Ameen Qudir

Published:
2018-07-05 16:51:29 BdST

কোনো চিকিৎসক ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল চিকিৎসা দেন না: দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকীয়


 

ডেস্ক______________

" ভুল চিকিৎসার পোস্টমর্টেম" শিরোনামে লেখাটি লেখাটি দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকীয় হিসেবে প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি। পাঠকদের কাছে লেখাটি পেশ করা হল।



চট্টগ্রাম মহানগরীর মেহেদীবাগে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিত্সায় এক সাংবাদিক পরিবারের তিন বত্সরের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠিয়াছে। ঠাণ্ডার কারণে গলায় ব্যথা নিয়া তাহাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হইলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগে তাহার খিঁচুনি শুরু হয়। এই সময় দায়িত্বরত চিকিত্সক একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কথামতো তাহাকে একটি ইনজেকশন পুশ করেন। ইহার পরই শিশুটি নিস্তেজ হইয়া যায় এবং মারা যায় ঐ রাত্রেই। এই ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করিয়াছেন। আমরা আশা করি, তদন্তে শিশুটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বাহির হইয়া আসিবে এবং চিকিত্সায় অবহেলা প্রমাণিত হইলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে নেওয়া হইবে যথাযথ ব্যবস্থা।

শিশু রাইফার মৃত্যু দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। ত্রিপক্ষীয় তদন্ত রিপোর্টের ফলাফল আসিবার পরই বলা যাইবে শিশুটির মৃত্যু ভুল চিকিত্সায় হইয়াছে কিনা। তবে ইদানীং আমাদের দেশে ভুল চিকিত্সার এন্তার অভিযোগ পাওয়া যাইতেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কোথাও রোগীর আত্মীয়-স্বজন ক্ষিপ্ত হইয়া হাসপাতাল ভাঙচুর করেন বা ডাক্তার-নার্সদের ওপর আক্রমণ করেন। ইহার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ডাক্তার ও নার্সগণ কর্মবিরতি পালন করিতে শুরু করিলে চিকিত্সা ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়— যাহা প্রকারান্তরে অন্য রোগীদের নানা ভোগান্তির কারণ হইয়া দাঁড়ায়। তাই ভুল চিকিত্সার প্রতিকার বা ভুল বুঝাবুঝির অবসান হওয়া প্রয়োজন।

ভুল চিকিত্সায় মৃত্যুর ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নহে, সারাবিশ্বেই সংঘটিত হইতে দেখা যায়। চিকিত্সক ভেদে রোগীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও দেখা যায় মত প্রার্থক্য। এমনকি অভিজ্ঞতা, সর্বশেষ পড়াশুনা ইত্যাদির কারণেও প্রেসক্রিপশনে তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। অনেক সময় বিলম্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হইবার কারণে রোগীর অবস্থা ক্রমশ খারাপ হইতে থাকে। ইহাছাড়া জটিল অসুখ-বিসুখের ক্ষেত্রে অবশ্যই উপযুক্ত চিকিত্সকের পরামর্শ গ্রহণ ও ভালো ডায়াগনোসিস দরকার। অনেক সময় হাসপাতালে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হইলেও ইহার পিছনের মানুষটি দক্ষ ও অভিজ্ঞ না হইলে ভালো ফল আশা করা যায় না। আবার আমাদের দেশে চিকিত্সকরা একদিনে এত বেশি রোগী দেখেন যে, তাহাদের পক্ষে সঠিক চিকিত্সা প্রদান করাটাও অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হইয়া পড়ে।

সাধারণত কোনো চিকিত্সক ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল চিকিত্সা দেন না। কেননা চিকিত্সকের সফলতা হইল রোগীর সুস্থতা। তবে চিকিত্সা একটি টিম ওয়ার্ক। এই টিমের বড় রিংটি চিকিত্সক হইলেও নার্স ও অ্যাটেনডেন্টদের সহযোগিতা এবং প্যাথলজিকাল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার সমর্থন একান্ত দরকার। এই চেইনের কার্যক্রমে কোথাও কোনো ব্যাঘাত ঘটিতেছে কিনা কিংবা চিকিত্সা উপকরণের ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি আছে কিনা তাহা ভাবিয়া দেখা প্রয়োজন। তাহার পরও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে সেই অনুযায়ী শাস্তি প্রদান ও ক্ষতিপূরণ প্রদান একান্ত কাম্য।

লেখাটি দৈনিক ইত্তেফাকের সৌজন্যে প্রকাশ করা হল।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়