Ameen Qudir

Published:
2018-07-28 17:10:45 BdST

কিছু বৈদেশিক চিকিৎসা  বনাম ভুল চিকিৎসা


 


ডা.কামরুন নাহার লুনা
_______________________________

কিছু বিদেশী চিকিৎসার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে লিখছি। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যাদের কথা , তাদের কাছ থেকে পারমিশন নেয়া হয়নি বলে।
বেশ কয়েক বছর আগে আমার এক আত্নীয়ের থাইরয়েড নডিউল ধরা পড়ায় এবং সেটা ম্যলিগনেন্ট বলাতে তারা ব্যংকক চলে যান। সেখানেও একই ডায়গনসিস হয় । তারা চট জলদি অপারেশন করে গলার সব গ্ল্যান্ড মানে থাইরয়েড , প্যারাথাইরয়েড সব ফেলে দেন এবং বলেন তুমি এখন ক্যান্সারমুক্ত , দেশে চলে যাও । কিন্তু গলার গ্ল্যান্ড ফেলে দেয়াতে তোমাকে সারাজীবন কিছু ঔষুধ খেতে হবে । দেশে ফিরলে আমারা যখন তাকে দেখতে যাই , তিনি খুব খুশী বললেন খুব ভালো অপারেশন হয়েছে। এক বছরের ঔষুধ কিনে এনেছি । দেখলাম তিনি প্রায় আশি হাজার টাকার শুধু ক্যালসিয়াম টেবলেট এনেছেন , তারা গছিয়েছে(প্যারাথাইরয়েড ফেলে দেয়ায় লাইফলন্গ ক্যালসিয়াম খেতে হবে তার) , সেগুলো আমাদের দেশে অনেক কম দামেই পাওয়া যায় । অপারেশনের কারনে গলা ঘাড পুরাই ফিক্স হয়ে গেছে , শুতে পারেন না , বসে ঘুমান ।
ছমাসের মধ্যে তার আরো সমস্যা শুরু হলে , চামডায় নডিউল তৈরা হল । তিনি আবার ব্যংন্কক গেলেন , ওরা বলল তোমার ক্যন্সার রিকার করেছে । তিনি রাগ করে এবার সিন্গাপুর গেলেন । ওখানে তার পেট স্ক্যান করে ধরা পড়ল , তার আসলে একটোপিক কিছু থাইরয়েড( পেটেও কিছু থাইরয়েড টিসু ছিলো) ছিলো পেটে। এবং তাতে ক্যন্সার রয়ে গেছিল , আগে ব্যন্ককে পেট স্ক্যান করে নাই বলে ধরা পডে নাই । এবার সারা শরীরে ক্যন্সার ছডিয়ে পডেছে ।তখন আর কিছু করার ছিলো না , কিছু পেলিয়েটিভ ঔষুধ দিয়ে পাঠিয়ে দেয় তারা । এরপর স্বল্প যে কয়েক দিন বেঁচে ছিলেন তিনি, আর কোনদিন শুয়ে ঘুমাতে পারেন নি। আল্লাহ বেহেস্ত নসিব করুক উনাকে ।

আমার আরেক আত্নীয়ার ব্রেষ্টে ছোট একটা নডিউল ধরা পড়ায় সিংগাপুর যান । তারা কোর বায়প্সি করে যেটা নাকি ১০০% সেনসিটিভ। বলে যে এতে ক্যন্সার নেই , শুধু টিউমমারটা ফেললে হবে । তারা তারা তিন লাখ টাকা খরচ করেশুধু সিলেকটিভলি টিউমারটটি ফেলে দেশে চলে আসেন। পরে সেই টিউমারেের হিস্টো রিপোর্ট আসলে দেখা যায় এটা ক্যান্সার ছিলো। তারা মেইল করে , চলে আসো , তোমার ব্রেষ্ট ফেলতে হবে । তারা খুব রাগ করলো সিংগাপুরেও যদি এই ভুল হয় , তারা এবার অন্য আরেকটি দেশে গিয়ে মেসটেকটমি করেন।
তৃতীয় ঘটনা আমার ছেলের ক্লাসমেটে বাবার , বুক ব্যথায় এখানে হার্টে সমস্যা আছে বলায় , তারা সিংগাপুর যান, তারা সব পরীক্ষা করে বলেন কোন অসুবিধা নেই । তারা দেশে চলে আসার আগের দিন হোটেলেই হার্ট এটাক করে তিনি মারা যান ।
আমার এক বন্ধুর ব্যংককে দুবার IVF ফেল করার পর , ঢাকা এপোলোতে ৩য় বারের মতো IVF করে সে এখন এক সন্তানের মা ।
এরকম শত শত কাহিনী আছে । এ আসলে ভুল চিকিৎসা বললে ভুল হবে, এরকম wrong ডায়গনসিস সব জায়গায় হতে পারে।
সিংগাপুরে আমাদেরও বেশ কিছুদিন থাকার অভিজ্ঞতা আছে । ওরা যে প্যারাসিটামল খেতে দিত , তার নাম জেরিন( আমার দেশের ইনসেপ্টা কোম্পানির, ওরা এদেশ থেকে ইমপোর্ট করেছে) দাম এক ডলার , এখানে তার দাম তখন আশি পয়সা, এন্টিবায়োটিক লিভোফ্লক্স দিয়েছিলো , তাও আমার দেশের , দশ ডলারে কিনেছিলাম প্রতিটি টেবলেট। এখানে দাম তখন আট টাকা ছিলো , ডাক্তারের ভিসিট NUH এ ৮০- ১০০ ডলার (৬০০০ টাকা) আর মাউন্ট এলিজাবেথে ৩০০ডলার । একটি CT Scan করতে লাগে ২৫০০০ টাকা, এখানে মাত্র ৩০০০ টাকা , একটা PET CT করাতে লাগতো আডাই লাখ টাকা, ারো দশ বছর আগের কথা বলছি।
কিছুদিন আগে চেম্বারে একরুগী পেলাম যারা এপিলেপসির জন্য ব্যন্ককে চিকিৎসা করেন ।বাচ্চাটা আমার কাছি সিন্ড্রমিক মনে হলে। কিছু টেষ্ট করতে বলাতে বাচ্চার ১২ বছরের ইংলিসে পডা বড়বোনটি বলল এদেশে কেমনে টেষ্ট করাবো এখানে সব রিপোর্ট ভুল ।
বললাম এদেশে মানুষ কি চিকিৎসা নিচ্ছে না, এই ইংলিস জেনারেশন নিয়ে কই যাই!
________________________________
ডা.কামরুন নাহার লুনা। সুলেখক। সিএমসি ৩৩ । বর্তমানে
Consultant Pediatrics at department of Neonatology , Chittagong Medical College Hospital

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়