Ameen Qudir
Published:2018-10-30 16:54:32 BdST
তখন মধ্যরাত: "ভাই, একটু অ্যাটেসটেড করা লাগতো"
ডা. রাজীব দে সরকার
__________________________
রাত ১১টা ৪০ এর মতো হবে।
সার্জারী অ্যাডমিশন রুমে বসে আছি। সারাদিনের অ্যাডমিশন ব্যস্ততায় অনেক ক্লান্ত। অনেকগুলো ইমারজেন্সী সার্জারী করেছি।
এর মধ্যে আরো একটা জরুরী রোগী এলো। রোগীর অবস্থা বেশ খারাপ। আমি রোগী দেখছি। রোগীর হিস্ট্রি নেবার সময় খেয়াল করলাম এক ২০/২১ বছর বয়সী ছেলে আমাদের রুমে ঢুঁকলো।
"ভাই, একটু কথা ছিলো"
আমি তেমন কোন রেসপন্স করলাম না। খারাপ রোগীটার দিকেই মনোনিবেশ করে আছি।
রোগী দেখে শেষ পেছনে ঘুরতেই ছেলেটি আমাকে আবার অ্যাপ্রোচ করলো,
"ভাই, একটু অ্যাটেসটেড করা লাগতো"
আমি স্বভাবতঃই বললাম, "এতো রাতে?"
"জ্বী সারাদিন একটু ব্যস্ত ছিলাম, সময় পাইনি।"
"দেখুন, এখানে তো আমি জরুরী রোগী দেখছি। জরুরী রোগীদের রুমে সত্যায়িত করা কী ঠিক?"
"ভাই করে দেন, খুব দরকার"
আমি আর কথা বাড়ালাম না। আবহমান কাল ধরে রণে-বনে-জংগলে-পথে-প্রান্তরে ডাক্তাররাই বাংলার সকল মানুষের সকল কাগজ সত্যায়িত করার দায় নিয়ে রেখেছেন। আমিও তার ব্যতিক্রম নেই।
এক গাদা কাগজ সত্যায়িত করে দিলাম। এরপর ৪টা ছবি সত্যায়িত করে দিলাম। সত্যায়িত স্বাক্ষর দিতে গিয়ে মনে হচ্ছিলো এই রাত ভোর হয়ে যাবে!
যাই হোক, জরুরী রোগী শুইয়ে রেখেই সত্যায়ন প্রক্রিয়া চললো।
ছেলেটি বেরিয়ে গেলো।
মিনিট দুয়েক পর, আবার এলো।
"ভাই, আরো কিছু ছবি ছিলো, যদি এগুলাও করে দিতেন"
লক্ষ্য করলা, ছেলেটার হাতে এক প্যাকেট ভরা পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ওখানে অন্তঃত ১৫/১৬টা ছবি তো আছেই।
"এতো ছবি সত্যায়িত করে কী করবেন এখন" (প্রশ্নটা অবান্তর করে ফেললাম কী না জানি না)
"না, মানে, করায়ে রাখলাম, যদি লাগে কখনো"
রাত সাড়ে বারোটা প্রায়। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। ক্লান্তি চলে গেছে আমার। আমার দেশের সহজ-সরল মানুষগুলোর "একটু বেশী পাবার" ইচ্ছাই আমাদের রাতে ঘুমাতে দেয় না।
তাই বলি,
চিকিৎসকদের মারবেন না।
অন্তঃত মধ্যরাতে সত্যায়িত করার জন্য হলেও এই কসাই সম্প্রদায়ের সুস্থ থাকা প্রয়োজন।
সেবা নিন, সত্যায়িত করান, সুস্থ থাকুন।
__________________________
ডা. রাজীব দে সরকার । সুলেখক।
আপনার মতামত দিন: