Ameen Qudir
Published:2019-01-30 00:36:10 BdST
ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে সেবা,মানবতা আদায় করা যায় কি?
ডা. মিথিলা ফেরদৌস
______________________________
নিজেকে কেমন জানি নায়িকা নায়িকা মনে হচ্ছে।সুবেহ সাদেকে উঠছি,অফিস টাইমের ১৫ মিনিট আগেই অফিসে উপস্থিত হতে হবে।দুরের রাস্তা।তবুও যৎসামান্য যা কসমেটিক্স আছে তা দিয়ে সাজুগুজু করলাম।শুনেছি টিভি ক্যামেরা হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরতেছে।বাইচান্স যদি ক্যামেরায় চান্স পেয়ে যাই,টিভিতে দেশের জনগণ দেখবে, ভাবা যায়! কি বিশাল ব্যাপার!
প্রগ্রাম নাকি লাইভে দেখাবে,তাই জীবনের প্রথম প্রগ্রাম নিজেই দেখতে পারবোনা।আম্মাকে ফোন করে বলে দিলাম,
:রান্না বান্না বাদ দিয়ে বাইরে থেকে খাবার এনে খেও।কিন্তু টিভির সামনে থেকে উঠবানা।টিভিতে আমি বা আমার মত কাউকে দেখলেই ছবি তুলবা,আমাকে পাঠাবা,আমি আপলোড দিতে চাই।
আম্মা পেপার পত্রিকা পড়ে, সবই জানে।ভীতকন্ঠে বলে,
:ফাজলামি করো না,সাবধানে থেকো।টিভিতে,পত্রিকায় ডাক্তার নিয়ে যা তা অবস্থা চলছে।
আমি হাসি মনে মনে ভাবি,ডাক্তার সমাজ হইছে এ সমাজের সবচেয়ে বড় ক্রিমিনাল।হাসপাতালে প্রতিটা ডাক্তারকে দেখে ক্রিমিনাল ক্রিমিনাল মনে হচ্ছে।
হাসপাতালে যথারীতি ভোরবেলায় এসে ঢুকলাম অফিস টাইমের আগেই।হাসপাতাল ঝাড়ু দেয়া হয় নাই,কেরানীর কাছে কাজ ছিল,কেরানী সাড়ে নয়টাও আসেনি,রুগী পত্রও আসেনি,শীতের সকাল তারা আরাম আয়েশ করে আসবে,এইটাই স্বাভাবিক। সবচেয়ে মন খারাপ হইছে,যে ক্যামেরা ম্যানের জন্যে এত আশায় বুক বেধে সাজুগুজু করে আসলাম,১০ টা পর্যন্ত তারাও হয়তো রেস্ট নিয়ে হাসপাতালে রিক্রিয়েশনের জন্যে আসবে।
পুরা হাসপাতালে অপরাধী মুখ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে ডাক্তার প্রজাতির ক্রিমিনালগুলি।কয়েকজন ভয়ে কথাই বলতে পারতেছে না,ক্রিমিনালদের কথা বলার কোনও নিয়ম নাই।কামানের মুখেই কেউ কেউ মিন মিন করে বলতেছে,এইভাবে কি চাকরী করা যাবে?মনে মনে হাসি,ছাপোষা মানুষ!
আমার প্রতিদিনই অফিস আসতে হয়,নিজের অসুস্থতা নিয়েও অফিস করতে হয়।কিন্তু কষ্ট হয়,দূরে পরে থাকা বাবা মায়ের অসুস্থতায় যখন ছুটি পাইনা,ছটফট করি,যখন নিজের বাচ্চার অসুস্থতায় মা হয়েও পাশে থাকতে পারিনা।
যাইহোক,হাসপাতালে থমথমে পরিস্থিতি।চা খেতে যাইতে ভয় লাগতেছে,এমন কি ফ্রেশ রুমে যাইতেও নাকি কেউ কেউ ভয় পাইতেছে ,ক্যামেরাম্যান এসে যদি না পায়,গ্রেট মিস হইয়া যাইবে।লাইট,ক্যামেরা একশন পর্যন্ত থাকলে ঠিক ছিলো,কাট হইলেই বিপদ!
তোপের মুখে, চাপের মুখে,ফায়ারিং স্কোয়াডে দাড় করিয়ে সেবা,মানবতা আদায় করা যায় কি?ভালবাসা দিয়েই ভালবাসা আদায় করতে হয়।তোপের মুখে কর্তব্য পালন হবে,সেই কর্তব্যে আন্তরিকতা থাকবেনা।অথচ এই একটা পেশায় আন্তরিকা ভীষণ প্রয়োজন।
যাইহোক,সারাদেশে দেশে যখন প্রতিদিন শিশু ধর্ষন হচ্ছে,বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে যখন হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে,সড়ক দুর্ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক স্বাভাবিক ব্যাপার,হানাহানি খুনাখুনি না হলে দেশের ইজ্জতের যখন বারো অবস্থা,ব্যাংক বিমায় সীমাহীন অনিয়ম কোনও ব্যাপারই না,কাস্টমস, পুলিশ,সিটি কর্পোরেশন স্বয়ং দুদকই যখন স্বচ্ছতার ধারক বাহক তখন সব কিছুকেই ছাপিয়ে ডাক্তাররা এখন শীর্ষ সন্ত্রাসী। পত্রিকাওয়ালারা খুব সযত্নে সবাইকে ব্লার করে দিয়েছে আর জনগণের চাহিদা পুরন করতে পেরেছে।
আমি আবারও বলতে চাই,ভালবাসা দিয়েই ভালবাসা আদায় করে নিতে হয় এবং এই একটা পেশাতেই পারস্পারিক সম্পর্কটাকে ভাল রাখা ভীষণ জরুরী।সম্পর্কের অবনতি ডাক্তারদের চেয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হবে,এই দেশের অসহায় জনগণ।
© ডা. মিথিলা ফেরদৌস । সুলেখক।
আপনার মতামত দিন: