Ameen Qudir

Published:
2018-07-10 15:48:48 BdST

মেটাবলিক সিন্ড্রোম :আক্রান্ত হচ্ছেন নারী পুরুষ উভয়েই


 

 

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
____________________________

আমাদের বড় চিন্তার বিষয় ,এই মুহূর্তে মেটাবলিক সিন্ড্রোম ।আক্রান্ত হচ্ছেন নারী পুরুষ উভয়েই । ৩৫ পার হলেই সাধারণত ,কারো বা কয়েক বছর আগে বা পরে । এই অসুখের তিনটি অংশ ,ওবেসিটি বা হটাৎ খুব মোটা হয়ে যাওয়া এবং ওজন বেড়ে যাওয়া । এর পরেই শুরু হয় টাইপ টু ডায়াবেটিস ,এবং একবার জমিয়ে বসতে পারলে সে ডেকে আনে বন্ধু হাইপারটেনশন বা হাই ব্লাড প্রেসার । এদের বন্ধুত্ব বেশ জোরদার ।

অসুখ যখন লিখেছি এর কোন টিই মানুষের জীবনে ভালো না । আর ত্রয়ী তো ভীষন ই খারাপ । তবে এতো ঘাবড়াবার কিছু নেই ,চিকিৎসা আছে এর ।
আসলে ৩৫ পার হলে স্ত্রী বা পুরুষের জীবনে মোটামুটি একটা আর্থিক সম্পন্নতা আসে এবং বাচ্চারা একটু বড় হয়ে যাওয়ার কারণে দৌড় ঝাঁপ বা শারীরিক পরিশ্রম ও কমে ।
আগে কিন্তু ছিলো না এমনতর ।
হঠাৎ করে আমাদের জীবন যাপন একলপ্তে পাল্টে গেছে অনেকখানি । শারীরিক পরিশ্রম প্রায় নেই বললেই চলে আর ,লোকে হাঁটতেই ভুলে‌ গেছে প্রায় ; অটো টোটো বা নতুন দু বা চারচাকার ঝাঁ চকচকে গাড়ি । এখন আবার ছোট থেকে বড়ো সক্কলের জন্মদিনে কেক এবং পেস্ট্রি চাই ই চাই । মিও আমোরে এবং সুগার অ্যান্ড স্পাইস ,একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে, আর ঝাল ঝাল ডোমিনোজ বা পিত্জা হাট তো আছেই । এছাড়াও সপ্তাহে একদিন রাতে অন্তত বাইরে না খেলে কি আর মান থাকে বলুন ! বাটার নান দিয়ে চিকেন বাটার মশলা আর শেষপাতে এককাপ ভালো চকলেট আইসক্রিম না খেলে কি হয় । না না বাবা মার জন্যে নয় ,ছেলে মেয়ের জন্যে কিন্তু রেস্তোরাঁয় তো একে অপরের কাপ থেকে নিয়ে খাওয়া ভালো দেখায় কি ? অতএব প্রত্যেকের জন্যেই এক কাপ বা এক স্কুপ করে ।দিব্যি ফুরফুরে মেজাজে ফুরফুরা শরীফ না গেলেও ,শরীর ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে বাড়ি আসা ।

এখন মুশকিল হলো কারো বা কোন পরিবারের যদি রোজগার বেশি হয় আর ব্যয় কম হয় ,প্রত্যেক মাসেই টাকা উদ্বৃত্ত হবে বা জমবে । তেমনি শরীরে ক‍্যালরি ঢুকছে অনেক কিন্তু খরচ হচ্ছে ঢের কম ,জমা হবে চর্বি হয়ে -- পুরুষের ক্ষেত্রে সাধারণত পেটে আর নারীর ক্ষেত্রে পেটে এবং কোমরে। আর বাড়াবাড়ি হলে গালে এবং গলাতেও ।ইদানীং মেয়েদের ৩৫ -৩৬ বছর বয়সে ৫-৩ উচ্চতায় ৮০ কিলো ওজন প্রচুর ।

এই যে বাড়তি মেদ বা চর্বি,সাবকিউটেনিয়াস বা চামড়ার ঠিক নিচে জমা হলে অত ক্ষতি নেই ,ক্ষতি বেশি লিভারে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে জমা হচ্ছে এবং জমা হচ্ছে রক্তবাহী ধমনীর ভেতর দিকে এবং তার ফলে ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা বা ইলাস্টিসিটি কমছে , ফলে বাড়ছে ব্লাড প্রেসার । আর জমা মেদ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়াচ্ছে ও ডায়াবেটিস কে ডেকে আনছে ।
আরো খারাপ দিক হলো একেবারে প্রথমে প্রায় কোন অসুবিধা ই হয় না ,বহুজন চেহারা ভালো হওয়ার আনন্দে দিব‍্যি রসে বসে থাকে । আরো চাকুরি বা ব‍্যবসার শ্রীবৃদ্ধি হলে বাড়ে দুইই , উপার্জন এবং দায়িত্ব এবং স্টেটাস সিম্বল হিসেবে ক্লাবে যাওয়া , প্রচুরতর ফাস্ট ফুড , আলকোহল এবং ধূমপান ( যদি না আগে থেকেই অভ‍্যাস থেকে থাকে) এবং এর পরে সারাদিন পরিশ্রমের (?) পরে একটু আলকোহল অভ্যাস হয়ে যাওয়া । বৃত্ত
এবারে সম্পুর্ণ হলো ।
এইবারেই হটাৎ করে শরীর শুকিয়ে যেতে থাকে, রাতে বার বার বাথরুম যেতে হয় ,বুকেও যেন চাপ ধরে আসে ।

এবার চেক আপ বা চিকিৎসা না করালেই নয় । ছুটির দিন দেখে ,মেয়ে বা ছেলের কোচিং ক্লাস বা ফাংশন এর দিনে যেন না পড়ে, এমন দিন বেছে ডাক্তারের কাছে যাওয়া ।
ডাক্তার রাও একগাদা টেস্ট লিখবে ,তারপরে ওষুধ লিখবে ,ফিজ তো নেবেই আর এমন পাজি প্রথমেই সব ভালো ভালো জিনিসই বন্ধ করে দেবে এমনকি একগাদা ওষুধের সঙ্গে ধূমপান বন্ধ করে দেবে আর হয় আলকোহল বন্ধ করবে বা কমিয়ে দেবে । বেঁচে থেকে আর লাভ ই বা কি !

তবু ও ডাক্তারের কথা না মেনে উপায় ও যে নেই । অনেক দায়িত্ব আছে মাথার ওপর ।।

_________________________________

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
সুলেখক । কবি।

Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC)

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়