Ameen Qudir
Published:2019-01-05 00:15:49 BdST
মহত্তম মানুষের জন্যে সব বিলিয়ে নিজেকে রিক্ত শূন্য করে গেলেন যারা
ডেস্ক
______________________
তিনজনই মহত্তম মানবপ্রতিভা। তিনজনই ছিলেন লোকসেবী। তিনজনের অদ্ভুত মিল হল , তিনজনই অকাল প্রয়াত। মহাপ্রয়াণে গেছেন লাখো মানুষকে কাঁদিয়ে শোক সাগরে ভাসিয়ে। তিনজনই লোকান্তরিত হওয়ার আগে মানুষের সেবায় ছিলেন নিয়োজিত। হাজারও সুযোগ থাকলেও ছিলেন নির্লোভ; নিরহঙ্কারী। সর্বস্ব বিলিয়ে গেছেন মানুষের জন্য।
মেডিকেল কলেজ শিক্ষক ডা. জানাচ্ছেন, অরুন্ধতী মজুমদার
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজটা আজকে তৃতীয়বারের মতো এতিম হলো।
প্রথমে ফাউন্ডিং প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. মনসুর খলীল স্যার, এরপর কলেজের সার্বিক উপদেষ্টা মিসেস শীলা ঠাকুর, আর আজকে উনারই স্বামী এই শহরের চোখের মনি সৈয়দ আশরাফ সাহেব,এম পি।
লিখে যাচ্ছি-
"লিখে যেতে পারি দু:খের সাতকাহন..
ও শহর আমার মনের কথা শোন্ !"
মেডিকেল শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান জানাচ্ছেন
একজন মানুষ।
-১৯৯৬ এ পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল এর প্রতিমন্ত্রী
- ২০০৮ এ এলজিআরডি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী
- ২০১৪ সালে আবার একই মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী
- ২০১৫ তে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী
- আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য
অথচ
- মৃত্যুকালে পৈতৃক বাড়িটি ছাড়া আর কোন বাড়ি, ফ্ল্যাট কিছুই ছিলনা
- উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া গুলশানের বাড়ি বিক্রি করেন স্ত্রীর চিকিৎসার জন্যে
- স্ত্রীকে লন্ডন থেকে জার্মানী তে চিকিৎসার জন্য টাকা যোগাড় করতে গিয়ে বিমানের টিকেট পিছাতে হয়েছিল দুই বার
- সরকারি বরাদ্দের প্লট নেন নি
- নেন নি শুল্কমুক্ত গাড়ি
তিনি সৈয়দ আশরাফ। মহান নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান। জাগতিক সম্পদের মোহ তাকে ছুঁতে পারেনি। ব্যক্তিগত জীবনে উদাসীন, দলের জন্য অন্তঃপ্রাণ এই মানুষটাকে নিয়ে দল-মত ভুলে গিয়ে ভেবে দেখুন, কী হারালাম ।
সৈয়দ আশরাফের স্ত্রী শীলা ঠাকুর---------------------
বাংলাদেশকে আপন করে নেন শিলা ঠাকুর
দেশে এসে অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বামী সৈয়দ আশরাফের বাবা দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের মেডিকেল কলেজটির দেখাশোনা করতেন শীলা ঠাকুর ইসলাম ।
অকাল প্রয়াত শীলা ঠাকুর ইসলামকে নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাগ্নি দিলশাদ খলিল লেনা। তিনি বলেন,
মামি ছিলেন অন্য রকম সাধারণ এক নারী। যেমন মামার সহজ-সরল সাধারণ চলাফেরা, ঠিক তেমনই ছিলেন মামি। প্রভাবশালী একজন মানুষের স্ত্রী হয়েও তার কোনো অহমিকা ছিল না।’
লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়মারা যান সৈয়দ আশরাফের স্ত্রী শীলা ঠাকুর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। তিনি দীর্ঘদিন দূরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
লেনা বলেন, ‘এমন প্রভাবশালী একজন মানুষের স্ত্রী হয়েও কোনো অহমিকাতো দূরের কথা, সামান্যতম কোনো ক্ষমতার প্রভাব খাটাতেন না মামি।’
সৈয়দ আশরাফের পরিবারের সদস্য ও তার স্বজনরা জানান, শীলা যুক্তরাজ্যের নাগরিক হলেও বাংলাদেশের টানেই শেষ জীবনটি ব্যয় করে গেছেন এদেশে।
লেনা বলেন, যুক্তরাজ্যের একটি খ্যাতনামা স্কুলের শিক্ষকতার লোভনীয় চাকরি আর আধুনিক জীবনের সুযোগ ছেড়ে গত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদেই বাংলাদেশে চলে আসেন শীলা। আপন করে নেন সৈয়দ আশরাফের পরিবারের সবাইকে।
মামি এতো অল্পতেই সবাইকে আপন করে নিয়েছিলেন যে তিনি যে একজন বিদেশিনী তা বোঝার কোনো উপায় ছিল না।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মিডিয়াকে জানান, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফের স্ত্রী শীলা আসামের সম্ভ্রান্ত এক হিন্দু পরিবার (কুলীন ব্রাহ্মণ) পরিবারের কন্যা ছিলেন। সে সময়ে হিন্দু-মুসলমানের বিয়েটা বাঙালি সমাজ কিভাবে নিতেন জানি না। কিন্তু দুজনের প্রেমের শক্তি এতই প্রবল ছিল যে দুই পরিবারই পরে পরাজিত হয়, দুজনের একসঙ্গে পথ চলা শুরু হয়।’
সৈয়দ আশরাফের প্রয়াত স্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মৃত্যু-গঙ্গার ওপারে বড় ভালো থাকবেন শীলা ঠাকুর বা শিলা ইসলাম।’
উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে লন্ডনে আশরাফ-শীলা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাস করে আসছিলেন।
একজন চিকিৎসক , মেডিকেল অধ্যক্ষ মৃত্যুকালে রেখে গেছেন মাত্র ২০০০ টাকা। আর অসংখ্য বই। তার শোয়ার ঘরে বই রাখার চৌকিটি বইয়ের ভারে ভেঙে পড়েছিল। তবে কি তিনি ডাক্তার হিসেবে আয় রোজগার করেন নি ! তার বেতনের টাকাও বা কোথায় !
বাংলাদেশ জুড়ে কেবলই ডাক্তার বিদ্বেষ। অথচ এই মানুষটির কথা আমরা একটি বারও বলি না। কৃতজ্ঞতাও স্বীকার করি না। তিনি ছিলেন অকৃতদার। জীবনের সকল আয় ও সঞ্চয় তিনি দান করেছেন মানুষের সেবায়।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রয়াত হন এই কিংবদন্তি চিকিৎসক। কর্মের কারণে আজও তাঁকে স্মরণ করছেন সকলে। প্রফেসর ডাঃ মনসুর খলিল।
এনাটমী'র লিজেন্ড ছিলেন এই কিংবদন্তি মানুষটি। প্রয়াণ কালে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ,কিশোরগঞ্জ-এর প্রিন্সিপাল ও এনাটমীর বিভাগীয় প্রধান, ছিলেন।
বিয়ে থা করেননি, তাই সংসার নেই, একা একা থাকতেই বেশি পছন্দ করতেন, সমাজ-সামাজিকতায় খুব একটা মানিয়ে ওঠার চেষ্টা করতেন না।
ছাত্রছাত্রীরাই ছিল তাঁর সন্তান, তাদের ঘিরেই তাঁর সব চিন্তা ভাবনা- তারা কীভাবে আরো ভালোভাবে জ্ঞানার্জন করবে, কীভাবে পড়াশোনা সহজ করে নিতে পারবে।
নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রদের জন্য নিজেই নীলক্ষেতে থেকে বই কিনে উপহার দিতেন। প্রত্যেক ছাত্রই তাঁকে বাবার মতো দেখত, বাবা বলেই সম্বোধন করত।
মাসে যে বেতন পেতেন তার থেকে নিজের চলার জন্য যা লাগে তা রেখে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। মা মারা যাওয়ার পর সেই টাকা দান করে দিতেন এতিমখানায়।
শুনতে অবিশ্বাস্য শোনাবে , মৃত্যুকালে কি রেখে গেছেন এই আমৃত্যু লোকসেবী চিকিৎসক।
তার গুনগ্রাহী ডা. আবেদুর রহমান জানাচ্ছেন,
সরকারী মেডিকেল কলেজের এই অধ্যক্ষের মৃত্যুর পর তাঁর ব্যাংক একাউন্টে সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ পাওয়া গেল ২০০০/= (দুই হাজার টাকা)। তাঁর শয়নকক্ষে পাওয়া গেল একটি শোয়ার চৌকি, একটি বই রাখার চৌকি যা বই এর ভারে ভেঙ্গে পড়েছিল এবং একটি অতি সস্তা টেবিল (যা ফুটপাতে কিনতে পাওয়া যায়)।
বেতনের বেশীর ভাগ টাকা তিনি গঠনমূলক কাজে বিলিয়ে দিতেন।
এই অধ্যক্ষ ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৪ টি মেডিকেলের মধ্যে রেকর্ড নম্বর পেয়ে সবগুলো পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।
আপনার মতামত দিন: