Ameen Qudir

Published:
2019-01-12 22:07:07 BdST

প্রতারকমেডিকেলে না পড়েও ওরা ভয়ঙ্কর ডাক্তার



ডা. কামরুল হাসান সোহেল
_________________________

সাধু সাবধান।
মেডিকেলে না পড়েও আজকাল ভীতি ভয়ঙ্কর হরর-ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়েও আজকাল ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর প্রতারক জিনিয়াস কিছু ছেলে। সংখ্যাটা কম না সারাদেশে কয়েক হাজার তো হবেই। বাংলাদেশে সবচেয়ে সহজ ডাক্তার হওয়া। নামের আগে ডাঃ লাগালেই হলো আপনি ডাক্তার, আর ডাক্তার হওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কারণ হল বিয়ের বাজারে ডাক্তারের কদর একটু বেশিই।বাংলাদেশে ফার্মেসির দোকানে মেডিসিন বিক্রেতা ও ডাক্তার, কোয়াক ও ডাক্তার, প্যারামেডিকস ও ডাক্তার, সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেকোন পোস্টে চাকরি করা ব্যক্তিও তার এলাকায় ডাক্তার নামে পরিচিত। এছাড়া আছে এলএমএফ ডাক্তার,ডিএমএফ ডাক্তার, স্যাকমো ডাক্তার,ব্রাদার/এসএসএন ডাক্তার! এ যে দেখি ডাক্তারের হাটবাজার! খুবই আনন্দের কথা আমাদের দেশে রোগীর চেয়ে ডাক্তারের সংখ্যা বেশি! এদের কেউ কেউ প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে, যারা প্রতারণা না করে শুধু এই কাজে নিয়োজিত তাদের জানাই ধন্যবাদ। কিন্তু যারা প্রতারণা করে বড় ডাক্তার সেজে রোগীদের ঠকায় তাদের জন্য ঘৃণা।

শুধু গ্রামে গঞ্জের সহজ সরল রোগীদের সাথেই প্রতারণা করেই এদের অনেকে থেমে থাকেনা,প্রতারণা করতে করতে এদের সাহস বেড়ে যায়। এদের কেউ কেউ ভুয়া চাইনিজ/রাশিয়ান এমবিবিএস সার্টিফিকেট যোগাড় করে,বিএমডিসিকে ম্যানেজ করে রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যায়। এরা হলো রাঘব বোয়াল টাইপ প্রতারক। এছাড়া কেউ কেউ নিউরোলজিস্ট সেজে বড় বড় কর্পোরেট ক্লিনিকে চেম্বার ও করে।

দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ,ক্লিনিকের বাম্পার ফলনের ফলে ভুয়া ডাক্তাররা এইসব মেডিকেল কলেজ,ক্লিনিকে চাকরি করার সুযোগ ও পেয়ে যায়। সরকারি মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নি করার ও সুযোগ পেয়ে যায় শুধুমাত্র খুব ভালভাবে তাদের সার্টিফিকেট যাছাই বছাই করা হয়না বলে। কর্তৃপক্ষ ভাবে বিএমডিসি যখন রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দিয়েছে তাহলে আর তাদের কি করার আছে! যদি খুব ভালভাবে যাচাই বাছাই করা হতো তাহলে ৮০-৯০% ভুয়া ডাক্তারই সনাক্ত হয়ে যেতো। এখন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা তাদের নামের আগে ডাঃ এবং নামের পরে বড় বড় ডিগ্রি ও প্রতিষ্ঠানের নাম লিখার সুযোগ পেয়ে যায়।

এইভাবে এরা প্রতারিত করছে বড় বড় হাসপাতাল,ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে,প্রতারিত করছে তাদের রোগীদের। এছাড়াও ভুয়া ডাক্তাররা সবচেয়ে বড় প্রতারণা করে বিয়ে করার জন্য তারা খুজে নেয় মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্রী,ডাক্তার বা সরকারি চাকরি করা ডাক্তার মেয়েদের। বিয়ের প্রপোজাল আসলে মেয়ের বাবা,মা, আত্মীয়স্বজন খোঁজ নেয় তারপরও খুব ভালভাবে যাচাই বাছাই না করার সুযোগ পেলে প্রতারিত হতে হয়।

আজ পরিচয় করিয়ে দিবো একজন প্রতারকের সাথে যিনি পরিচয় দিয়েছে নিজেকে DMC এর ৬৪ নাম্বার ব্যাচের এবং জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে মেডিসিনে কনসাল্টান্ট পোস্টে জব করেন বলে! সে ডাক্তার সেজে এক জন পরিচিত ছোট বোনের পরিবার কে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং তার সিভি পাঠায়।

নিচে সেগুলো সংযুক্ত করা হলো।
সে বলেছে,, তিনি না কি কুমিল্লা মেডিকেলে ১৪ মাস ট্রেনিং করেছেন! DMC কে PGT করেছেন!
প্রতারণা করতে গিয়ে হিসেবে কিছু ভুল করেছে চলুন সেগুলো মিলিয়ে নিই।
তাহার SSC 2009, HSC 2011,
DMC হতে MBBS 2016 তে পাশ তার মানে ৪ বছরে MBBS শেষ! অথচ কোর্স ৫ বছরের ইন্টার্ণীসহ ৬ বছরের!
তার পর DMC হতে PGT পাশ করেছেন!
পরে BSMMU হতে FCPS পাশ করেছেন! (অথচ BSMMU তে FCPS নামক কোনো কোর্স বা ডিগ্রি নেই)
(তথ্য ঋণ: Al Mamun Fmc)

এমন অনেক ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে আমাদের চারপাশে। আমার জানামতে সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে এসএসএন/ব্রাদার পদে চাকরি করে এমন একজন নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে একজন ডাক্তার মেয়ে বিয়ে করেছে।
তাই সময় এসেছে সতর্ক হওয়ার, কাউকে সরলভাবে বিশ্বাস করার কোন সুযোগ নেই। চারপাশে ওৎ পেতে আছে প্রতারকরা সুযোগ পেলেই প্রতারণার মাধ্যমে আপনাকে ও আপনার পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে ছাড়বে। তাই, সাধু সাবধান।
_____________________________

ডা. কামরুল হাসান সোহেল :
আজীবন সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ , কুমিল্লা জেলা।
কার্যকরী সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
আজীবন সদস্য,বিএমএ কুমিল্লা।
সেন্ট্রাল কাউন্সিলর, বিএমএ কুমিল্লা

সম্পাদকীয় নোটস: লেখক প্রতারকের ছবি দিলেই তার বিরুদ্ধে প্রশাসন এখনও আইনি ব্যবস্থা নেয়ায় অনলাইন সংবিধির কারণে ছবি প্রকাশ হল না। জনসচেতনতার জন্য লেখা প্রকাশ হল।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়