Ameen Qudir

Published:
2018-08-29 17:30:54 BdST

ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার চিকিৎসা ও দ্রুত নিরাময়: অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ডাক্তার অধ্যাপক


 


অধ্যাপক ডা. মহাদেব মন্ডল
___________________________

 

জীবানু বহনকারী ভাইরাস এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া মানব দেহে ছড়ায়।এই এডিস মশা আরও তিনটি রোগ জিকা ভাইরাস, লেপ্টো স্পাইরোসিস ও ইয়োলো ফিবার এর
মত অন্যান্য রোগের জীবানুও বহন করে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণঃ মশা কামড়ের ৩-১৫দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলো হলোঃ উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর (২ থেকে ৭ দিন), তীব্র মাথা ব্যথার সাথে চোখ নাড়ানোর সময় ব্যথা, মাংশপেশি ও হাড়ে তীব্র ব্যথা, র্যা শ,চামড়ার নিচে, দাঁতের গোড়া এবং ভিতরে মৃদু রক্তপাতের প্রবণতা, গিঁটে ব্যথা, পরবর্তীতে বমি এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিকনগুনিয়ারলক্ষণঃব্যক্তিরজ্বর(Fever) ১০২-১০৫ডিগ্রী
হতে পারে এবং তা ৩থেকে৭দিন পর্যন্ত
থাকতে পারে।দুদিন পর আবার ১০১-১০২ ডিগ্রী হতে পারে।এসময় ভাইরাস দেহের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।


আরর্থাইটিস বা গিটফুলেব্যথা(Arthritis):হাতের
কব্জি, ছোট জয়েন্টগুলি, পায়েরগোড়ালি, এংকলজয়েন্ট, হাঁটু, ঘাড় ও কাঁধ এর জয়েন্ট ব্যথাও ফুলেযায়।প্রায়৭০% রোগীর ঘাড় ব্যথা হয় যা দেহের এক জয়েন্ট হতে অন্য জয়েন্টে ছড়িয়ে পড়ে এবং
পুর্বের জয়ন্টের ব্যথা কমে যায় অনেকটা migrating poly-arthritis এরম ত যা RH factor বৃদ্ধির কারনে হয়ে থাকে।তবে সকালে ব্যথার প্রভাব খুব বেশি থাকে যা হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে কমানো যায়।

জয়েন্ট বা সন্ধিস্থলের ব্যথা সাধারণত এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে কমে যায় কিন্তু ব্যথা এক বছর পর্যন্ত থাকতে পারে।
ফুসকুড়ি(Rash):প্রায় ৫০% আক্রান্তরা maculapapular র্যা শএ ভুগে থাকেন।জ্বর শুরু হবার ৩থেকে৫ দিনের মধ্যে
এলাল ফুসকুড়ি গুলো দেখা যায় যা ৩থেকে ৪দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।এছাড়াও অন্যান্য উপসর্গ যেমন মাথাব্যথা , মাংশপেশিব্যথা (myalgia), গলাব্যথা বা স্বর ভেঙ্গে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটব্যথা, ঘাড়ের লসিকা
গ্রন্থিগুলো
ফুলে যাওয়া ও ব্যথা হওয়া, ঘাড় নাড়াতে
কষ্ট হতে পারে।

চিকিৎসা (Treatment):


দেহের রোগ প্রতি
রোধ ক্ষমতার মাধ্যমে চিকনগুনিয়া হতে
আরোগ্য লাভ করা যায়।তাই, কোন
মানসিক চাপ বা চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।


মেডিকেল চিকিৎসা:

জ্বর ১০২ ডিগ্রীর উপরে হলে ২টা করে তিনবেলা Napa (500 mg)খাবারের পরে তিনদিন খাওয়াতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে অ্যাসপিরিনবাanti-inflammatory মেডিসিন
রক্তক্ষরণ
ঘটাতে পারে দেহে প্লাটিলেটের হ্রাসের দরুণ।তাই এগুলো সেবন না করাই শ্রেয়।দেহে পানিশূণ্যতা(dehydration) রোধ
এবং
ইলেকট্রোলাইটব্যালেন্সের
জন্য প্রতিদিন প্রচুর তরল বা পানি (দুই
লিটারের উপর) পান করা উচিত।


আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা:


সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পাওয়া
গেছে যে চিকিৎসায় চিকনগুনিয়া
ও ডেঙ্গুর জন্য অধিক কার্যকরী প্রতিষেধক হল পেঁপে পাতার স।

ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার
মত সংক্রামক রোগে র রক্তের প্লাটিলেটগুলো
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অর্থাৎ প্লাটিলেটের
সংখ্যা কমে যায়।২০১১ সালে পাবমেড(PubMed) জার্নালে প্রকাশিত (Asian Pac J Trop Biomed, 2011 Aug; 1(4):330-333)গবেষণায়
দেখা গেছে যে পেঁপে পাতার রসে প্লাটিলেট উৎপাদনে সাহায্যকারী উপাদানর য়েছে।পেঁপে পাতায় থাকে প্রচুর পরিমানে কমপ্লেক্স ভিটামিন যাBone Marrow প্রচুর পরিমাণে প্লাটিলেটের উৎপাদনে সাহায্য করে।পাতার নির্যাস জীবানু বহন কারী মশার লার্ভা ধংস করে।রস সেবনে প্লাটিলেটের সংখ্যা প্রথম দিনেই বৃদ্ধি পেয়ে
দ্বিগুন হয়ে যায় এবং ৫দিনেই প্লাটিলেটের সংখ্যা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।পেঁপে পাতার রসসেবনে দেহে প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় যা অল্পসময়ে দেহের ব্যথাও ফুলা ভাব নিরাময় করে।

চিকনগুনিয়ার প্রদাহের কারনে শরীরের RH facto rবেড়ে যাওয়ায় গিটে প্রচুর ব্যথা হয় ও তা ফুলেযায়; যা বেশীদিন
স্থায়ী হলে বাত বা আরর্থাইটিস রোগের মত রুপ নেয়।গিট(arthritis) ও পেশি উভয়েরই ক্ষতিসাধন করে বিধায় আক্রান্ত ব্যাক্তির পক্ষে হাঁটা, চলাফেরা ও বসা খুবই কষ্টকর হয়।চিকনগুনিয়ার ক্ষেত্রে ভাল তিনটি পেঁপেপাতা (শিরাবিহীন) ধুয়ে তিন গ্লাস পানিতে ভালো করেসিদ্ধ করে যখন তা এক গ্লাস পরিমাণে আসবে, তা প্রতিদিন একগ্লাস করে ৬দিন পর্যন্ত পান করবে দ্রুত নিরাময়ের জন্য।আমার নিজের চিকনগুনিয়ায় ভুগা অবস্থার পান করেছিলাম এবং আরও অনেককেই অনুরূপ চিকিৎসা দিয়েছিলাম, তারা সবাই উপকৃত হয়েছেন।তবে পেঁপে পাতার র স বা সিদ্ধ পানি পান করায় কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।


ডেঙ্গু চিকিৎসা:

প্রথমে আক্রান্তর রক্তর নমুনাএর বিশ্লেষণ করা হয়।পাতার রস বানানোর জন্য কচি পেঁপে পাতা ধুয়ে তা ছাড়িয়ে নিতে হবে শিরা থেকে।তারপর
তা পিষে রস বের করতে হবে।২৫ মিলিলিটার বা ৫ চা চামুচ পাতার রস পানি তে মিশিয়ে প্রতিদিন দুই বেলা সকালেওসন্ধ্যায়) পান করতে
হবে ৫দিনে।যদি
এতে রোগীর আশানুরুপ উন্নতি না হয়, তবে পরবর্তী সপ্তাহ র্পযন্ত খেতে হবে।
ডাবের
পানিঃ ৩/৪গ্লাস ডাবের পানি পান করলে তা দেহের লিভারের জ ন্য উপকারি।পরপর
কয়েকদিন
ডাবেরপানি
পান করলে চিকনগুনিয়া ভাইরাসের বিরুদ্ধে
অত্যন্তফলদায়ক।নিয়মিত ডাবের পানি সেবনে এটি দেহের
যকৃতের ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে দেয়।ফলে
রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়।এর ম্যাঙ্গানিজ
উপাদান গিঁটব্যথা এবং
ফোলাভাব কমাতে সহায়তা করে।

রসুনের পেস্টঃ

 


১০-১২টা রসুনের কোয়া ছাড়িয়ে তাকে নিতে হবে।তারপর
পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে
হবে।রসুনের পেস্ট দিনে দুইবার আক্রান্ত সন্ধিস্থলে কয়েকঘন্টার জন্য লাগিয়ে রেখে দিতে হবে। গিটের ব্যথা উপশমে রসুন অনেক উপকারি।আক্রান্ত স্থলে রসুনের পেস্ট
লাগালে তা ব্যথা এবং ফোলাভাব দূরীকরণে ও রক্তচলাচলে কার্যকর ভুমিকা রাখে।


হলুদঃ

হলুদগুঁড়ো ১গ্লাস উষ্ণ দুধে ভালো করে মিশিয়ে তা গরম থাকতে ই পান করে নিতে হবে।সকালে একগ্লাস
এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একগ্লাস করে পান করতে হবে।হলুদে কারকিউমিননামক একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্টথাকে, যা ফোলাভাব কমাতে সহায়তা করে। তাই, চিকনগুনিয়ার চিকিৎসায় এ টা
অনেক কার্যকারি।


ঠাণ্ডা বা শীতল কমপ্রেসঃ একটি তোয়ালের মধ্যে কিছু বরফের টুকরো হাল্কা করে
ভেঙ্গেতা গাঁট বা সন্ধি স্থলে কিছু মিনিটের জন্য চেপে ধর তে হবে।সারাদিনে
কয়েকবার এ প্রক্রিয়া অনুসরন করতে হবে। কোল্ডকমপ্রেস ফোলাভাব দুরীকরণে, ব্যথার উপশমে এবং
আক্রান্ত
গিঁট নিরাময় অনেক সহজ এবং ফলদায়ক।আক্রান্ত স্থলে র ক্ত চলাচলের
মাধ্যমে এটি ব্যথারউপশম করে।
হাল্কা
ব্যয়ামঃ
সকালে
নিয়মিত হাল্কা
ব্যায়ামের মাধ্যমে
পেশি ও
সন্ধি স্থলের ব্যথা বা অসাড়তা দূর করা সম্ভব।
_______________________________

অধ্যাপক ডা. মহাদেব মন্ডল

Professor of psychiatry at National Institute of Mental Health, Sher-E-Bangla Nagar, Dhaka
Former Résident at IPGMR
Worked at Sylhet M A G Osmani Medical College Hospital

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়