Ameen Qudir

Published:
2018-06-26 15:51:58 BdST

আজও আমার সন্দেহ, তিনি ডাক্তার ছিলেন না আড্ডাবাজ ?


 

 

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল
_____________________________

ডাক্তার

--------

অনেকদিন ধরেই লিখবো ভাবছিলাম, কিন্তু নানা কারণে লেখা হয়ে উঠছিল না ।

বালুরঘাটের প্রয়াত শরদিন্দু (সরকার) ডাক্তারের কথা মনে পড়ছে । সিম্পল এম বি বি এস । আর কোনো ডিগ্রি তাঁর ছিল না ।

তাঁর চেম্বার ছিল ডানলপ মোড় পেরিয়ে একটু এগিয়ে মোক্তারপাড়া রোডে । ঢুকতেই বীরেনদার চায়ের দোকান । অর্ধেক লোক চা খেয়েও পয়সা বাকি রাখতো।

৭৭ য়ে বামফ্রন্ট সরকার আসার পর বীরেনদা সবাইকে বিনে পয়সায় চা খাইয়েছিলেন । এটা অবশ্য আমার শোনা কথা কিন্তু সত্যি ঘটনা ।

পরে অবশ্য নানা কারণে বীরেনদার মোহভঙ্গ ঘটে।

যাক, সে কথা। পরে একদিন বিস্তারিত লিখব, সময় পেলে।

আমি মালদায় আসি ১৯৮০ সালে, তারপর বালুরঘাট যেতাম ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ।

সাতদিন করে থাকতে হতো, যদিও আমার কাজ শেষ হয়ে যেতো চারদিনেই ।

বাকি এক বা দুদিন স্রেফ আড্ডা দিয়েই কাটিয়ে দিতাম, সেটা কমল দাস জানে ।

তখন আরও ডাক্তার ছিলেন ঐ মোক্তারপাড়া রোডে । অমরেশ ডাক্তার ( এল এম এফ), করুণা বাবু ( এম বি বি এস, সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়ের শ্বশুর), অশোক ডাক্তার ( দাঁত ) ।

পরে আরও অনেকে আসেন যেমন দেবু ডাক্তার,শান্তি ডাক্তার ।

শরদিন্দু বাবুর পাকানো সিগারেট খাওয়ার অভ্যেস ছিল । সিগারেট পাকিয়েই পেছনের স্টাণ্ডে রাখা সাদা গামলায় রাখা ডেটল মেশানো জলে সিগারেটের আঠা লাগাতেন ।

একটা স্ফাইগামোম্যানোমিটার ( বি.পি মেশিন), স্টেথোস্কোপ আর একটা রবার লাগানো হাতুড়ী – এই ছিল তাঁর যন্ত্রপাতি ।

মন দিয়ে শুনতেন রুগির অসুখের বর্ণণা । সেই সময় তাঁর হাতের আঙুলে ধরা থাকতো রুগির পাল্স ।
তারপর প্রেসক্রিপশানে লিখতেন বড়জোর দুটো বা তিনটে ওষুধ ।
প্রথম যেদিন যাই, সেদিন কার্ড পাঠিয়েছিলাম , বাইরে বসে । তৎক্ষণাৎ উদাত্ত স্বরে আহ্বান এসেছিল – সারাভাইয়ের ভটচাজ্, ভেতরে আসুন ।
তারপর চললো পুলিসি জিজ্ঞাসা । কোথায় বাড়ী, কি করে এলাম এই বেচু বাবু লাইনে – এই সব । ওদিকে পেশেন্টরা অস্থির । এনার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই । নিজেরই অস্বস্তি লাগছিল । একটা সময় বলেই ফেললাম – ডাক্তারবাবু আপনি পেশেন্ট দেখুন – আমি বরং বসি একটু ।

সম্বিত ফিরলো তাঁর । আচ্ছা আচ্ছা তাই হোক – আসলে কি জানেন, বাইরের লোকেদের সাথে তো আড্ডা দিতে পারি না, তাই খেই হারিয়ে ফেলি ।
একজন করে আসছেন, আর ফি দিচ্ছেন ১০ টাকা করে ( ১৯৮০ সাল , পরে ১৯৮৬ সাল থেকে আমৃত্যু ১৫ টাকা ভিজিট ছিল তাঁর), বেশীর ভাগই দিচ্ছেন না । ওষুধ লিখতে লিখতে একবার করে মুখ তুলে আমায় জিজ্ঞেস করছেন – অমুক ওষুধটা আপনাদের কোম্পানির আছে ? হ্যাঁ বলতেই রুগিকে দেখিয়ে বলছিলেন – ওকে দিন ।
যাঁদের কেস মোটামুটি জটিল – একটা ব্যক্তিগত চিঠি লিখে সরকারি হাসপাতালে রেফার করে দিতেন । পরে খবরও নিতেন সেই রুগির ।
বালুরঘাট গালর্স হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মের সাথে যুক্ত ছিলেন ।
যেদিন সকালবেলা বেশী রুগি দেখা হয়ে যেতো, সেদিন বিকেলে আর চেম্বারে যেতেন না ।
হয়তো আমার হোটেলে আসতেন নয়তো বেশীর ভাগ দিনই তাঁর ব্যক্তিগত রিক্সাওয়ালাকে দিয়ে ডাকিয়ে নিতেন তাঁর বাড়ীতে আড্ডা দেবার জন্য ।
এছাড়া তাঁর আড্ডা বিভিন্ন জায়গায় ছিল তো বটেই ।
আজও আমার সন্দেহ, তিনি ডাক্তার ছিলেন না আড্ডাবাজ ?
_________________________

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল
ঘনাদা নামেই বেশি পরিচিত । ফেসবুকের বাংলা লেখালেখির জগতে ভীষ্ম পিতামহ । সবাই এক ডাকে চেনেন ও মানেন । নুনেতে ভাতেতে, চাপড়ঘন্ট ইত্যাদি একাধিক বই আছে তাঁর ।
---
লেখকের গুণমুগ্ধ অভিজিৎ চন্দের নোটস।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়