Ameen Qudir

Published:
2019-02-27 05:19:09 BdST

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,পুরান ঢাকার মৃত্যুপুরীর সব ক্যামিকেল সরিয়ে রাস্তা প্রশস্ত করুন


 



ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী
______________________________

ছেলের বাপ বার বার বলছে,আগুনের নিউজ আর ভিডিও গুলো এভয়েড করো।অকারণে পেনিক হবে।
নিজেও বুঝতেছিলাম,নিতে পারছি না আর।খুব কষ্ট পাচ্ছি।বুকটা ফেটে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে।

পোষ্ট ইফেক্ট গুলো আরো মারাত্মক।কিচেনে ঢুকতে ভয় করে।গ্যাসের চুলাতে হাত রাখা মাত্রই বুকটা কেঁপে ওঠে।উঠতে বসতে সারাক্ষণ ই মনে হচ্ছে,কিছু একটা ঘটবে এক্ষুনি।

পুরান ঢাকাস্থ চক বাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে এই হাল।
নিজের এই ভয় ভীতির থেকেও বিব্রত হচ্ছি পুরান ঢাকা বাসীদের ভীতি হীনতা আর নীতিহীনতা দেখে।

আপনি লোভী।আপনার অনেক টাকা আছে।তবু আরো টাকা চাই।পিপিলীকা সম মানুষের জীবনের মূল্য এখানে।আপনি ধনবান থেকে আরো বেশী ধনবান হতে চাচ্ছেন।

পুরান ঢাকার ঘরের মধ্যে রাসায়নিক এর গোডাউন ভাড়া দিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়ে আপনি লাক্সারী করছেন।

শুনলাম অনেকেই নাকি গুলশান,বনানী,উত্তরাতে পরিবার নিয়ে শিফট ও করেছেন।

আপনার জমিতে আপনি বোমা রাখতেই পারেন।
কিন্তু আমি সাধারণ পথচারী আপনার রাখা বোমাতে আমার,আমার পরিবারের প্রান গেলে আপনি খুনী।

চক বাজারের আগুন সাড়ে দশটাতে না লেগে সাড়ে সাতটা তে লাগলে কি হতো ভেবেছেন?

আমরা যারা হাজার হাজার বরিশাল বাসী ঐ পথ ধরেই প্রচন্ড জ্যাম কাটিয়ে তিন চার ঘন্টা ধরে রিকসা/সিএনজি/গাড়ি করে সদর ঘাট এসে লঞ্চে চড়ি?

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,, আরো অনেক বেশী চোখের পানি ঝরত আপনার জনগনের।
আরো অনেক মায়ের /বাবার/বোনের বুকের রক্তক্ষরন হতো।

ঢাকাতে চাকরির পরীক্ষা দিতে যাওয়া তরুন,বেড়াতে যাওয়া হাসিখুশি পরিবার, ডাক্তার দেখাতে যাওয়া বৃদ্ধ, বরিশাল মেডিকেল কলেজ /বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ঢাকাস্থ মেধাবী ছাত্র ছাত্রী কিংবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ /ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়/অন্য প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া মেধাবী ছাত্র ছাত্রী টি আপনার গাদা গাদা স্বপ্ন চোখে নিয়ে মুহূর্তে অঙ্গার হতো।

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী আপনি উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন। একটি উন্নত দেশে দেশের নাগরিক দের জীবনের থেকে মূল্যবান কি আছে?

বাবা মা ছোট ভাইয়ের সাথে বেড়াতে যাওয়া দগ্ধ শিশুটি যার চোখের সামনে বাবা মা ভাই পুড়ে ছাই হয়েছে, হাতের মেহেদী না শুকনো নবপরিনীতা লাল টুকটুকে বধুটি যার স্বামী নিজের দোকানে বসে পুড়ে গিয়ে বধুটির অঙ্গে তুলে দিয়ে গেছে সাদা থান, যে বৃদ্ধ বাবা তার দু পুত্র কেই হারিয়েছে কিংবা ঐ মিষ্টি মেয়েটি যার মা ঔষধ আনতে গিয়েছিল তার জন্য, এই আসছি বলে আর ফিরে এলো না।

এই মাতৃহীন, পিতৃহীন, স্বামী হারা, স্ত্রী সন্তান হারা দগ্ধ হৃদয়ের কান্না চকবাজারের লোভী ব্যবসায়ীদের এতটুকু ও বিচলিত করছে না।

আমরা সারা দেশ ভীত সন্ত্রস্ত।গ্যাস সিলিন্ডার সহ গাড়ী বা ভ্যান দেখলে হাত পা কাঁপে।
অথচ এই মৃত্যুপুরীর ব্যবসায়ীরা মেয়র কে ঘিরে ধরেছে,ক্যামিকেল সরাতে দিবে না।

ক্যামিকেল সরাতে হবে। রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে।
দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে এই উদ্যোগ নিতেই হবে।
মৃত্যু অমোঘ।
এক না একদিন সবাই চলে যাবে।
কিন্তু তাই বলে প্রান চঞ্চল উচ্ছল সব মানুষ গন চলার পথে জ্যান্ত পুড়ে মুহূর্তে কয়লা হবে এই বর্বরতা মেনে নেয়া যায়না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
আপনা র কাছে সারা দেশবাসীর আকুতি,, এই মৃত্যুপুরীর ভয়ংকর ফাঁদ থেকে ঢাকাবাসী তথা দেশবাসী কে মুক্তি দিন।ক্যামিকেল গোডাউন এবং কসমেটিকস কারখানা লোকালয় থেকে দূরে কোথাও সরিয়ে নিন।
আর সেটা করুন আজ ই। এক্ষুনি।।
_______________________________

ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী
বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। .

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়