচা আব্দুর রাজ্জাকের আঁকা কয়েকটি পোষ্টার গোয়েন্দা বাহিনী ভবিষ্যতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করেছিলো। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৬ সালে যখন আব্দুর রাজ্জাক ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে অত্যন্ত সম্মানিত আমেরিকান ফুল ব্রাইট বৃত্তি পান তখন এই পোষ্টার গুলোই আমেরিকায় যাওয়ার জন্য ক্লিয়ারেন্স পেতে বড় রকমের বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছিলো। অনেক চেষ্টা করে ও কাঠখড় পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত সরকারি অনাপত্তির অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আব্দুর রাজ্জাক চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও অধ্যাপক ছিলেন। তার অমর কীর্তি জয়দেবপুরের "জাগ্রত চোরাঙ্গী" মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মারক হিসেবে অম্লান হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী।

এরপরে যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই, তখন মেডিকেলের ছাত্ররা প্রথম শহীদ মিনার নিজেরা গড়ে তোলে এবং সরকারি বাহিনী তা ভেঙে ফেলে। এ রকম কয়েকবার চললো। পরবর্তী সময়ে বর্তমান শহীদ মিনার পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়। যা আমাদের ভাষা আন্দোলনের শহীদদেরকে অমর করে রেখেছে। পদাতিক সৈনিক হিসেবে তখনকার দিনে আমাদের কাজ ছিল ভোরবেলা পুষ্প স্তাবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো এবং খালি পায়ে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে কালো ব্যাজ লাগিয়ে "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি" গাইতে গাইতে গেরস্থানে গিয়ে ভাব-গম্ভীর্যের সাথে শহীদদের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে সম্মান জানানো ও দোয়া করা।

এবারে ২০১৯ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন আমার জন্য খুবই গুরুত্ব পূর্ণ ছিল। বড় নাতনি প্রথম কালো-সাদা শাড়ী পরে স্কুলের একুশে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করে এবং জাতীয় জীবনে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব অনুভব করে।

মেজ নাতনি আমাকে কয়েকদিন আগে থাকতেই আমার কাছ থেকে কথা নিয়েছিলো ওর একুশের ফেব্রুয়ারি স্কুলের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেই হবে। কারণ, অনুষ্ঠানে ওর বেশ গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা ছিলো। নানাভাইকে মেরিকুরী স্কুলের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেই হবে।

অনুষ্ঠানটি আমার খুবই ভাল লেগেছিল। ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থাপনায় ও সুন্দর করে সাজানো গোছানো অনুষ্ঠানটি আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছিল। ফিরে গিয়েছিলাম অনেক স্মৃতি বিজড়িত বায়ান্নোর দিনগুলোতে।

তৃতীয় প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীরা বাঙালীর বাঙলা সংস্কৃতির ধারক বাহক হয়ে আগামী দিনগুলোতে এগিয়ে যাক এই কামনা করছি।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়