Ameen Qudir

Published:
2018-09-05 16:34:27 BdST

সন্তানকে ডাক্তার বানানোর জন্য দিনের পর দিন উপবাস,স্বপ্নপূরণের অাগেই কিডনি ফেলিউর


লেখকের উৎসর্গ: "পৃথিবীর সকল মায়েদের উদ্দেশ্যে আমার এই লেখাটা উৎসর্গ করলাম। "
লেখার সঙ্গে একমায়ের প্রতিকী ছবি দেয়া হল। বা/স


ডা.মিথিলা ফেরদৌস
______________________________


আমি একসময় বারডেমের এক প্রজেক্টে বিএসএমএমইউ তে,ডায়ালাইসিসের রুগীর ফলো আপ দিতাম।আমার কাজ ছিলো,ডায়ালাইসিস চলাকালীন রুগীর কি কি সমস্যা হয়,তার সমাধান করে,তা একটা ফরমেটে ফিল আপ করে রাখা।তেমন কোন ব্যাপার না।আমি এই সময় রুগীদের সাথে গল্পগুজব করে সময় কাটাতাম।তারাও খুশি,আমিও। কিন্তু সেই সময়,আমি প্রতিটা রুগীর ব্যক্তিগতজীবনে ঢুকে পরেছিলাম।অনেক কষ্টের ইতিহাস।একটা পরিবার একেকটা কাহিনী।প্রতিটাই করুণ।তারমধ্যে সবচেয়ে করুণ যে গল্পটি, তাই বলতে চাই।(নীচের কাহিনীটি আমার এক রুগীর কাছে শোনা সত্য ঘটনা)!

#নির্জলা_উপবাস

চারটা ডায়ালাইসিস পাওয়ার পরেই মায়ের মৃত্যু। শাখা সিঁদুর পরা সুন্দর টকটকে গৌরবর্নের সুন্দর একজন মায়ের মর্মস্পর্শী কাহিনী শুনলে যে কারো চোখ ভিজে উঠবে।

ছেলে হওয়ার পরে থেকেই মায়ের স্বপ্ন ধ্যানজ্ঞান ছেলে ডাক্তার হবে।সেই আশায় সৃষ্টকর্তার কাছে আকুতি,পুজা পাঠ,সেই সাথে দিনের পর দিন উপবাস।সপ্তাহে পাচ দিন,তাছাড়া বারো মাসে তেরো পাবনেই উপবাস।যেমন এক জন্মাষ্টমীতেই নাকি তিনটি উপবাস।এর মধ্যে একটি নির্জলা উপবাস।যাতে জল পান করা যায়না।এই মা দিনের পর দিন চুপিসারে ছেলের জন্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেকে সমর্পন করেন।

ছেলে নাম করা মেডিকেলে চান্স পেলো,ডাক্তার হলো,বিসিএস হলো।পড়াশুনার তাগিদে মায়ের দিকে কখনও লক্ষ্য করাই হয়ে উঠে নাই।যখন লক্ষ্য করার ফুরসৎ এলো তখন মায়ের এন্ড স্টেজ রেনাল ফেইলিউর।কিছুই করার নেই ডায়ালাইসিস ছাড়া।চারটা ডায়ালাইসিস নেয়ার পরেই মায়ের মৃত্যু। ছেলে ডাক্তার হলো ঠিকই।কিন্তু মা তার পরিপুর্নতাটুকু দেখে যেতে পারলেন না।

দিনের পর দিন পানি না খাওয়ার কারনে কিডনী ফেইলর বলেই স্যারেরা জানালেন।ঘটনাটা সত্য।

করুণ এই ঘটনা,অনেক তথ্যই আমাদের দিয়ে যায়।আমাদের মায়েদের প্রতি আমাদের অবহেলা,মায়েদের সন্তানদের প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ,মায়েদের নিজেদের প্রতি উদাসীনতা।আমার জানামতে অনেকের মা'ই মানত করেন, রোজা রাখেন,উপবাস করেন(ধর্মমত অনুসারে)। আমাদের সকলেরই উচিৎ,মায়ের প্রতি মিনিমাম খোজ রাখা।ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতেছে কিনা,ঔষধ ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা?বছরে একবার হলেও একটা রুটিন চেক আপ।মা"হলেন সংসারে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কিন্তু সবচেয়ে অবহেলিত মানুষ। যিনি নিজেও নিজের যত্ন নেন না,সংসারে কেউই তার খোজ রাখেনা।কিন্তু একবার ভাবুন,এই মানুষ টি না থাকলে সংসারের অবস্থা কি হতে পারে!!

আমি নিজেও পৃথিবীর নিকৃষ্টতম সন্তান।বড় বড় কথা বলছি ঠিকই,নিজেও তেমন খোজ রাখিনা,কিন্তু মা ছাড়া কিছু ভাবতেও পারিনা।আমার 'মা' ও আমার জন্যে প্রায় এমন মানত করেন তাই এই লেখাটা লিখলাম।


____________________________

 

©মিথিলা ফেরদৌস । পেশায় চিকিৎসক। সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়