Ameen Qudir
Published:2018-12-20 03:26:48 BdST
বাংলাদেশের প্রথম মেডিকেল রিসোর্ট হচ্ছে নৈসর্গিক শ্রীমঙ্গলে
ডেস্ক
______________________
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বমানের নানা মেডিকেল সুবিধা মিলবে এই দেশেই। সে লক্ষে নানা রকম কার্যক্রম চলছে মেডিকেল নানা সেকটরে।
এবার যোগ হল মেডিকেল রিসোর্ট। এই সেবার ধারণাই অনন্য এবং অন্য রকম।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নৈসর্গিক সৌন্দর্যবেষ্টিত এলাকায় নির্মাণের কাজ জোর কদমে চলছে। রিসোর্টটি গতানুগতিক কোনো বৃদ্ধাশ্রম নয়; বরং এক সপ্তাহ থেকে টানা ত্রিশ বছর অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এ রিসোর্টে থাকতে পারবেন জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এই কর্মযজ্ঞে যুক্তরা বলছেন, বাংলাদেশে পুরুষের গড় আয়ু ৭০ এবং নারীদের গড় আয়ু ৭২ বছর। তবে অনেকেই ৮০ থেকে ৯০ বছরও বেঁচে থাকছেন। দেশে বর্তমানে ষাটোর্ধ্ব প্রবীণের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি, যা মোট জনসংখ্যার শতকরা সাত ভাগ এবং প্রবীণদের সংখ্যা বৃদ্ধির এই হার গড় জন্মহারের চেয়েও বেশি। প্রতি বছর ৪ দশমিক ৪১ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রবীণের সংখ্যা। সেই ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালে দেশে ষাটোর্ধ্বের সংখ্যা দাঁড়াবে সোয়া দুই কোটি এবং ২০৫০ সালে তা চার কোটিতে উন্নীত হবে। এতে বাড়বে বার্ধক্যজনিত ব্যাধি, শারীরিক অক্ষমতা ও নানা অসুখ। সন্তানদের পেশাগত ব্যস্ততা বা প্রবাসে অবস্থানের ফলে প্রবীণদের একাকিত্বের কারণে শারীরিক ও মানসিক রোগ দুটিই বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। এমনই প্রেক্ষাপটে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠছে এ মেডিকেল রিসোর্ট।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, উন্নতমানের এ রিসোর্টে থাকবে ১০০টি নিরাপদ আবাসন, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল, খোলা মাঠ, জলরাশি আর সবুজের সমারোহ। প্রয়োজন অনুসারে জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা এখান থেকে সেবা নিতে পারবেন। অসুস্থতা, আহত, ডিমেনশিয়া বা বয়সের সঙ্গে আসা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ অবসর কেন্দ্রটি সহায়তা করতে পারে। ষাটোর্ধ্ব প্রবীণরাই কেবল এখানে থাকার সুযোগ পাবেন। এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে টানা ত্রিশ বছরের জন্য থাকা যাবে। অবসরের ব্যাপ্তিকাল অনুযায়ী নির্ধারিত হবে 'ফি'।
'অবসর' প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান বলেন, এ উদ্যোগটা মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। যদিও তার নিজেরও এ ধরনের একটা রিসোর্ট করার স্বপ্ন ছিল। ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে সরকারে থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বর্তমান মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ৫ বছর আগে থেকে প্রস্তুতি চলছিল। সর্বশেষ ২০১৭ সালে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পেয়েছে। কাজ চলছে। ২০২০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রকল্পটি শেষ হতে পারে বলে তারা আশা করছেন।
কর্মকর্তারা জানান, এটি গতানুগতিক কোনো বৃদ্ধাশ্রম বা প্রবীণ নিবাস নয়। বৃদ্ধাশ্রমে সারাজীবনের জন্য বাবা-মাকে রেখে যাওয়া হয়। এখানে সেরকম নয়। প্রবীণরা চাইলে চুক্তির মেয়াদের মধ্যবর্তী যে কোনো সময়ে ইচ্ছানুযায়ী কোথাও যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে খাবারের জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। খাবারের আর্থিক মূল্য পৃথকভাবে নির্ধারিত হবে, যে ক'দিন থাকবেন না সে সময়ের খাবারের মূল্যও পরিশোধ করতে হবে না। পুরুষ এবং নারীদের জন্য পৃথক ব্লক থাকবে। আবার প্রবীণ স্বামী-স্ত্রীর জন্য নির্মিত হবে বিশেষ কটেজ। পাঠাগারে বই পড়া, ওয়াকওয়েতে হাঁটা কিংবা বাগান করার শখও পূরণ করতে পারবেন 'অবসর' মেডিকেল রিসোর্টের বাসিন্দারা।
তিনি বলেন, প্রবীণদের জন্য বিশেষায়িত মেডিকেল রিসোর্ট হলেও এখানে অন্যান্য দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও থাকতে পারবেন। সে জন্য আলাদা কটেজের ব্যবস্থা থাকবে। রিসোর্ট ব্যবস্থাপনা টিম একটি সমন্বিত, ঘরোয়া, নন-মেডিকেল এবং ব্যক্তিগত সেবা প্রদানে হবে বদ্ধপরিকর।
আপনার মতামত দিন: