জাস্ট স্টপ দিস !

            প্রতিকী ছবি।

ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী
__________________________

বছর চারেক বয়স মেয়েটির।বরিশালের আঞ্চলিক টোনে আধো আধো বুলিতে কথা বলছিল।ওর বাবার বয়স ও নেহায়েৎ ই কম।আমাদের ডিপার্টমেন্টে মেয়ের বয়স পরীক্ষা করাতে এসেছে।কারন জানতে চাইলাম।বাবাটি রূদ্ধ স্বরে বলল,তার পাশের বাড়ীতে এলাকার চেয়ারম্যান থাকেন।চেয়ারম্যানের কাজের ছেলে তার মেয়ের সাথে খারাপ কাজ করেছে।অশ্রুসজল চোখে উনি মেয়েকে বলল,বলো মা তোমার সাথে কি করছে!আমার অনুমতির ধার না ধেরেই আধো বুলিতেই মেয়েটি বলতে শুরু করল কিভাবে ঐ নরপশু তার এতটুকুন ছোট্ট শরীরটাকে.......!!!
চিৎকার করে উঠলাম আমি - just stop it!
দু হাতে মুখ ঢাকলাম।একটু কি কাঁদলাম?বাবা মেয়ে স্তব্ধ!
সামলে নিলাম নিজেকে।নিজেকে শান্তনা দিলাম।ঐ কম বয়সী বাবা টা ইচ্ছে করে মেয়েকে দিয়ে এসব বলাচ্ছে না।হয়ত বা এখন ওর মাথা ঠিকভাবে কাজ করছে না।অথবা থানায় পুলিশদের সামনে বার বার করে মেয়েকে দিয়ে এই কথাগুলি এতটাই বলাতে হয়েছে যে ভেবেছে ডাক্তার ম্যাডামকেও বলতে হবে।তাহলে সঠিক বিচার পাবে!
একটু ভয়ার্ত গলায় মেয়েটির বাবা আবার বলল - ম্যাডাম!ওই ডা একটা শয়তান!চেয়ারম্যানের লাই পাইয়া পাইয়া যা মন চায় কইরা বেড়ায়।কোন মা বুইন ওর যন্ত্রনায় শান্তিতে নাই।।হারাদিন মুবাইল লইয়া আজে বাজে ছবি দেহে আর দলে বলে গাঁজা টানে!!!
আমি যেন ইলেকট্রিক শক খেলাম একটা!!!
শিশু নির্যাতন তথা সমাজে শিশু ধর্ষনের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে।আর এর অন্যতম প্রধান কারন পর্নোগ্রাফী !!!!!!
এই নির্মম ধর্ষনের শিকার এতটুকু কন্যাশিশুর অশিক্ষিত,কম বয়সী,গরীব বাবা নিজেই অজান্তেই নিজে বলে ফেলল,তার কন্যার এত বড় বিপদের কারন কি???
শুধু কন্যা নয়।কামুক লোভী শয়তান গুলো ছেলেদের কেও তাদের ঘৃন্য লালসার শিকারে পরিনত করে।বিচারের আশায় গরীব ,আশাহীন, দিশাহীন পরিবার গুলো দ্বারে দ্বারে দৌড়ে বেড়ায়।প্রতারিত হয়।প্রভাবশালীরা টাকার বিনিময়ে রায় কিনে নেয়।অপরাধীরা দ্বিগুন উদ্যমে নতুন শিকারের পিছনে ছোটে।
শুধু নিম্নবিত্ত বস্তিবাসী নয় ,উচ্চবিত্তদের ঘরে ঘরে, এমনকি সমাজের বিবেক নামে খ্যাত শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের মাঝেও পর্নাসক্তি দিন দিন বেড়েই চলছে।যার ফলশ্রুতিতে আসক্ত ব্যক্তিরা নিজের জীবন সঙ্গী তথা স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত যেমন থাকছে না তেমনি স্ত্রীকে শুধুমাত্র একটা সেক্স অবজেক্ট ভাবার প্রবনতা তৈরী হচ্ছে......হারিয়ে ফেলছে স্ত্রীর প্রতি স্বাধারন শ্রদ্ধাবোধ!পারিবারিক সম্মান ভূলুন্ঠিত হচ্ছে।ভেঙ্গে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন।সৃষ্টি হচ্ছে ভঙ্গুর মানসিকতার কিছু সন্তান - এদেশের ভবিষ্যৎ!ওরাই আবার পর্নাসক্তি বা মাদকাসক্তির লিষ্টে অগ্রগামী থাকবে!!

আমি স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষ।স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর বাংলাদেশের।জানি আমার স্বপ্নের বাংলাদেশের পথটা বড্ড কঠিন।তাই বলে কি স্বপ্ন দেখব না??
আমি স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের নারীগন মেয়ে নয় মানুষ হিসেবে সম্মানিত হবে।আমি স্বপ্ন দেখি দেশের প্রতিটি শিশু সুন্দর জীবন পাবে।আর সকলকে সুন্দর জীবন উপহার দিতে আপনার আমার সকলকেই তো এগিয়ে আসতে হবে!!!

তাই এই মুহূর্তে পর্নোগ্রাফী সাইট গুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাতে আপনার নিজের এবং সন্তানদের ভবিষ্যৎ ভেবে আপনার ভূমিকা কি হবে একবার ভেবে দেখবেন কি?

___________________________

ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী । মেডিকেল অফিসার, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ডাক্তার প্রতিদিনে হাজার হাজার পাঠক পড়ছেন এই লেখকের অনবদ্য লেখা। অনেকেই চোখের জল ফেলছেন।