Ameen Qudir

Published:
2018-07-29 16:27:38 BdST

মেডিকেল ভর্তির টোপ ফেলে প্রিন্সিপালের পিএ যেভাবে লাখ লাখ টাকা কামাতো :সত্য কাহিনি



ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ
_________________________________

টাউট বাটপার আর ফড়িয়া সবদেশেই সবকালেই ছিলো।
আসুন তেমনি এক ফড়িয়ার ছোটগল্প শুনি।

একসময় ঢাকার একটি সর্বসেরা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন প্রফেসর ( অনলাইন প্রবিধির কারণে নাম উহ্য রাখা হল) স্যার।
স্যারের পিএ ছিলো যে লোকটি তার নাম ছিলো; ( অনলাইন প্রবিধির কারণে নাম উহ্য রাখা হল)। এখানে পিএ বলেই উল্লেখ করা হবে।

তো এই পিএ প্রতিবার এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীকে টাকার বিনিময়ে গ্যারান্টি সহকারে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার টোপ দিতো।
অনেকে তার সেই টোপ গিলতোও!
আর গিলবেও বা না কেন ?
পিএ-র সেই টোপ ছিলো একেবারে অব্যার্থ, 'বিফলে মূল্য ফেরৎ' টাইপের!!

পরীক্ষা শুরুর আগে আগ্রহী ক্লায়েন্টদের সাথে পিএ মোটা অঙ্কের ডিল করতো, মাঝখানে প্রিন্সিপাল স্যারের নামটাও হয়তো ভাঙিয়ে নিতো!!

ভর্তি করিয়ে দিতে পারলে পুরো টাকা পিএ নিবে আর না পারলে পুরো টাকাই ক্লায়েন্টকে ফেরৎ দিবে।
ক্লায়েন্ট তো ভাবতো পিএ-র মতো এমন 'স্বচ্ছ ও সৎ' দালাল আর কে আছে এই দেশে!
তাই অনেকেই সরল বিশ্বাসে সন্তানকে চিকিৎসক বানানোর খায়েসে এই পিএ ফড়িয়ার অসাধু ফাঁদে পা দিতো।

আগ্রহী গোবেচারা অসাধু(যারা অসাধু উপায়ে ভর্তি হতে চায় তারাও তো অসাধু) ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে পিএ ব্যাঙ্কে তার নিজের একাউন্টে জমা রাখতো।
পরীক্ষা শেষ হয়ে ফল প্রকাশ এবং ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে প্রায় মাস তিনেক সময় লেগে যেতো।
ক্লায়েন্টের সংখ্যা একেবারে কম নয়, গড়ে শ'তিনেক তো হবেই আবার তাদের কাছ থেকে আহরিত মোট টাকার পরিমানও কম নয়।
তিনমাসে সেই টাকার লভ্যাংশও কম নয়!!

পিএ-র কাজ কিন্তু ক্লায়েন্টের কাছ থেকে টাকা নেওয়া পর্যন্তই তারপর সে ঝাড়া হাতপা তার আর কোন কাজ নেই!
কারন কোন ক্লায়েন্টকে ভর্তি করার জন্য বাড়তি কোন তদ্বির বা ছুটোছুটি বা ফাইল চালাচালি কিছুই পিএ-র করা লাগতো না,
সে বরং নাকে সর্ষের তেল দিয়ে নিঃশ্চিন্তে সারারাত ঘুম যেতো আর সারাদিন শার্টের কলার ঝাঁকিয়ে ক্লায়েন্টদের কাছে নিজের ইনফ্লুয়েন্স আর বীরত্ব জাহির করতো!
তার এই ফড়িয়াবাজির খবর ঘুর্ণাক্ষরেও প্রিন্সিপাল স্যারের কানে পৌঁছাতো না।

পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হতো তারা আসলে নিজগুণেই উত্তীর্ণ হতো। পিএ মিয়া তাদের টাকা রেখে বাকিদের সবার টাকা পুরোটাই ফেরৎ দিয়ে দিতো।

বিনাপূজি আর বিনাশ্রমে এবং শতভাগ ঝুকিবিহীন এমন শতভাগ লাভের ব্যাবসা আর কিইবা হতে পারে!

আসছে ৩আগস্ট ৩৯তম স্পেশাল বিসিএস'র প্রিলিমিনারী পরীক্ষা।
চিকিৎসকদের এই বিসিএস'র মাধ্যমে সরকার প্রায় পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে।
শোনা যাচ্ছে পাঁচ হাজার পোস্টের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে চল্লিশ হাজারের উপরে।

কতো পিএ যে ইতিমধ্যেই তাদের ফড়িয়াবাজির হাত বাড়িয়ে মেলে ধরেছে আর কতজন বেকার চিকিৎসক যে তাদের মেলে ধরা হাতে ধরা দিয়েছেন- আল্লাহ্ই জানে!!

এইসব পিএ-রা মাঝখানে পিএসসি বা আওয়ামীলীগ সরকারের নাম ভাঙিয়ে সরকারের বারোটা বাজাবে কিন্তু নিজেদের আখেরটা ঠিকই গুছিয়ে নেবে!

যেসব চিকিৎসকরা এইসব পিএ-দের হাতে ইতিমধ্যেই কাড়ি কাড়ি কাঁচা টাকা গুজে দিয়েছেন তারাও নিশ্চিৎ থাকুন এইসব পিএ-রা আপনাদের জন্য কিছুই করতে পারবে না, করার চেষ্টাও করবে না, আদতে কিছু করার ক্ষমতাও নেই তাদের!

আপনি যদি কোয়ালিফাই হন তবে ধরে নেবেন সেটা আপনারই কৃতিত্ব, আপনার কৃতিত্বে পিএ-র বিন্দুমাত্রও অবদান নেই।

তাই বুঝেশুনে পা ফেলুন।

এই ডিজিটাল যুগেও আপনি যদি এমন এ্যানালগ ধাপ্পাবাজি ধরতে না পারেন এবং এই পিএ-দের হাতে নিজেকে সপে দেওয়ার চিন্তা করেন তাহলে আপনার জন্য সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই!

আর যারা ইতিমধ্যেই পিএ-দের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন তাদের জন্য সমবেদনাটুকুও জানাতে পারলাম না!!
_____________________________

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ
সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ;স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক;চিকিৎসক পরিষদ, বিএসএমএমইউ।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ,দিনাজপুর।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়