Ameen Qudir
Published:2018-09-23 16:52:10 BdST
ব্যক্তিগত গাড়িবিহীন দিন এবং কিছু বয়ান
মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
_________________________
২২শে সেপ্টেম্বর চলে গেল ব্যক্তিগত গাড়ি বিহীন দিবস। গণ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, পায়ে হাঁটা এবং সাইকেল চালানোকে উৎসাহিত করতেই এই দিবস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালন করা হয়।
২।রাজধানীতে ঠিক কতটি ব্যক্তিগত গাড়ি আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান বের করা দূরহ। তবে ট্রাফিক জ্যামে আটকানো গাড়ির সারির দিকে তাকালে গণপরিবহনের তুলনায় এর বিরাট সংখ্যার অনুপাত আমাদের শংকিত করে। একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে সচরাচর এক/ দুইজন বিশেষ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচজন উঠতে পারে। কিন্তু,রাস্তার স্থান দখল করে প্রায় একটি বড় গণপরিবহনের অর্ধেকর সমান। ফলে একজন যাত্রী দখল করছে গণপরিবহনের ধারণকৃত প্রায় ২৫ জন যাত্রীর 'Surface Area '। কি ভয়াবহ চিত্র!
৩।আমি পরিচিত এমন কিছু পরিবারকে জানি, যাদের পাঁচটি ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। কর্তাব্যক্তি নিজে একটি গাড়িতে অফিস যান। বেগম সাহেব আরেকটি গাড়িতে পার্টিতে,দুই সন্তান আলাদা আলাদা গাড়িতে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে যায়। বাড়ির কেয়ারটেকার? সূর্যের চেয়ে বালি গরম! তিনি আরেকটি গাড়িতে করে সারা শহরের এই বাজার সেই বাজার ঘুরে সেরা জিনিষটি কিনতে ব্যস্ত। এতগুলি গাড়ি ব্যবহার না করে একটি বা দুটি গাড়ি ব্যবহার করে সমন্বয় করে নেয়াকে এদের কেউ কেউ 'সামাজিক স্ট্যাটাস লুস ' বলেই মনে করেন। এক পরিবারের ৫ জনের জন্য ৫টি গাড়ি। অনুমান করি,এমন পরিবারের সংখ্যা কয়েক হাজার। এই হাজার পরিবার দুইকোটি নগরবাসীর জন্য ট্রাফিকজ্যামকে দু:সহ থেকে অধিকতর দু:সহ করে তুলছে।
৪।যে দূরত্ব সাইকেল চালিয়ে পার হওয়া সম্ভব ট্রাফিকজ্যামে নাকাল হয়ে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যক্তিগত গাড়িতে তারচেয়ে বেশী সময় লাগছে। সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতার শিকার হয়ে অনেক ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক' গাড়িতে চড়বার নেশায় আসক্ত' হয়ে পরেছেন।
৫।ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের প্রতিযোগিতা বন্ধ না করা গেলেও সহনীয়মাত্রায় আনা সম্ভব। গণপরিবহন ব্যবস্থাকে নগরবান্ধব করা, ফুটপাথ দোকানমুক্ত করা, দীর্ঘমেয়াদী ব্যয়বহুল পরিকল্পনা যেমন পাতাল রেল, অধিকতর ফ্লাইওভার নির্মাণ,প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে রাজধানীমুখে মানুষের স্রোত কমানো ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের বিকল্প ভাবতে সহায়তা করবে।
৬।ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার সহনীয় মাত্রায় আনবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা গেলে ট্রাফিকজ্যামও অনেকাংশেই সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব। সীসাবিষেমাখা গ্যাসচেম্বারের এই নগরীতে পরিবেশদূষনও সহনীয় মাত্রায় 'অটোমেটিকভাবে' নেমে আসবে। পদব্রজ বা সাইক্লিং বাড়তি ক্যালরী পুড়িয়ে স্থূলতা,উচ্চ রক্তচাপ,ডায়াবেটিস, বাড়তি কোলেস্টেরলসহ অনেক নীরব ঘাতক ব্যাধিকে 'বাই বাই ' জানাবে।
৭।ঢাকার রাস্তায় এখন মাঝেমাঝে বিএম ডাব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ দেখা যায়। এই ' শো ডাউনের' অপচয় বাঁচিয়ে জনবান্ধব অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব।
৮।তামাম দুনিয়ার বিবেকবান মানুষ যখন ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার কথা ভাবছে তখন বিত্তের প্রদর্শনী আমাদের চিত্তের শুন্যতাকেই প্রকট করে তুলেছে। সহনীয়মাত্রার ট্রাফিকজ্যাম,দূষণমুক্ত নগরী,সবাস্থ্যবান পরবর্তী প্রজন্মের বিনির্মাণের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সহনীয় করতেই হবে। কে করবে? আমি - আপনি সকলেই। কবে থেকে। আজ, ২২ শে সেপ্টেম্বর গাড়িমুক্ত দিবস থেকেই শুরু করা যাক না!!
_____________________________
লেখক মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ;
উপ অধিনায়ক ,
আর্মড ফোর্সেস ফুড এন্ড ড্রাগস ল্যাবরটরী ।
আপনার মতামত দিন: