Ameen Qudir
Published:2018-12-24 00:55:30 BdST
স্বাস্থ্য ইশতেহার চিকিৎসকদের দাবি এবং মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের স্বাস্থ্য ইশতেহারের পোস্টমর্টেম
ডা. শরীফ উদ্দিন সুজন
______________________________
আমাদের প্রবল কৌতুহল ছিল , এবারের একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাককালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের ইশতেহারে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কি কি পরিকল্পনার কথা বলেছে । বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে অবহেলিত ডাক্তার ও স্বাস্থ্য সেক্টরের জন্য কোন ধরণের কাজ করবে।
অবশেষে উভয় জোটের স্বাস্থ্য ইশতেহারের পূর্ন বিবরণ আমাদের হাতে এসেছে। পাশাপাশি হাতে এসেছে ডাক্তারদের প্রকৃত দাবি দাওয়ার বিবরণ সম্বলিত সুলেখক ডা. মোঃ মাকসুদ উল্যাহ্র অনবদ্য একটা লেখা । এই লেখার সঙ্গে মিলিয়ে দেখলেই প্রকৃত বাস্তবতা ও ফারাক নজরে আসবে। তাই তিন কলামে পুরো বিষয়টি দেয়া হল। বাকি হিসাব পাঠকের নিজের।
উভয় জোটই প্রচুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু তাতে অবহেলিত ডাক্তারদের দাবিদাওয়ার কতটা এেসেছে, তা পড়েই দেখুন। ।
এর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের
সুলেখক ডা. মোঃ মাকসুদ উল্যাহ্র একটা লেখা ফেসবুকে পড়লাম।
তিনি নির্বাচনী ইশতেহারে চিকিৎসক ও চিকিৎসাব্যবস্থা প্রসঙ্গে লিখেছেন। এই লেখায় কি হওয়া উচিত সেসব পয়েন্ট সুন্দভাবে এসেছে। দাবি দাওয়া যা লিখেছেন , বেশীর ভাগের সঙ্গে আমি একমত।
ডা. মোঃ মাকসুদ সুন্দর ভাবে বলেছেন,
দেশের চিকিৎসাব্যবস্থাকে উন্নত করতে এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করে উল্লেখিত দাবীগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
ডা. মোঃ মাকসুদের পয়েন্টগুলো হল,
চলমান বেতন কাঠামোতে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করে দিলে কেউ আর তার সন্তানকে ডাক্তারি পড়াবে না।
গ্রামে পাঁচ বছর ডাক্তারি করা স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণের শর্ত হলে এক্ষেত্রেও কেউ আর ডাক্তারি পড়বে না। সবাই ইন্টার্নী শেষে ইউরোপ আমেরিকা গিয়ে ডাক্তারি করবে। সেখানে সম্মানও পাবে সর্বোচ্চ। পাবে গবেষণার পরিবেশ। পাবে পৃথিবীর সেরা চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ। ব্যতিক্রম কখনোই উদাহরণ নয়।
ডাক্তারদের নিয়োগ জেলাভিত্তিক নয়, বরং বিচারকদের মতো আলাদা কমিশনের মাধ্যমে হতে হবে।
কার্যকর এবং সুসম চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলা সদর হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক কনসালটেন্ট, সহকারি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করতে হবে। পদবী না পাওয়ার কারণে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে সংক্ষুব্ধ এবং বঞ্চিত অবস্থায় সময় পার করছেন এবং ফলস্বরূপ জনগণও চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছে।
বেতনহীন ডাক্তারি বিলুপ্ত করতে হবে। সরকারি হাসপাতালে রোগীদেরকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য ডাক্তারকে কত বেতন দেয়া হয় আর মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদেরকে ডাক্তার বানানোর জন্য একই চিকিৎসককে আলাদা কত বেতন দেয়া হয়, তা প্রকাশ করা হোক। অতপর মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদেরকে ডাক্তার বানানোর জন্য পাঁচ বছরে শিক্ষার্থীপ্রতি জনগণের ট্যাক্সের টাকার সর্বমোট কত খরচ হয় তা হিসাব এবং ব্যাখ্যাসহ জনসম্মুখে বিস্তারিত প্রকাশ করা হোক। অন্যান্য খাতের শিক্ষার্থীদের সাথে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয়িত জনগণের ট্যাক্সের টাকার তুলনামূলক পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হোক।
ডাক্তারদের জন্য চাকরির প্রথম শ্রেনীতে পদোন্নতি ফিরিয়ে দিতে হবে। ডাক্তারদেরকে অপমানিত করে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির চিন্তা করা দুঃখজনক!
ইন্টার্ণী দুই বছর করলে তার দ্বিতীয় বছরকে স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট দিতে হবে।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন ছাড়াই চাকরির মেয়াদের ভিত্তিতে ডাক্তারদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে অন্যদের মতো।
প্রমাণিত হওয়ার আগে চিকিৎসা `ভুল' হয়েছে বলে কেউ প্রচার করলে বা/ এবং চিকিৎসককে মানসিক বা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করলে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসার ব্যাপারে কারো সন্দেহ হলে বরং ভুল চিকিৎসার 'অভিযোগ' হিসেবে উল্লেখ করা যাবে, ভুল চিকিৎসা হিসেবে নয়।
উন্নত দেশের আদলে চিকিৎসাসেবার প্রাথমিক স্তরে রোগীপ্রতি বিশ মিনিট সময় চাইলে সেসব দেশের আদলে প্রতি আড়াইশত জনগোষ্ঠির জন্য একজন ডাক্তারের ব্যবস্থা করা হোক। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সংখ্যা বর্তমান সংখ্যার নয়গুন বাড়াতে হবে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে বহির্বিভাগে বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আউটডোর মেডিক্যাল অফিসার পদ সৃষ্টি করতে হবে।
পার্সেন্টেজ বা ওষুধ কোম্পানি থেকে অর্থ গ্রহণ বা দালালের সাথে সম্পর্ক থাকার অপরাধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
দালালদের জন্যও উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
মিথ্যা পরিচয় বা মিথ্যা ডিগ্রী ব্যবহার করে যারা বিভিন্ন স্থানে চেম্বার করে বা বিভিন্ন ক্লিনিকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চাকরি করে, তাদের সাজা ছয় মাস নয় বরং কমপক্ষে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ড করতে হবে।
ফার্মেসি ব্যবসায়ি কর্তৃক ভিজিট ফি নেয়া বা টেস্ট করতে দেয়ার অপরাধে অনুরূপ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তারা ভিজিট ফি নেয়ার কে? তারা টেস্ট করানোর কী বোঝে? এমন অরাজকতা বহাল রেখে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি হবে কিভাবে?
ফার্মেসি ব্যবসায়ি কর্তৃক রোগীকে তৃতীয় বা তদূর্ধ প্রজন্মের জীবাণু বিরোধী ওষুধ প্রদান এবং একই সময়ে একাধিক ব্যথানাশক ওষুধ প্রদানের অপরাধে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বিদেশের কোনো ডাক্তার বেআইনিভাবে এদেশে কোথাও ডাক্তারি করলেও অনুরূপ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
'পল্লীচিকিৎসক' শব্দটি বিলুপ্ত করতে হবে। এ শব্দটিও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে কলুষিত করছে! এর পরিবর্তে 'ফার্মেসিব্যবসায়ি' শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
ডা. মোঃ মাকসুদএর উপরের এই লেখা সত্যিই অসাধারণ। বিস্ময়ের ব্যাপার হল, এই পয়েন্টগুলো মহাজোট বা ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে তেমন আসেনি।
আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ইশতেহার
_________________
স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ
দেশের প্রতিটি মানুষের সুস্বাস্থ্য, পুষ্টি সেবা নিশ্চিত করা সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে আগামীর সুস্থ সবল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ জোর দিচ্ছে নারী স্বাস্থ্য সচেতনতা, গ্রামীন মানুষের কাছে উন্নত চিকিৎসাসেবা সুলভ করার ওপর।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা
দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা প্রাপ্তি উন্নত করা হবে।
১ বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের উপরে সকলকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হবে।
সকল বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হার্ট, ক্যান্সার ও কিডনী চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হবে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে অন্তত ১০০ শয্যার স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যান্সার ও কিডনী চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হবে।
সকল ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রচলন করে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে আরো নির্ভূল ও জনবান্ধব করা হবে। অনলাইনে দেশ-বিদেশ থেকে বিশেষায়িত চিকিৎসকের সেবা পাওয়া যাবে।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর ভবনসহ সকল সুবিধা পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা হবে।
আয়ুর্বেদী, ইউনানী, দেশজ ও হোমিওপেথিক চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং আধুনিকায়ন অব্যাহত রাখা হবে।
গ্রামাঞ্চলের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি, সেবার মান বৃদ্ধি এবং উপস্থিতি নিশ্চিত করা
বাসস আরও বলছে,
নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করলে ১ বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের উপরে সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে।
সম্প্রতি হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ঘোষিত ইশতেহার এ কথা জানানো হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করলে সকল বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর ভবনসহ সকল সুবিধা পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে সারাদেশে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামীণ জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা এবং ৩০ প্রকার ঔষধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু এখন ২০০৯ সালের ৬৬.৮ বছর হতে ৭২.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে।
ঐক্যফ্রন্ট স্বাস্থ্য ইশতেহারে যা বলছে
________________________
স্বাস্থ্য
* দেশের সকল ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহ স্বাস্থ্যক্যাডারের একজন সরকারী কর্মকর্তার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
* ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে পর্যায়ক্রমিকভাবে ৫০ শয্যাবিশিষ্টে রূপান্তর করা হবে।
* সকল জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ স্থাপনপূর্বক ৫০০ শয্যার হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে।
* সকল জেলায় ২০ শয্যাবিশিষ্ট ঈঈট, ২০ শয্যার ওঈট, ১০ শয্যার ঘওঈট স্থাপন করা হবে।
* পুরাতন ২১ জেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিক একটি করে ২০ শয্যার কিডনী ডায়ালাইসিস সেন্টার এবং একটি করে ক্যান্সার কেমোথেরাপী সেন্টার গড়ে তোলা হবে এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে তা সকল জেলায় প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হবে।
* গ্রামীণ জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দেবার লক্ষ্যে সকল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এক বৎসর ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করে এক বছর প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে।
* সকল বড় ও জেলা শহরে জেনারেল প্রাকটিশনার প্রথা চিকিৎসা সৃষ্টি করে দ্রুত যথাযথ চিকিৎসার জন্য রেফারেল ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। মেট্রোপলিটন শহরে সকল নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক জেনারেল প্র্যাকটিশনার পদ্ধতি চালু করা হবে। সকল নাগরিক একজন স্থানীয় জেনারেল প্র্যাকটিশনার এর সাথে নিবন্ধিত থাকবেন। জেনারেল প্র্যাকটিশনার রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেবেন এবং প্রয়োজন মাফিক রোগীকে জেনারেল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে রেফার করবেন। জেনারেল প্র্যাকটিশনার ক্লিনিকে পূর্ণ প্রাথমিক চিকিৎসা পরিচর্যা ও রোগ নির্ণয়, ৫০টি অতীব প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ ও ফিজিওথেরাপীর ব্যবস্থা থাকবে। কেন্দ্রীয় বাজেটে জেনারেল প্র্যাকটিশনার পদ্ধতি প্রচলনের জন্য পর্যাপ্ত বার্ষিক বরাদ্দ থাকবে।
* তিন মাসের মধ্যে ঔষধ এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার খরচ নির্ধারণ করে সেটা প্রয়োগের মাধ্যমে এসব খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমানে কমানো হবে।
* এনজিও ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহের সক্রিয় সাহায্য সহযোগিতায় সকল রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থা, পরিবার পরিকল্পনা ব্যাপক প্রসার, নিরাপদ পানীয় ও পয়:প্রনালী, অসংক্রামক রোগের বিস্তার রোধ ও শতভাগ গর্ভবতীর সেবা প্রচলন ও অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান প্রসব রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংগে স্থানীয় ধাইদের অব্যাহত প্রশিক্ষন দিয়ে নিজ বাড়ীতে নিরাপদ প্রসব চেষ্টা বিস্তৃত হবে।
* অংগ প্রতিস্থাপন আইন সংস্কার করা হবে যাতে কোন সুস্থ ব্যক্তি স্ব-ইচ্ছায় নিজের একটি অংগ বা অংগের অংশবিশেষ দান করতে পারেন স্ব-ইচ্ছায় অংগ দান ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হিসাবে গণ্য করা হবে। অংগ দানকারীকে সরকার বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন।
* বেসরকারি পর্যায়ে একজন সার্জনকে ৫০,০০০ টাকা অপারেশন ফি দেবার পরও অংগ প্রতিস্থাপন দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকায় করা সম্ভব হবে। উন্নত মানের চোখের ফ্যাকো সার্জারী ১৫,০০০ টাকায় এবং ৩০-৪০,০০০ টাকায় হৃদরোগের স্টেন্ট স্থাপন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত মুনাফা করতে পারবেন। স্বাস্থ্য খাতে লাগামহীন মুনাফা অকল্পনীয় র্দূনীতির সমতুল্য। সুতরাং এই সকল ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারন করে দেবেন সরকার বিজ্ঞ নি:স্বার্থ পেশাজীবি ও বিশিষ্ট নাগরিক কমিটির মাধ্যমে।
* বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অত্যাবশ্যকীয় ৪০০ অনধিক ওষুধের কাঁচামালের আমদানী শুল্কমুক্ত করা হবে। দেশে উৎপাদিত কাঁচামালের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকা বহির্ভূত ওষুধের উৎপাদন ও আমদানির উপর ২৫% শুল্ক ধার্য্য হবে। ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য অধিকতর প্রণোদনা দেয়া হবে। দেশের প্রধান ৫০টি ওষুধ ফরমূলেশন কোম্পানী কমপক্ষে দুটি করে কাঁচামাল উৎপাদনে বাধ্য থাকবেন, যাতে ওষুধের কাঁচামালের জন্য বিদেশ নির্ভরতা কমে এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে নামমাত্র সুদে অর্থায়নের সুবিধা দেয়া হবে এবং সকল কেমিকেলস আমদানী শুল্ক, ভ্যাট ও অগ্রীম আয়কর মুক্ত হবে।
* সরকারী হাসপাতালসমূহে ক্যান্সার ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারী এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানী লিমিটেডের অপর একটি ইউনিট দ্রুত স্থাপন করা হবে চট্টগ্রামে।
* এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানী লিমিটেডের কোম্পানীর উৎপাদিত সকল ওষুধ উন্মুক্ত বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া হবে যাতে জনসাধারন সরকারী হাসপাতালের বাইরে উন্নত মানের ওষুধ সুলভে কিনতে পারেন। প্রতিযোগিতার কারনে ওষুধের বাজারে মূল্য স্থিতি আসবে।
* দেশের সকল খুচরা ওষুধের দোকানে ছয় মাস মেয়াদে বিশেষ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ন্যূনতম এইচএসসি পাশ দুইজন ওষুধ বিক্রেতা এবং ডিপ্লোমা ফার্মাসিষ্টকে রাখা বাধ্যতামুলক করা হবে যাতে ওষুধের ভুল প্রয়োগ কমে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে রোগীরা সচেতেন হন।
* জেলা শহরের বিশেষায়িত হাসপাতাল সমূহে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার জন্য স্থানীয়ভাবে সরাসরি মনোনীত ২০০ জন আগ্রহী বিভিন্ন উদীয়মান বিশেষজ্ঞদের রাজধানীর বিভিন্ন সরকারী বিশেষায়িত হাসপাতালে দুই বৎসর সার্বক্ষনিক প্রশিক্ষন দিয়ে দায়িত্ব নেবার জন্য প্রস্তুত করা হবে।
* শারীরিক সুস্থতা থাকলে এ সকল বিশেষজ্ঞদের অবসর বয়স হবে ৭০ (সত্তর) বৎসর। সকল বিশেষজ্ঞদের বিনে ভাড়ায় হাসপাতাল সংলগ্ন বাসস্থান এবং বিশেষ বেতন ভাতা দেয়া হবে।
* শহরের বিশেষায়িত হাসপাতালের বিশেষজ্ঞগণ নিজ নিজ হাসপাতালে বিকেলে প্র্যাকটিস করতে পারবেন। সকল সরকারী চিকিৎসকদের প্রাইভেট হাসপাতালে প্রাইভেট প্রাকটিশ নিষিদ্ধ করা হবে।
* নার্সিং শিক্ষার সংস্কার করা হবে। তিন বৎসর মেয়াদী ডিপ্লোমা নার্সিং কোর্সে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা এসএসসি পাশ (জিপিএ ২.৫) এবং সেবার মনোবৃত্তি। সকল প্রশিক্ষনরত: নার্সগণ ন্যূনতম ৬ মাস উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সার্বক্ষনিক ভাবে অবস্থান করে শিক্ষা নেবেন। এ সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রশিক্ষনার্থী নার্সদের জন্য ২৫০০ বর্গফুটের ডরমিটারী নির্মান করা হবে।
* সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সহায়তা এবং প্রতিবন্ধী ও বয়োবৃদ্ধদের সেবার জন্য অতিরিক্ত একলাখ ডিপ্লোমাধারী নার্স, ২৫,০০০ টেকনিসিয়ান এবং ৫০,০০০ ডিগ্রীধারী ফিজিওথেরাপীস্ট ও ১০০,০০০ সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ফিজিওথেরাপী সহকারীর প্রয়োজন রয়েছে। মেধার ভিত্তিতে এমবিবিএস অধ্যায়নরত দরিদ্র পরিবারের ছাত্রদের জন্য ১০% বৃত্তির ব্যবস্থা থাকবে। সরকারী মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের টিউশন ফি ও হোস্টেল ভাড়া বাড়িয়ে যৌক্তিক হারে নির্ধারিত হবে।
* প্রত্যেক মেডিকেল ছাত্র ৫ (পাঁচ) বৎসর অধ্যায়নকালে ন্যূনতম দু’বার এক মাস করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে অবস্থান করে প্রশিক্ষন নেবে এবং গ্রামের সাথে পরিচিত হবেন।
* সকল নবীন চিকিৎসক ন্যূনতম দুই বৎসর উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত থাকার পর উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন। মফস্বলে ন্যূনতম বৎসর চিকিৎসা না দিয়ে কোন চিকিৎসক উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হতে পারবেন না। বেসরকারী চিকিৎসকদের বেলাতে একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
* ১৯৯০ সনের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির আলোকে জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে যার একজন নির্বাচিত চেয়ারপারসন থাকবেন এবং জেলা সিভিল সার্জন হবেন নির্বাহী ভাইস চেয়ারপারসন। জেলায় কার্যরত সকল চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থাপনা এই কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত হবে।
* জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে নতুন সকল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সাধারন চিকিৎসকদের মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেবেন। প্রত্যেক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের জন্য প্রাথমিক ভাবে দুজন নবীন চিকিৎসককে জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষনিকভাবে নিয়োগ দেবেন। অদূর ভবিষ্যতে আরও একজন নবীন চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়া হবে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের চিকিৎসকরা কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত যেয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষন দেবেন, তাদের চিকিৎসা পর্যালোচনা করবেন এবং রেফারেল রোগীদের পরামর্শ ও চিকিৎসা দেবেন।
* জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ পরিচালনায় প্রত্যেক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে চিকিৎসক ও ইর্ন্টানদের ও মেডিকেল ছাত্রদের বাসস্থান এবং ক্লাসরুম ও ডরমিটরীর জন্য অন্যূন ৫০০০ (পাঁচ হাজার) বর্গফুটের স্থাপনা তৈরী করা হবে জরুরী ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় বাজেটের বিশেষ বরাদ্দে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে কর্মরত নার্স ও টেকনিশিয়ানদের জন্য অনধিক ৩০০০ বর্গফুটের বাসস্থান ও ডরমিটারী নির্মান করা হবে।
* ৫ বৎসর ইউনিয়ন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র সার্বক্ষনিক ভাবে কর্মরত থাকার পর নবীন চিকিৎসকগন সরকারী অর্থায়নে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন। উচ্চ শিক্ষার পর তারা স্ব স্ব জেলার বিশেষায়িত হাসপাতালে সহযোগী বিশেষজ্ঞ পদ পাবেন। কয়েক বৎসর পরপর ক্রমে নবীন বিশেষজ্ঞ সিনিয়র বিশেষজ্ঞ, প্রধান বিশেষজ্ঞ পদে উন্নীত হবেন।
* জেলা শহর গুলোতে বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে নতুন কোন সরকারী বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে না।
* স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় শৃংখলা নিশ্চিত করনের জন্য একজন ‘‘ন্যায়পাল’’ থাকবেন। তার অধীনে কতক বিজ্ঞানী, পরিসংখ্যানবিদ, ফার্মাকোলজিষ্ট, ফার্মাসিষ্ট, মাইক্রোবায়োলজিষ্ট ও ইপিডিমিওলজিস্ট থাকবেন যারা নিয়মিত ওষুধের অপপ্রয়োগ রোধে ব্যবস্থাপত্র নিরীক্ষা এবং সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীর মৃত্যুর খতিয়ান নিয়মিত পরীক্ষা করে জনসাধারনকে ফলাফল অবহিত করবেন।
* ন্যূনতম প্রিমিয়ামের ভিত্তিতে সকল কৃষক-শ্রমিকের জন্য স্বাস্থ্যবীমা নিশ্চিত করা হবে।
* স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির বর্তমান বরাদ্দ .৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৩ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। দ্রুত যেন সেটা কমপক্ষে ৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যায়।
আপনার মতামত দিন: