Ameen Qudir

Published:
2016-12-16 16:14:07 BdST

মেয়েটার সবই ভাল: শুধু একটাই দোষ


     

 

 

 

 


ডা. নাসিমুন নাহার
___________________________________

মেয়েটার সবকিছুই ভালো শুধু একটাই দোষ। মেয়েটা শুধু 'মেয়ে মানুষ' না হয়ে 'মানুষ' হতে চেয়েছিল।

মেয়েটা রান্নাবান্না সেলাই ঘর গোছানো না শিখে কষে শিখেছিল লেখাপড়া।মেয়েটা গার্লস স্কুলের ছাত্রী হয়েও বছর শেষে জেনে নিত জেলা স্কুলের ফার্স্ট বয় তার থেকে বেশি নম্বর পেল কি না ?

মেয়েটা বিতর্ক গান আবৃত্তি ছবি আঁকাতে ভুরি ভুরি পুরষ্কারে ড্রইংরুম সাজিয়ে ফেলেছিল।কিন্তু মেয়েটা শিখতে ভুলে গিয়েছিল মেয়েলি ছলাকলা।

মেয়েটা শিশুবেলা থেকেই জেনে এসেছে ছেলেতে মেয়েতে পার্থক্য শুধু পোশাকে।ব্রেইন এবং বিবেকবোধ নীতিবোধ জীবনবোধে সব্বাই শুধুই মানুষ।

অবশ্য এখানে মেয়েটির ভূমিকা খুব বেশি কিছু না।মেয়েটির বাবা তার সন্তানকে মেয়ে নয়, একজন মানুষ হিসেবেই বরাবর মূল্যায়ন করেছেন এবং সমস্ত সুযোগ সুবিধা কখনও আশেপাশের কোন ছেলের থেকে কম দিয়ে লালন পালন করেননি।
রাজা না হয়েও আমাদের সমাজে অনেক বাবাই মেয়েকে নিজের সাধের মধ্যে এবং চোখের জল মুছতে মুছতেই লিখছি- বাবারা বেশিরভাগ সময় সাধ্যের বাইরে যেয়ে কন্যাকে রাজকন্যার মতো যত্ন করেন ( প্লিজ আজকে কোন ব্যতিক্রম বাবার কথা শুনতে চাই না)।

কিন্তু বাবারা ভুলে যায় তাদের রাজকন্যারা সব সময় রাজপুত্রের হাতে হাত রেখে পাশাপাশি নাও চলতে পারে। সব রাজপুত্র ই বাবাদের রাজকন্যাকে রানীর মতো করে ট্রিট করতে 'শেখে না'-'জানে না' কিংবা বলা যায় 'পারে না'।

বাবার মতো কেউ হয় না..........একজন মেয়ের জন্য।

প্রতিটি 'স্বপ্নবাজ' মেয়ের জীবনে দুজন মানুষ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
একজন যার কাছে মেয়েটি রাজকন্যা---বাবা।
আর একজন যার কাছে মেয়েটি বন্ধু/সঙ্গী---স্বামী।

জীবনে সাফল্য পেতে হলে , স্বপ্ন কে ছুঁয়ে দিতে হলে একজন মেয়ের জীবনে এই দুই পুরুষের অবদান কখনোই অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই।আমাদের অদ্ভুত সমাজে তা আরো বেশি।একজন ধনী/শিক্ষিত বাবার থেকেও অনেক বেশি মূল্যবান একজন সাপোর্টিভ বাবার।একজন উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন ধনবান গুনবান রূপবান (আমার আত্মীয়স্বজন এবং মেডিকেলের বন্ধুরা এবং স্পাইরা :-P যারা আমার আইডিতে আছ নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ what I mean) স্বামীর থেকেও অনেক জরুরী একজন সহমর্মি সহনশীল যত্নবান দায়িত্বশীল স্বামী।

আমার মা সাধারণ একজন হোমমেকার।কিন্তু আমাদের পরিবারে আম্মু পুরাই রাজরানী অবস্থানে অবস্থিত।কারন সেই পিচ্চিবেলা থেকেই দেখে এসেছি আব্বু সেভাবেই তাকে মূল্যায়ন করে।আমাদের কোন ভাই নাই।কিন্তু এজন্য কোনদিন আমার আব্বুকে এক সেকেন্ডের জন্যও আফসোস করতে দেখি নাই।বরং এখনও আমার আব্বু আমাদেরকে মাথা উঁচু করে বুকে দিয়ে আগলিয়ে রেখেছেন, আমরা বোনেরা সবাই নিজ লক্ষ্যে পৌঁছে যাবার পরেও।

অথচ এমন অনেক উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে দেখেছি যারা অফিসে দাপিয়ে বেড়ালেও নিজ ঘরে ঘুটে কুড়ানীর জীবন কাটান।এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে এখনো মেয়েদেরকে শুধুই সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র মনে করা হয়।এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে বাবারা মা'দেরকে সন্তানের সামনে নীচু দেখিয়ে নিজের পুরষত্বের প্রমাণ রাখেন।এই পরিবারে বেড়ে ওঠা ছেলে সন্তানটি কখনোই I repeat কখনোই মেয়েদের সম্মান করতে শেখে না।শুধুমাত্র পরিবেশগত কারনে এই ছেলেটি যখন কোন এক বাবার রাজকন্যার জীবনে প্রবেশ করবে তখন সে পারবে না মেয়েটিকে সঙ্গী/ বন্ধুর মতো করে গ্রহণ করতে।কারন বেচারা ছেলেটা তো জানেই না- মেয়ে মানুষ শুধু বংশ বৃদ্ধির যন্ত্ররপাতি না,মেয়েটির শরীরে জরায়ুর বাইরেও ব্রেইন এবং হার্ট নামক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আছে। মেয়েটাও আস্ত একটা মানুষ, একজন বাবার কলিজার টুকরা, একজন ভাইয়ের মাথার মনি।

মেয়েদের জীবনটা বড়ই অদ্ভুত।
ছোটবেলায় ঝলমল করে মুঠো মুঠো আনন্দে ভরিয়ে দেয় বাবার কোল, ভাইয়ের বুক-
বাবার বাড়ি।
বড়বেলায় অপরিসীম মায়ায় জড়িয়ে ধরে স্বামী সংসার- শ্বশুড়বাড়ী।
বৃদ্ধ বয়সে ছেলে/ মেয়ের সংসার আগলিয়ে কাটিয়ে দেয় আস্ত একটা মানব জীবন।

নিজের পরিচয় ভেসে যায় অমুকের বড় মেয়ে, তমুক বাড়ীর ছোট বৌ, ডাক্তারের/ইন্জিনিয়ারের বৌ ভাবী/অমুকের মা/তমুকের দাদী/নানী..............দের ভিড়ে।

কখন..........কোনবেলায় যে হারিয়ে যায় সেই স্বপ্নবাজ মেয়েটি----- যে মানুষ হতে চেয়েছিল, মেয়ে মানুষ নয়।

___________________________

 

 

লেখক ডা. নাসিমুন নাহার।
হাজারো পাঠকের মন জয় করা লেখক। লোকসেবী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়