Ameen Qudir
Published:2019-02-19 22:00:00 BdST
ভাইরাল ২৫ বছর পুরনো ৩৩ ভ্রূণকে শিশুর লাশ বলে চালিয়ে গুজব মিডিয়ার অপপ্রচার, তোলপাড়
ডা. সুজানা শরমিন
_______________________
২৫ বছর পুরানা স্পেসিমেন ভ্রূণ। ২৫ বছর ধরে এসব মেডিকেল শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এখন আর ব্যবহার উপযোগী নয় , তাই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
এসব স্পেসিমেন দিয়ে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী গত ২৫ বছর ধরে গাইনীকলজি শিক্ষা পেয়েছেন। তারা ডাক্তারী বিদ্যা শিখে লাখো সুস্থ শিশুর জন্ম দিয়েছেন।প্রসূতি মা ও সদ্যজাত শিশুকে জীবন দিয়েছেন। বাঁচিয়েছেন। বাংলাদেশে প্রসূতি মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর যে ভয়াবহ উচ্চহার ছিল, তা কমিয়ে শূণ্যে এনেছেন। এখন শিশু ও প্রসূতি মারা যায়; তবে তা ডাক্তারদের জন্য নয়, মারা যায় প্রসূতি পরিবারের মূর্খতায়, অবহেলায়। অথচ সেসব স্পেসিমেনই হল চরম মিথ্যাচার ও গুজবের হাতিয়ার।
মেডিকেল শিক্ষার এই সমুহ দরকারি উপকরণ স্পেসিমেন ভ্রূণকে কেন্দ্র করে গুজব মিডিয়া গত সোমবার থেকে সারা দেশে মুর্খ ও গুজবপ্রিয় জনগনের মধ্যে আবেগের তোলপাড় তুলেছে। ভাইরাল হয়েছে খবর যে, বরিশাল মেডিকেলে ডাস্টবিনে ৩৩ শিশুর লাশ পাওয়া গেছে। দায়িত্বশীল মিডিয়াও সঠিক খবর প্রচার না করে আকারে ইঙ্গিতে গুজবের কাছাকাছি নিউজ দিয়ে সত্যের অপলাপ করেছে। ডাক্তারবিরোধী মুর্খ জনগনের তথাকথিত জেহাদের আগুনে ঘি ঢেলেছে এই গুজব ও মিথ্যা খবর। বিস্ময়ের ব্যাপার, এ নিয়ে একশ্রেনীর কবি লিখেছে কবিতা। ফেসবুকে ও অন্য সব মাধ্যমে ডাক্তারদের গালিগালাজ। জঙ্গী মৌলবাদীরাও সোচ্চার। তারা বলছে," হায় রে হায়রে হায়। সমাজ কোন পথে। ডাক্তারা কত নীচ , পিচাশ।" তারা বরিশালের মেডিকেলে কি পরিমাণ এবরশন হয়, সেটা দাবি করে নানা কদর্য মন্তব্য করছে।
এখন এসব ভ্রূণ ওয়াজ করা হুজুরদেরও হাতিয়ার হবে। তারা সারা দেশে এ নিয়ে নানারকম কদর্য উক্তি করে ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়াবেন। সরকারের উচিত , এ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া। গুজব রোখা।
এসব গুজব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য বড় হুমকি ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এ সব স্পেসিমেন অপসারণ নিয়ে সিস্টেমিক গলদ হয়েছে। মিডিয়া সে ভুল নির্দেশ না করে মুর্খ জনগনকে আবারও ডাক্তারবিরোধী জেহাদে উস্কে দিয়েছে।
জানা যায়,
সোমবার রাত ৯টার দিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা একসঙ্গে এই ভ্রূণগুলো উদ্ধার করেন।
মিডিয়ার হাতিয়ার বা মুখপাত্র কোন ডাক্তার নন। বরং তারা উদ্ধৃত করছে
বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মিরাজ হোসেনকে। সে মিডিয়াকে জানায় , রাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা হাসপাতালের পশ্চিমে প্রধান পানির ট্যাংকের পাশে থাকা ডাস্টবিনের ময়লা অপসারণ করার সময় ময়লার স্তূপের ভেতর প্লাস্টিকের বালতিতে ভ্রূণগুলো দেখতে পান।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালের গাইনি বিভাগে অনেক মায়ের অপরিণত বাচ্চা হয়। অনেক সময় পরিবারের লোকেরা এসব ভ্রূণ নিয়ে যান; আবার অনেকে হাসপাতালে ফেলে যান। যেসব ভ্রূণ ফেলে যাওয়া হয় সেগুলো দিয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয়। পরে তা কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক বাকির হোসেন বলেন, “উদ্ধার হওয়া ভ্রুণগুলো ২৫ বছর আগের পুরনো। ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত ভ্রুণগুলো গাইনি বিভাগের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল।
বর্তমানে এগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কোনো কাজে আসছে না; তাই এগুলোকে ব্যবহার অনুপোযোগী ঘোষণা করা হয়েছে বলে বাকির হোসেন জানান।
তিনি বলেন, “বাতিল হিসেবে গণ্য ভ্রুণগুলো মাটিচাপা দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এগুলো কেন ময়লার ভাগাড়ে ফেলা হলো তা গাইনি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা ভালো জানেন।”
এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান পরিচালক বাকির হোসেন।
ওদিকে, ভ্রুণগুলো সুরাতহাল করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল কোতোয়ালি থানার ওসি নূরুল ইসলাম।
বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজর সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক কবি ডা. ভাস্কর সাহা এ ব্যপারে বলেন,
বরিশাল মেডিকেল কলেজের ডাস্টবিনে শিশুদের লাশ! এ ব্যাপারে অনেকেই কৌতুহল বশত আমাকে ফোন করছেন বা ইনবক্সে জানতে চেয়েছেন। সেসব ফোনদাতাদের উদ্দ্যেশে বলছি এটা আমার জানার কথা না তবু ধারণা করে বলছি গাইনী ওয়ার্ডে ছাত্রছাত্রী ইন্টার্নীদের প্রশিক্ষণের উদ্দ্যেশ্যে যে সব জার( বৈয়ম) ভর্তি স্পেসিমেন রাখা ছিলো( যেগুলো আমরাও আমাদের ছাত্রজীবনে দেখেছি।) সেগুলোর ক্যামিকেল এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে ফেলে দেয়া হয়েছে। এই ফেলে দেয়া নিয়েই বিপত্তি। এগুলো যে পদ্ধতিতে ফেলে দেয়ার নিয়ম তা মানা হয়নি। ডাস্টবিনে ফেলার পর টৌকাইরা সম্ভবত স্পেসিম্যানগুলো ডাস্টবিনে রেখে বৈয়মগুলো নিয়ে গেছে।
আপনার মতামত দিন: