Ameen Qudir

Published:
2019-02-28 03:04:13 BdST

মর্নিং শিফটের স্কুল: আধো ঘুম, অভুক্ত বাচ্চাদের মগজ কাজ করে না, পড়ায় মন বসে না


 ডা সুরেশ তুলসান


--------------------------------
স্কুলের দুই শিফট

আমাদের শৈশবের/কৈশোরের স্কুল ছিলো প্রায় দিনব্যাপী। সকালে আমরা স্কুলে যেতাম আর সারাটা দুপুর স্কুলে কাটিয়ে ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকাল। টিফিন পিরিয়ড সহ খেলাধূলা, দুষ্টুমি সব কিছুই স্কুলে। কোচিংয়ে যাবে সময় কোথায়।

আর এখন দুই শিফট হওয়ার কারনে স্কুল একবেলায়। মর্নিং শিফটে ভোর থাকতেই চোখে আধো আধো ঘুম নিয়ে স্কুলে যাওয়া, দুপুরের আগেই ছুটি। এযুগে বাচ্চারা যেহেতু একটু দেরিতে ঘুমায় সেহেতু এই সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে, তৈরি হয়ে স্কুলে যেতে হলে তাদের বয়সের অনুপাতে সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের ঘুম কিন্তু হয় না। ( বয়সের অনুপাতে বাচ্চাদের ঘুমের সময়, ৩-৫ বছর = ১০-১৩ ঘন্টা, ৬-১৩ বছর = ৯-১০ ঘন্টা, ১৪-১৭ বছর = ৮-১০ ঘন্টা )

মর্নিং শিফটে বাচ্চাদের আরও একটা সমস্যা সেটা হলো এই সাতসকালে ক্ষুধা না লাগার কারণে অধিকাংশ বাচ্চাই অভুক্ত অবস্থায় স্কুলে যায় আর ক্লাস শুরুর পর যখন ক্ষুধা লাগে তখন রক্তের শর্করা কমে যাওয়ায় তাদের মগজ ঠিকমতো কাজ না করায় অনেকেই তখন পড়াশোনায় মনযোগ দিতে পারে না। আর এই পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস অবশ্যই তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

আর নুন শিফটে দুপুরে স্কুলে যাওয়া, বিকালে ছুটি।

প্রতি পিরিয়ড এর সময়ও আগের চেয়ে কম।
শিক্ষকদের ক্লাসে প্রবেশ, প্রস্থান এবং পড়ানো, বোঝানো, হোমওয়ার্ক দেয়া, আগের দিনের হোমওয়ার্ক আদায় করে নেয়া সবকিছুই এই সীমিত সময়ের মধ্যে।
আর এখনতো শ্রেণী কক্ষ প্রতি ছাত্রছাত্রী সংখ্যাও আগের চেয়ে বেশি। সময় কমেছে কিন্তু ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। কিভাবে সম্ভব সবকিছু ??

আর দুই পিরিয়ড এর মাঝে ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের মধ্যে কে কি বুঝতে বা লিখতে পারলো বা না পারলো, সে বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা, বিষয়টি বুঝে নেওয়া এবং মগজ স্থিতিশীল হওয়ার সময় কোথায় ?
আর কোন কারণে, কোনদিন, কোন এক ক্লাসে, শিক্ষকের ক্লাসে প্রবেশ করতে একটু দেরি হয়ে গেলে সেই পিরিয়ডটাই নষ্ট।

এই একবেলায় স্কুল হওয়ার কারনে দিনের বাদবাদি সময়টা ছাত্রছাত্রীরা কিভাবে কাটাবে ? এখনতো আমাদের যুগের মত পাড়া-বেড়ানো, শৈশব / কৈশোরের যাবতীয় দুরন্তপনা বা আউটডোর খেলাধুলার সুযোগও নেই এবং থাকলেও যুগের পরিবর্তনে সেটা নিরাপদও না।

তাহলে হয় টিভি দেখবে অথবা মোবাইলে/কম্পিউটারে গেম খেলবে অথবা বসেবসে এটা-ওটা খাবে আর মোটা হবে। এক্ষেত্রে অবিভাবদের বিকল্প ভাবনা এরচাইতে কোচিং সেন্টারে সময় কাটুক সেটাই ভালো।

দেশ এগিয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে, রাস্তাঘাট , ব্রিজ-কালভার্ট , কর্ণফুলীর নীচে পাতালপথ, নতুন নতুন ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল হচ্ছে, নিজস্ব স্যাটেলাইট এর মালিক আমরা , নতুন নতুন বিমানবন্দর হচ্ছে, নিজস্ব অর্থায়নে এত্তোবড় পদ্মা সেতু, রূপ-পুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মত বিশাল বাজেটের উন্নয়ন কাজ করার সামর্থ আছে আমাদের। অথচ গুটিকয়েক স্কুল ভবন বানানোর সদিচ্ছার অভাবে স্কুল গুলোকে দুই শিফটে পরিচালনা করতে হচ্ছে।

দিনব্যাপী স্কুল না হওয়ার কারনে স্কুলের সাথে ছাত্রছাত্রীদের আত্মার যে একটা সম্পর্ক তৈরী হয় তা কিন্তু এখন আর হচ্ছে না। আমাদের সময় আমারা আমাদের স্কুলকে আমাদের নিজেদের সম্পত্তি মনে করতাম। আমদের মতন করে বর্তমানের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলকে নিজের কিছু মনে করবে সে সুযোগ কোথায় ?
______________________

ডা সুরেশ তুলসান।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়