Ameen Qudir
Published:2019-01-21 21:25:40 BdST
অভিনন্দনআমার স্কুলে আমার শিক্ষক আম্মার সঙ্গে
ডা. মাকসুদা খানম অনু
___________________________
আমার স্কুল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। শতবর্ষের অনুষ্ঠানমালায় গিয়েছিলাম আম্মার সঙ্গে।
আমার আম্মা হামিদা বেগম ১৯৫৭ সালে তৎকালীন মেট্রিক পাশ করেছিলেন। পরে বি এ পাশ করে শেরইবাংলা গার্লস হাইস্কুলে ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন।
আমার জীবনের সব ভালকিছু আমার আম্মার জন্য।অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা আম্মা তোমাকে।
২. স্বাগতম শতবর্ষ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।পটুয়াখালীর একজন জেলা প্রশাসক ছিলেন আবদুশ
শাকুর। সুলেখক, কবি,সংস্কৃত মনা। ওঁনার সময় পটুয়াখালীতে এক সাংস্কৃতিক গণ জাগরণ হয়েছিল।তিনি বলেছিলেন বালিকারা কি লম্বায় উঁচু উঁচু?স্কুলের নাম সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় হবে না। হবে ---সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
৩.
আমার স্কুল নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে অসাধারণ লিখেছেন একেএম মনিরুল হক
। অনন্য সে লেখা।
অভিনন্দন, শুভকামনা :
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের জেলা পটুয়াখালী। ঐতিহ্যবাহী না হলেও সাধারন নয়, বলা যায় অসাধারন। জেলার প্রান কেন্দ্র পটুয়াখালী শহর যেখানে ভালোবাসার মানুষদের বসবাস। সেই শহরের এক ঐতিহ্যবাহী স্কুল "পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় " শতবর্ষ লাভ করেছে। শতবর্ষে পদার্পন করতে তাকে অনেক কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে নিশ্চই। আজ এই ভালোবাসার, ঐতিহ্যের এবং ঐতিহাসিক স্কুলের শতবর্ষ উদযাপিত হলো ছাত্রী, অভিবাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের আনন্দ ও ভালোবাসায়। পটুয়াখালীর সকল স্তরের মানুষদের কাছে এই স্কুলের প্রতি আবেগটা ভিন্নতর। শহরের প্রায় প্রতিটা বাসায় এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলো এবং আছে । এমন অনেক পরিবার আছে যাদের তিন জেনারেশন এই স্কুলের ছাত্রী এবং তারা এই উৎসবে যোগদান করছে। এই স্কুল আমার এবং আমার পরিবারের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারন এই স্কুলে আমার বড় খালা, মেঝ খালা, আমার আম্মা, আমার খালাতো বোনদ্বয় শেলীনা শিরীন আপা এবং আমার ছোটবোন রাখী পড়েছে। আমার অকালপ্রয়াত মেঝ খালা (দিনু খালা) ১৯৫০ সালে এই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশ, আমার আম্মা এখান থেকেই ১৯৫২ সালে মেট্রিকুলেশন, ছোট বোন ডাঃ রাখী ১৯৮৫ সালে এই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছিলো। আজ সকাল থেকে ফেজবুকে এই উৎসবের ছবি ও ভিডিও দেখে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ছি। মনেহচ্ছিল এই উৎসবে সামিল হয়ার জন্য ছুটে যাই। এর অন্যতম কারন আমার প্রায়ত আম্মা। আম্মা এই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করে পটুয়াখালী কলেজ থেকে বিএ পাশ করে এই স্কুলেই শিক্ষকতা শুরু করেন এবং এই স্কুল থেকেই চাকুরী জীবনের অবসর গ্রহন করেন। এই স্কুলে চাকরির কারনে আম্মা পটুয়াখালীতে আক্তারাপা নামে পরিচিত ছিলেন। সমগ্র শহর জুড়েই ছিলো আম্মার ছাত্রী। এমনও আছে মা মেয়ে উভয়ই আম্মার ছাত্রী। আম্মার সাথে ছোট সময় অনেকবার এই স্কুলে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আম্মার সাথে স্কুলে গেলে তার সহকর্মীদের অসাধারন ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি, আহা সেই দিনগুলি!! আম্মার সহকর্মীদের মধ্যে ছিলেন বড় আপা (হেড মিস্ট্রেস) প্রায়ত জনাব ফিরোজী সুলতানা, এছাড়া পারুল খালা, রেবা খালা, ছবি মাসী, বানী মাসি, ডেইজি খালা, শিউলি খালা, কমলা খালা, ঝর্না মাসী, রাজিয়া খালা, শিবানী মাসী, রওশন খালা ছিলেন। তারা ছিলেন খুবই আন্তরিক এবং যে যার ক্ষেত্রে অনন্যা। স্যারদের মধ্য শমশের স্যার, জয়নাল স্যার, নিহাররঞ্জর স্যারের কথা মনেপড়ে। এদের মধ্যে আমাদের মাঝে অনেকেই নেই কিন্তু তাদের স্মৃতি আমাদের মধ্যে থাকবে চিরদিন। আপনাদেরকে আমরা ভালোবাসি।
এই স্কুলের শিক্ষার্থীগন সেই বৃটিশ ভারত থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত দেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সকল আন্দোলনে তাদের সফল অংশগ্রহণ ছিলো । দেশ গঠনে আইন প্রনয়ন, প্রশাসনে, চিকিৎসা, প্রকৌশল, শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজগঠন, কৃষি ক্ষেত্র, সংস্কৃতি, খেলাধুলাসহ সমাজের সকল ক্ষেত্রে এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের অবদান ছিলো এবং এখনো চলমান আছে।
পটুয়াখালী জেলা একটা অবহেলিত জনপদ হওয়ার পরেও এখানে শিক্ষার প্রসার ছিলো ঈর্ষণীয়। এই শহরের তিনটি বিদ্যালয় শতবর্ষ অতিক্রম করল। আমার স্কুল পটুয়াখালী সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের একশত পঁচিশ বছর পার হলো, লতিফ মিউন্যেসিপাল সেমিনারি গতবছর একশত বছর অতিক্রম করল এবং সর্বশেষ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়। আহ্ , কি যে অনুভূতি বুঝাতে পারব না। এই শহরে জন্মে আমার জীবন ধন্য। লাভ ইউ পটুয়াখালী।
পটুয়াখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইউনিফর্মের রং আকাশের মত নীল, তাইতো এখানকার শিক্ষার্থীগন আকাশের মত বিশালত্ব নিয়ে নীলপরি হয়ে ছড়িয়ে আছে বিশ্বময়। আজ আপনাদের স্কুলের শতবার্ষিকীতে আপনাদেরকে জানাই আন্তরিক মুবারকবাদ। আমার মা খালা বোনদের এই স্কুল যেন বেচে থাকে হাজার বছর, এই কামনা করি।
পটুয়াখালী সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদেরকে ধন্যবাদ।
_________________
ডা. মাকসুদা খানম অনু । কবি। সুলেখক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
আপনার মতামত দিন: