Ameen Qudir
Published:2018-11-21 22:57:20 BdST
কবি ভাস্কর সাহা: সফল শিক্ষক : সফলতম অধ্যক্ষ : লোকপ্রিয় চিকিৎসক
ডা. শিবলী সোহেল আবদুল্লাহ।
______________________________
ভাস্কর সাহা। তার কোন পরিচয়ের কথা বলব। তিনি একজন কবি। নিভৃত কথাশিল্পী। তিনি সর্বপ্রিয় লোকপ্রিয় চিকিৎসক। তিনি সফল শিক্ষক। তিনি সফলতম অধ্যক্ষ। বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের ইতিহাসে এ পর্যন্ত তার চেয়ে সফল ও সুযোগ্য অধ্যক্ষ আর কেউ আসেন নি।
একথা আমার নয়। একথা সকলের। এই বিশাল দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালনের পর এখন তিনি বিদায় নিচ্ছেন। সেই বিদায় সংবর্ধনায় সকলেই একবাক্যে স্বীকার করলেন তারশ্রেষ্ঠত্বের কথা।
বক্তারা বলেন ,
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে সফল ও সার্থক অধ্যক্ষের তালিকা হলে সকলের শীর্ষে থাকবেন অধ্যাপক ডা. ভাস্কর সাহা। অধ্যক্ষ হিসেবে প্রশাসনিক দক্ষতা,ছাত্র শিক্ষকসম্পর্ক; ছাত্র ও শিক্ষকদের অভিভাবকত্ব , সেবামুখী মনোভাব আর চিকিৎসা সেবায় তিনি সবার ওপরে। কবি, সাহিত্যিক হিসেবেও অর্জন করেছেন অসামান্য খ্যাতি। লোকপ্রিয় লোকসেবী ডাক্তার হিসেবে ভাস্কর সাহা নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান।
হায় আগামী তুমি কতো দূর?
________________
ওদিকে অধ্যাপক ডা. ভাস্কর সাহা স্যার তার বিদায় উপলব্ধিতে লিখিত ভাষ্যে জানান,
"ছোট্ট এ জীবন নদী।খলবলিয়ে চলতে চলতে একদিন সে থেমে যায়। জোয়ারে তার আনমনা মোহগ্রস্থ রূপ! নাগীনের মতো ফূঁসে উঠে কখনো সে ভেঙে দেয় দু কুলের গার্হস্থ্য জীবন, বিছিয়ে চলে তার অন্তঃসলিল স্রোত, ভাটায় সে থির, জটাধারী সন্যাসী। এভাবেই এপিট ওপিট করে কালের স্রোতে ভাসতে থাকে নদীর খন্ডকালীন জীবন। ভাসতে ভাসতে সে ছুটে চলে অজানায়। বিদ্ধ চরের যন্ত্রনাগুলো তাকে দহন করতে থাকে অবিরত। তবুও উজানের আশায় সে মুখ বুঝে থাকে বালির বুকে। উজান আর আসে না। একদিন বিদ্ধ চরের বুকে গজিয়ে ওঠে ঘাস আর তখনই মনে হয় মহাকালের কাছ থেকে ঋন নিয়ে একদিন বিন্দু হয়ে এসেছিল সে সুন্দর পৃথিবীতে। নেশায় নেশায় কেটে গেছে তার তামসিক জলের জীবন। শোধ করা হয়নি কিছুই। অভিশপ্ত এ নদীর কুলে আর কোনদিন ভিড়বে না পানসি নাও। মানে খুঁজে না পাওয়া জলের জীবন তখন শুধু এক ধূঁ ধূ্ মরুভুমি যার ক্ষয় আছে বৃদ্ধি নেই কোনও।
শ্রীহীন কঙ্কালসার এ জীবন নিয়ে কি করবে সে? কি জবার দেবে সে মৃত্যুর কাছে? কে নেবে তার ইহকালের যাবতীয় পাপের ভার? শূন্য খাঁচায় বসে ভাবতে থাকে সে তার আগামী ঝর্ণা জীবনের কথা।
হায় আগামী তুমি কতো দূর? "
গত সোমবার বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে দীর্ঘ দায়িত্বপালন শেষে বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। ২২ নভেম্বর সরকারি চাকুরী থেকে অবসরে যাবেন তিনি।
২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারী তিনি শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। টানা প্রায় ৪ বছর তিনি অধ্যক্ষ ছিলেন। সোমবার শেবাচিমের মেডিসিন বিভাগের আয়োজনে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ ভাস্কর সাহা ছাড়াও অধ্যাপক ডাঃ এইচ এন সরকারকে বিদায়ী সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ ভাস্কর সাহা ও অধ্যাপক ডাঃ এইচ এন সরকার কে চাকুরী জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে বিদায়ী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বিএমএ কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি ও জেলা স্বাচিপের সভাপতি ডাঃ মুঃ কামরুল হাসান সেলিম, বিএমএ বরিশাল জেলার সভাপতি ডাঃ মোঃ ইসতিয়াক হোসেন, শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ এসএম সরওয়ার, বিএমএ জেলা সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মনিরুজ্জামান, ডাঃ অসীম কুমার সাহা, অধ্যাপক ডাঃ এসএম নজরুল ইসলাম, ডাঃ বিপ্লব কুমার দাস, ডাঃ জাকির হোসেন, ডাঃ প্রদীপ কুমার বনিক, ডাঃ শিখা সাহা, ডাঃ মাসুম আহম্মেদ, ডাঃ অমিতাভ সরকার সহ সকল বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রেজিষ্টার এবং সহকারী রেজিষ্ট্রাররা।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ ভাস্কর সাহা ১৯৫৯ সালের ২২ নভেম্বর ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিনের পদ্মামনসা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা স্বর্গীয় বলহরি সাহা ও মাতা কমলা বালা সাহার পরিবারের ৬ ছেলে মেয়ের মধ্যে কনিষ্ট ভাস্কর সাহা। তার পিতা স্বর্গীয় বলহরি সাহা ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রকর ও নাট্যাভিনেতা। মাত্র ৪ বছর বয়সে বরিশালে ভাস্কর সাহার পদার্পণ। ভাটিখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর বিএম স্কুল ও বিএম কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ১৯৭৯ সালে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে ১০ ব্যাচে ভর্তি হন তিনি। এ কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে এমবিবিএস পাশ করেন। ১৯৮৬ সালে বাউফলের কালিশুরু উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে তার সরকারি চাকুরী জীবন শুরু। এরপর ১৯৯০ সালে গলাচিপা, পরে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চাকুরী করেন। সেখান থেকে শেবাচিমের প্যাথলোজী বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করে ছিলেন কিছু দিনের জন্য। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে বদলী হন তিনি। এরপর ১৯৯৯ সালে এফসিপিএস পাশ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ করেন। পদোন্নতি নিয়ে আসেন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের আরপি হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে তাকে বরিশাল সদর হাসপাতালে কনসালটেন্ট পদে নিয়ে আসা হয়। এরপরই ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধু’র আদর্শের সৈনিক হওয়ার অপরাধে ক্ষমতাশীন চার দলীয় জোটের ষরযন্ত্রের শিকার হন ডাঃ ভাস্কর সাহা। তাকে বরগুনায় হয়রানী মূলক বদলী করা হয়। ২০০৮ সালে তিনি বানারীপাড়া পরে বরিশাল সদর হাসপাতালে বদলী হন। ওই বছরের শেষের দিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নিয়ে মেডিসিন বিভাগে যোগদান করেন।
২০১৩ সালেই এই মেডিকেল কলেজে তিনি সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি ও পরে অধ্যাপক (চঃদাঃ) হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারী তিনি এই কলেজের অধ্যক্ষ হন এবং ২০১৬ সালে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। এই মাঝে ৮০ দশক থেকেই তিনি বিএমএ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সাথে যুক্ত হন। ছোট বেলা থেকেই তার লেখালেখির অভ্যাস ছিলো। কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থাতে দেয়াল পত্রিকায় লেখা লেখি করতে তিনি। এরপর শিক্ষা জীবন শেষ করার পর থেকেই যুক্ত হন কবিতা আর রম্য রচনা লেখালেখিতে। তিনি ২০১৬ সালে মন মৃত্তিকা কাব্যগ্রন্থ বইটি প্রকাশ করেন। ২০১৭ সালে কালের দ্বৈরর্থ ও আপন সুতার মালা (ট্রিওলেট গুচ্ছ) প্রকাশ করেন। ২০১৮ সালে জাগতিক জ্যামিতি ও আরোপিত আচ্ছাদন প্রকাশ করেন। আগামী বছর তিনি আরো তিনটি বই প্রকাশ করতে যাচ্ছেন। অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ ভাস্কর সাহা সোসাইটি অব মেডিসিন’র আজীবন সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও চিকিৎসা গবেষনা পরিষদের সদস্যের স্বীকৃতি লাভ করেছেন। অবসরের পর তিনি বরিশালের একটি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের সাথে যুক্ত হবেন বলে জানা গেছে।
তথ্যসূত্র: ভাস্কর সাহার জীবনী ।
আপনার মতামত দিন: