Ameen Qudir

Published:
2018-08-21 18:07:44 BdST

‘ডাক্তার’ উই কলড ‘সেকেন্ড গড’


এই ডিজাইনটি লেখকেরই করা।

 

মিহির রঞ্জন তালুকদার
__________________________


মানবসেবা মানুষের পরম ধর্ম। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন জীব সেবা ঈশ্বরের সেবা, জীবকে সেবা করলে ঈশ্বরকে সেবা করা হয়। আর যেখানে মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির সেরা জীব, সেখানে মানুষের সেবা করা ধর্মের অঙ্গ।

পৃথিবীতে হাজার হাজার পেশা রয়েছে যেগুলোর মধ্যে গুটাকয়েক পেশার সাথে মানবসেবা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এসকল পেশা আবার সবার ভাগ্যে জুটে না। তারা নিজের জীবকা অর্জনের পাশাপাশি ঈশ্বরেরও সেবা করতে পারে, কারন মানবসেবাই ঈশ্বরের সেবা। যারা মেধাবী, কঠোর পরিশ্রমী তারাই মানবসেবার ব্রত নিয়ে এসকল পেশায় নিয়োজিত হয়। সাধারন মানুষের নিকট তারা অত্যন্ত সম্মানের পাত্র। তেমনি একটি পেশার নাম হচ্ছে ‘চিকিৎসাসেবা’ যাকে আমরা ডাক্তারি বলে থাকি। এটি নিচক একটি পেশা নয়, একটি সেবার নাম। কোনো অসুস্থ মানুষ যাকে আমরা রোগি বলে থাকি তারা প্রথমেই তার রোগ মুক্তির জন্য ঈশ্বর/ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে। এরপরই তারা ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়, এজন্য আমরা ডাক্তারদেরকে ‘সেকেন্ড গড’ বলে থাকি। তাদের চেষ্টা, কর্মদক্ষতা কাজে লাগিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তুলেন।

তাদের প্রতি সাধারন মানুষের ভালবাসা সীমাহীন। কিস্তু আজকাল কিছু কিছু ডাক্তার নামধারী চিকিৎসা ব্যবসায়ীদের কারনে ডাক্তারি পেশা আমাদের কাছে বিতর্কের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। রোগী এখন তাদের নিকট ক্লায়েন্ট। অর্থের কাছে এসব ডাক্তাররা বিক্রি হয়ে গেছেন। যেকোনো উপায়ে অর্থ উপার্জনই এখন তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। এই গুটিকয়েক ডাক্তার নামধারীদের কারনে এ পেশার সবাই আজ হীন মন্যতায় ভুগছে। যারা সত্যিকার অর্থে এখনও নিজেদের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম ত্যাগ করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের হৃদয় আজ অন্ধকার কালো মেঘে ডেকে গেছে। নিজেরাই আত্মসমালোচনায় ভুগছেন। যদিও তাদের বিন্দুমাত্র দোষ নেই।

ডাক্তারি পেশা দুর্বৃত্তের পেশায় পরিণত হয়েছে: এ এক কঠোর বাক্য শুনতে হয়েছে এ পেশায় জড়িত সকলকে। যদিও সবাই একরকম নয়। এখনও বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রতি ৯৯% লোকের আস্থা রয়েছে। গত কয়েক বছরে চিকিৎসা সেবায় বাংলাদেশ অভুতপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। কয়েকমাস আগেই পিজি হাসপাতালে প্রথম রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্র চালু হয়েছে।

গত কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে সাংবাদিক রুবেল খানের আড়াই বছরের মেয়ে রাইফাকে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করেছিলেন বেসরকারি হাসপাতাল ম্যাক্সে। শুরুতেই হাইডোজ অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ায় মেয়ের শারীরিক অবনতি ঘটলে রুবেল খান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের খোঁজ করেও চিকিৎসক পাননি। এমনকি পরের দিন রোগী না দেখেই অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ বাড়িয়ে দিলেন। রোগীর আরো অবনতি ঘটলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে কল করলে তিনি সেডিল ইনজেকশন পুশ করতে বললেন। এর দুই ঘন্টা পর ঐ দিন রাত ১১ টার দিকে রাইফার মৃত্যু হয়। এর বিপরীতে এর রিটের প্রেক্ষিতে গত ৯ জুলাই হাইকোর্ট উপরোক্ত মন্তব্যটি করেন। আদালত আরো বলেন যে, কতিপয় দুর্বৃত্তের কর্মকান্ডের কারণে চিকিৎসা সেবার সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

ডাক্তার যখন ধর্ষক: আদালত কর্তৃক এ ধরনের বক্তব্য শোনার কিছুদিন পরই সিলেটে আতœপ্রকাশ করল এক নরপশু ইন্টার্ন চিকিৎসকের। ভাষাটি একটু কঠিন করেই বলে ফেলছি। চিকিৎসকদের বেলা এ ধরনের ভাষার ব্যবহার আমার উচিৎ হয়নি। অন্য কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন। আমি এই ভাষাটি শুধু ঐ চিকিৎসকের বেলাই প্রয়োগ করেছি, কারন প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের প্রমান পেয়েছে পুলিশ। সিলেট কতোয়ালী থানার এসআই আকবর ভূঁইয়া এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনা গত ১৫ জুলাই দিবাগত রাতের। সেই রাতে অসুস্থ নানির সাথে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (সিওমেক) এর তৃতীয় তলায় ৮নং ওয়ার্ডে ছিল ৯ম শ্রেণির ঐ ছাত্রী। গভীর রাতে ফাইল দেখার কথা বলে ঐ ছাত্রীকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন ইর্ন্টান চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহী। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই মাহীকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

ডাক্তার হওয়া সহজ কিন্তু সেবাদান সবার পক্ষ্যে সম্ভব নাও হতে পারে। ডাক্তারি পেশা এখন ক্লান্তি লগ্নে বসবাস করছে। প্রতি বছর ডাক্তারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে এর মধ্যে রয়েছে আবার ভূয়া ডাক্তারের ছড়াছড়ি। বাড়েনি সেবার মান বরং সেবালয়গুলোতে বেড়েছে রোগীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ। ব্যবসায়ির মনোবৃত্তিই এর প্রধান কারন। রোগীকে জিম্মি করে অথবা রোগীর আত্মীয় স্বজনকে রোগীর অবস্থা বেশি ভাল নয় বলে তাদের ভয় দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এখন বেসরকারি মেডিকেলগুলোতে অহরহ ঘটছে।
যাই হোক ডাক্তারদের এই অবস্থা থেকে ডাক্তারদেরকেই নিয়ে আসতে হবে। সবাই যে খারাপ বা পেশাকে কলংকিত করছে সেটা কিন্তু নয়। হাতে গনা গুটিকয়েক। তাদের জন্যই পেশার সংশ্লিষ্ট সবাই কলংতিক। কতিপয় দুর্বৃত্তের কারণে চিকিৎসকদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। দেশে অনেক চিকিৎসক রয়েছেন যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেমন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তেমনি বিদেশের মাটিতেও দেশের সুনাম অর্জনে ভূমিকা রাখছেন। তাদের আমরা দুর্বৃত্তের কাতারে ফেলতে পারি না, পারবও না।

অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেছেন ‘চিকিৎসকদের হতে হবে অতিমানব।’ তাদের চেষ্টা থাকতে হবে তাদের সিনিয়ররা যে দুর্বৃত্তের কালীমা তৈরি করেছে তা চিরতরে নি:শেষ করার। আমরা চাই যে আদালত চিকিৎসাপেশাকে দুর্বৃত্তের পেশা বলেছে সেই আদালাত একদিন এই পেশাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এবং এ জন্য চিকিৎসকদের পেশার প্রতি আরো আন্তরিক হতে হবে, রোগীর সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। তাদের মনুষ্যত্ববোধ, মানবতাবোধ হৃদয়ে লালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে একজন রোগী যখন ডাক্তারের কাছে আসে তখন ডাক্তারকে সে প্রভু মনে করেই আসে। সেবালয়ে এসে সেবা না পাক কিন্তু নিঘৃহীত যাতে না হতে হয়, সেটাই আমাদের প্রার্থনা।
________________________
লেখক: কলামিস্ট ও শিক্ষক, বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, বালাগঞ্জ, সিলেট।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়