সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপন: চিকিৎসকগন কি করবেন

ব্রিগেডিয়ার ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ
_______________________________

সাম্প্রতিক কালে একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।তাতে ডাক্তারদের চাকুরীরর কিছু বিধি বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে।দ্বিমত থাকতেই পারে।অযৌক্তিক কোন কিছুই টিকে থাকে না। আমাদের কেই ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে।যৌক্তিক ভাবে দাবী উপস্থাপন করে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।আমার দীর্ঘ চাকুরী জীবনে দেখেছি কিছু ব্যতিক্রম বাদে ডাক্তারগন পেশাজীবী হিসেবে নিতান্তইই অসামাজিক।

মেডিক্যাল জীবনে শুদ্ধাচার ও অবহেলায় বেড়ে উঠা মেধাবী মানুষগুলো আর্থিক নিরাপত্তা হীনতায় ৩৫ থেকে ৩৭ বছর পার করে দেয়। নিজ পেশার অগ্রজদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ ও প্রাণদায়ী প্রেরনা পায় না।যোগ্যতা অর্জনের সময় সহানুভূতি পায় খুব কম ডাক্তার।

এর জন্য মূলত দায়ী আমরাই
আমাদের প্রশাসনিক দক্ষতা ও অফিসার
সুলভ আচরনে ঘাটতি আছে।

প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার গনের অধিকাংশ কর্পোরেট ব্যবস্থায় বিক্রি হয়ে গেছেন।দালাল প্রাকটিস,কোম্পানীর টাকায় বিদেশ ভ্রমন,এম আর দের হোন্ডায় চড়া, নগদ টাকা নেয়া,পারসেন্টেজ নেয়া,ডিউটি বিক্রি করা,রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ,স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় আমলাদের নিয়ন্ত্রন এবং প্রাইভেট প্রাক্টিস ভিত্তিক অতিরিক্ত রোগী কম সময়ে দেখা,ব্যবহার খারাপ,বিদেশ এর দালালদের স্বাস্থ সেক্টরে আধিপত্য,নিজদের পেশাগত উন্নতির দিকে নজর না দিয়ে টাকার পিছনে ছোটার কারনে আজ গোটা ডাক্তারী পেশায় সংকট তৈরী করেছে।

এছাড়া গত ১৫ বছরে অধিকাংশ প্রাইভেট মেডিক্যালের অনুমোদন,জেলা পর্যায়ে সরকারী মেডিক্যলে শিক্ষক স্বল্পতা মেডিক্যাল শিক্ষার মান কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।কিছু ব্যাতিক্রম বাদে কোন মান নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না।

এছাড়া টেকনোলজিস্ট ও নার্সদের পেশাগত আচরণ ও দক্ষতার যথেষ্ঠ ঘাটতি আছে।তাছাড়া রোগীর অতিরিক্ত চাপ, অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা ও যন্ত্রপাতির অভাব মান সন্মত চিকিৎসা কে ব্যহত করছে।

উত্তরনের উপায় জাতীয় পর্যায়ে স্বনামধন্য চিকিৎসক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃত গুনিজনদের সম্ন্বয়ে একটি কমিটি করে একটি সুসমন্বিত নীতিমালা তৈরী করা।যার মধ্যে মেডিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থা,ডাক্তারদের কর্মপরিবেশ,পদন্নোতি, অন্যান্য সুবিধা,প্রাইভেট প্রাক্টিসের নীতিমালা,সিলেবাস,আচরন বিজ্ঞান,পোষ্ট গ্রাজুয়েশান এর কাঠামোগত নীতিমালা প্রনয়ন করতে হবে।
আবেগ প্রবন বা হতাশ হয়ে সমস্যার সমাধান হবে না।দেশের উন্নতির স্বার্থে একটি মর্যাদাবান জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের কে নিরপেক্ষতা নিয়ে পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হবে।তা না করতে পারলে সাধারণ জনগন ও প্রান্তিক চিকতসক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ডাক্তাদের ও এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যবহারে আরো মানবিক হতে হবে।অনেক ডাক্তারদের কে দেখেছি তাদের ব্যবহার অনেক মানবিক এবং ওনাদের দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে।মনে রাখতে হবে চিকিৎসক গন আর আমলাদের বা পুলিশের আচরন এক হতে পারে না।জনগন কে আরো দায়িত্বশীল আচরন করতে হবে। জনগনের সচেতন অংশ পুরো চিকিৎসা ব্যাবস্থার সংকট নিয়ে সচেতন হয়ে পজিটিভ ভূমিকা পালন করতে হবে।কোয়াক চিকিৎসক, দালাল,প্রাইভেট ক্লিনিক গুলো কে আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

যারা দেশকে ভালবাসেন তাদের দায়িত্ব আছে।শুধু ডাক্তারদের দোষারোপ করলে সমস্যার সমাধান কোন দিনই হবে না।সবাইকে জবাবদিহিতার তার আওতায় আনতে হবে।অন্ধকার আসবেই কিন্তু সূর্যের আলোকে কেউ আটকাতে পারবে না।
______________________________________

ব্রিগেডিয়ার ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ
পরিচালক
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।