Ameen Qudir

Published:
2018-09-03 18:36:47 BdST

কক্সবাজার মেডিকেলে ডাক্তার পিতার দেহদান : মহাপূণ্য সাধন করলো তাঁর পরিবার


 

 

ডা. সালাউদ্দিন আহমেদ
_______________________

কিছু মহামানবের অনন্য ত্যাগ মহাকালের
পিঠে মহত্তম ত্যাগের দৃষ্টান্ত রেখে যায়। তেমনই এক মহাদান সাধন করলেন কক্সবাজার শহরের একজন শাদা মনের অমর প্রাণ প্রধান শিক্ষক। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেহ দান করে মানবিকতার অনন্য নজীর রাখলেন। নিজ দেহকে দিয়ে গেলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা ও অগ্রগতির মহত্তম কাজে। এই শহরে এক বিরল নজীর। এই প্রথম এই অঞ্চলের কোন মহামানব এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
কাজটি সহজ ছিল না। এরকম মহত্তম ইচ্ছা দেশের বিভিন্ন শহরের মানুষ এর আগেও পোষণ করলেও মেডিকেল সূত্রে জানা যায়,মরনোত্তর দেহদানকারীর দেহ নিয়ে মৃত্যুর পরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে মৃতের সন্তানেরা দেহ মেডিকেলকেদিতেরাজি হয় না। কাগজে দাতা মেডিকেলকে দেহ দিলেও সন্তানেরা তার ইচ্ছার বিপরীতে গিয়ে কবর দেয়। মৃতের তখন কোন বক্তব্য থাকে না। বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থা , থানা পুলিশ দেহ কবরদানে কোন বাধা দেয় না। পরিবারের ইচ্ছাকেই সহজ বাস্তবায়ন করতে দেয়। তারা মরনোত্তর উইল বাস্তবায়নে শক্ত ব্যবস্থা নেয় না।

কক্সবাজারের এই শিক্ষকের ক্ষেত্রে তেমনিটি ঘটে নি। আশি বছর বয়েসে তিনি মারা গেলে সন্তানেরা পিতার ইচ্ছা বাস্তবায়নে সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে এসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এই মহাপ্রাণের নাম সাধন কুমার পাল।

২৮ আগস্ট রাতে মারা যান তিনি। সাধন পাল কক্সবাজারের রামু উপজেলাধীন ঈদগড় হাসনাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। কর্মজীবনে ছিলেন দেশসেরা কর্মবীর। তিনি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে (শ্রেষ্ঠ শিক্ষকেরমহতী সম্মান পেয়েছিলেন।

এক মানবতামধুর কাহিনি আছে এই দেহদানের নেপথ্যে। তার এক সন্তান একজন মানবতাসেবী চিকিৎসক। তার নাম ডা. বিধান পাল। তিনি কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক । শহরে সজ্জন সর্বজনপ্রিয় ডাক্তার বিধান পাল । যেমন পিতা; তেমনই সুযোগ্য তার সন্তান। ডা. বিধান অশ্রুসজল চোখে জানান,
‘আমি ডাক্তারি পড়েছি। আর ডাক্তারি পড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মানবদেহ সম্বন্ধে জানা। আমি বাড়িতে এসে বাবাকে বললাম, বাবা আমার একটি মানব কঙ্কাল লাগবে, যা অনেক দাম।’ সামান্য বেতনের শিক্ষক বাবা আমাকে বললেন, আমার এত টাকা নেই। কোন সহপাঠির সাহায্য নিয়ে মানবদেহ সম্বন্ধে জেনে নে। পরে তা আমি পুষিয়ে দেব। মৃত্যুর পর আমার দেহ মেডিকেল কলেজে দান করবো।তিনি মরণোওর দেহদান এর অঙ্গীকার করেছিলেন। বিধি অনুযায়ী লিখিতভাবে তার দেহ দান করেন।

পরিবারের সদস্যরা সাধন পালের মৃতদেহ ২৯ আগষ্ট কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দান করেন। মৃতদেহটি গ্রহণ করেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পক্ষে প্রফেসর ডা: মায়েনু।এসময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কক্সবাজার বাসী এই প্রথম কক্সবাজারের শ্রেষ্ঠ সন্তানের দেখা পেল।
এসময় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক, চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা উপস্থিত ছিলেন। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে তত্বাবধায়ক ডা: পু চ নু বলেন, যারা মহান ও মহৎ মানুষ, তারাই পারে দেহদান করতে। সাধন পাল তার দেহ দান করে শুধু মহত্বের পরিচয় দেননি, সাধন স্যার কক্সবাজারে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।
কারণ কক্সবাজারে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি দেহ দান করার মতো মহত্ব দেখিয়েছেন। এখন তার কারনে অনেকে এগিয়ে আসবেন। দেহদান একজন মানুষের সর্বোচ্চ ত্যাগ। ওই দেহ আমাদের কলেজের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার জন্য কাজে লাগানো হবে।

ডা: মায়েনু মিডিয়াকে জানান, যে কোন মেডিকেল কলেজে মানবদেহের অংশবিশেষ খুব প্রয়োজন। পাঠদানের প্রয়োজনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনস্বীকার্য এটি। সাধন পালের দানকৃত দেহটির কল্যানে ভালো চিকিৎসক তৈরি হবে আর এসব চিকিৎকদের কাছ থেকে ভালো চিকিৎসা পাবেন রোগিরা। চিকিৎসকদের অবদানের অংশে দেহদানকারি সাধন পালদের নামও থাকবে আজীবন।

সাধন পালের ধন্য পরিবারসদস্যরা হচ্ছেন- স্ত্রী অবসর প্রাপ্ত (শ্রেষ্ঠ শিক্ষক) কল্পনা রানী পাল; কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসিও বিভাগের প্রধান ও বিএমএ কক্সবাজার জেলা শাখার সহ-সভাপতি ডা: বিধান পাল, বাহারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরি পাল, লেখক ও সাংবাদিক নির্বাণ পাল ।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়