Ameen Qudir
Published:2019-02-19 00:05:59 BdST
সুখের পিছনে হরমোন :কিন্তু তৃপ্তি পাওয়াটি ক্ষণস্থায়ী
ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
_____________________
সাধারণভাবে মানুষের সুখবোধ নির্ভর করে চার টি রাসায়নিক এর ওপরে।
এরা হলো ১.ডোপামিন ২.এন্ডরফিন ৩.সেরোটোনিন ৪. অক্সিটোসিন।
যখন আমরা ব্যায়াম বা শারিরীক পরিশ্রম করি, আমাদের শরীর থেকে ক্ষরিত হয় এন্ডরফিন। এই এন্ডরফিন একটি তৃপ্তি দায়ী ( ফিল গুড) হরমোন। কিন্তু এই ভালো লাগা বা তৃপ্তি পাওয়া টি ক্ষণস্থায়ী।
তারপরে জীবনের আরো বছর কাটে, আমরা প্রতিষ্ঠিত হই। অর্থ, নিজের বাড়ি, পছন্দসই একটি যান, আমাদের মধ্যবয়েস বা ত্রিশের ঘরে সাধারণত হয়ে যায়। এই প্রতিষ্ঠা লাভ ডোপামিনের ক্ষরণ ঘটায়। কিন্তু এও ক্ষণস্থায়ী।
কিন্তু সেরোটোনিন আর অক্সিটোসিন?
সেরোটোনিন ক্ষরিত হয় তখনি যখন, আমরা নি:স্বার্থ ভাবে কাউকে কিছু দান করি, কোনরকম প্রচার বা আমাদের কোন জনপ্রিয়তার দাবী ছাড়াই। সেজন্যেই আমরা দেখি কোটিপতি দের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দান করতে। তাদের ডোপামিনের অভাব নেই কিছুই, কিন্তু সেই সুখবোধ ও ক্ষণস্থায়ী। তাই প্রয়োজন পড়ে সেরোটোনিন এর।
অক্সিটোসিন কিন্তু ক্ষরিত হয় তখনি, যখন আমরা কোন পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করি, জড়িয়ে ধরি বা করমর্দন করি।
অর্থাৎ আমাদের জীবনে সুখ চাইলে কিছু দান ধ্যান এবং সামাজিকতা বজায় রাখা প্রয়োজন। আরো সোজা বাংলায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশা, তাদের সুখ -- দূ:খের কাহিনী অন্তত শোনা এবং প্রয়োজনে তাদের কোন না কোন ভাবে সাহায্য করা।
এই হলো করিম এল শেখের গবেষণালব্ধ, সুখের চাবিকাঠির পিছনে যে রসায়ন, তার সন্ধানে --- এই লেখাটির সংক্ষিপ্ত বাংলা সারানুসার। মূল লেখাটি ইংরেজি ভাষায়।
তবে, যোগ করি, যা করিম এল শেখ লেখেননি, বা হয়তো জানা ছিল না তাঁর, মানুষ কে সুখী করা এক অর্থে অসম্ভব বললেও অত্যুক্তি হবে না। কারণ, মানুষের সুখবোধ নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী। কাঙ্খিত জিনিষ বা লক্ষ্য অর্জন করলে মানুষ তাৎক্ষণিক সুখী হয় নিশ্চিত, কিন্তু কিছু সময় পরে এই সুখবোধে অভ্যস্ত হয়ে গেলে, সে চায় আরো নতুনতর সুখ। হয়তো এই নতুন সুখের খোঁজে ই মানুষ নতুনতর আবিষ্কার করেছে বারে বারে, ভবিষ্যতে আরো করবে। কিন্তু স্থায়ী সুখ হয়তো রইবে অধরা ই।
একটি উদাহরণ দি। আমার বাল্যে বাতানুকূল যন্ত্র বা রেফ্রিজারেটর এর ব্যবহার এতো ছিল না, বা বলা যায় খুবই কম ছিল। সেই সময়ে আমি বা অন্যমানুষজন কি খুব অসুখী ছিলেন? না বোধকরি। বাল্যে সুখাদ্য প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার সুযোগ অনুষ্ঠান বাড়ি ছাড়া তেমন হতো না, কিন্তু এই ভোজনবিলাস ও ছিল ভারি ক্ষণস্থায়ী।
তখনো বিমানে যাতায়াত এত সর্বজনলভ্য ছিল না। সিনেমাতেই দেখতুম। যখন বিমানে যাতায়াতের সুযোগ মিলল, কিছুক্ষণ পরেই তা যেন একঘেয়ে হয়ে গেল। এই যে অতৃপ্তি, বা চিরসুখে দিনযাপন এর অভাব মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্স কে তাড়া করে ফিরেছে বহুযুগ ধরে, এখনো করছে বৈকি।
ঠিক চিরসুখী হতে হলে কোন রাসায়নিক টির ক্ষরণ হতে হয় মস্তিষ্কে, তা আজো অজানা ।
যুধিষ্ঠিরের সেই সুখী মানুষের সংজ্ঞা টি স্মরণ করুন। ঋণ ভার ব্যতিরেকে দুইবেলা শাকান্ন র সংস্থান ই কি সুখ? আজকের যুগে হাস্যকর প্রস্তাব। তবে সুখী কে ও সুখের চাবিকাঠি টি আছে কোথায়, জানেনা বোধকরি কেউই ।।
_________________________
ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
সুলেখক । কবি।
Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC
আপনার মতামত দিন: