Ameen Qudir

Published:
2018-06-01 17:43:42 BdST

শুক্রবারের বিশেষ কলামজাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীর গৌরবের ত্রিশ বছর


 

 

 

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
_________________________

১।মৃত্যু মানুষের অনিবার্য পরিণতি। কিন্তু,সেই মৃত্যু যদি নিজ দেশের পতাকা বহন করে বিশ্ব শান্তিরক্ষার জন্য ভিনদেশের মাটিতে হয় তবে সেই মৃত্যু অমর অজয় অক্ষয়। ২৯ শে মে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষ আন্তজাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালন করে আসছে।অদ্যবধি, সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০০০ জন শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন।তাঁদের এই মহান আত্মত্যাগ স্মরণে এই দিনটি পালন করা হয়।

২।রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,' নাগিনীরা দিকে দিকে ফেলিছে বিষাক্ত নি:শবাস, শান্তির ললিত বানী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস'! পরপর দুটি বিশ্ব যুদ্ধ'র ভয়াবহ হত্যা ও ধংশযজ্ঞ বিবেকবান মানুষকে হতচকিত করে দেয়। আশংকা দেখা দেয় তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ'র। এই আশংকাকে চ্যালঞ্জ হিসেবে নিয়ে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেকে নিয়ে গঠিত হয় জাতিসংঘ।

৩।বিবাদমান রাষ্ট্রসমূহের যুদ্ধ বিরতি বা শান্তি নিশ্চিত করতে শান্তিরক্ষী প্রেরণ করা হয়। আজ থেকে সত্তর বছর আগে আরব ইসরাইল যুদ্ধ বিরতি নিশ্চিত করতে প্রথম শান্তিরক্ষী প্রেরণ করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশও ১৯৮৮ সালে প্রথম শান্তিরক্ষী প্রেরণ করে। ২৯ শে মে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী প্রেরণের গৌরবের ৩০ বছর অতিক্রম করল।

৪।বাংলাদেশ শিক্ষা- দীক্ষা, জ্ঞান - বিজ্ঞান, সমর শক্তিতে আন্তজাতিক পরিমন্ডলে বিশেষ দুর্বল এমন ভ্রান্ত ধারণায় হীনমন্যতায় যখন অনেকেই ভুগে মনোজগতে রক্তাক্ত হচ্ছিলেন তখন গভীর আনন্দ আর গৌরবের সাথে জানা গেল বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ৪০টি দেশে প্রায় লক্ষাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণ করেছে। আফ্রিকা শব্দটিই মূলত বিভীষিকার আরেক নাম। শ্বাপদসংকুল জনপদ,নরমাংস খেকো, জটিল ভাষা, সেরিব্রাল ম্যালেরিয়াসহ অনেক মরণঘাতী অসুখ, বাংলাদেশী জাতীয় খাবারের অভাব,দুর্গম সড়ক ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করেই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

৫।ত্রিশ বছরে শান্তিরক্ষী প্রেরক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বহুবছরই শীর্ষ স্থান দখল করেছিল। আজও দ্বিতীয় শান্তিরক্ষী,এবং তৃতীয় পুলিশ প্রেরক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশেষভাবে আদৃত।প্রথম নারী কন্টিনজেন্ট প্রধানও বাংলাদেশেরই। শুধু মহিলা পুলিশের কন্টিনজেন্ট প্রেরণের সাফল্যের ঝুড়িও বাংলাদেশের। সম্প্রতি সামরিক হেলিকপ্টারের দুইজন নারী বৈমানিক কংগো মিশনে যোগ দিয়েছেন।

৬।শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠাই নয়, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশের প্রায় পুরোপুরিভাবে ভেঙে পরা অবকাঠামো,সড়ক - জনপদ,চিকিৎসা - শিক্ষা ব্যবস্থা, অরাজক আইন শৃংখলা ব্যবস্থাকে পুনরায় ঢেলে সাজিয়ে ভাগ্যহত দেশদের অনেক স্বপ্নপূরণ করেছে বাংলার দামাল সৈনিকেরা। সিয়েরা লিউনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী এতটাই জনবান্ধব ছিল যে, বাংলা ভাষা সেদেশের দ্বিতীয় প্রধান ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

৭।শান্তিরক্ষীরা চেনা - অচেনা ঘাতকের বুলেট, লুকানো বিস্ফোরক জাতীয় অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন।অন্তত ১৩২ জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী নিকটজনের সান্নিধ্য বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুর হলাহল পান করেছেন।

৮।শান্তিরক্ষীরা বাংলাদেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আনছেন। জাতিসংঘের ব্লু হেলমেট পরে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী হিসেবে কংগোতে (২০০৯-১০) এবং ওয়েস্টার্ন সাহারায় (২০১৬-১৭)তে কাজ করবার সুযোগ করে দেয়ার জন্য স্বদেশ মাতাকে বিনম্র সালাম জানাই।

_____________________________

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
আর্মড ফোরসেস ফুড এন্ড ড্রাগ ল্যাবরেটরির উপ অধিনায়কের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন।

এর আগে ছিলেন আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজএ ।
ওয়েস্টার্ন সাহারায় শান্তিরক্ষী হিসেবে সফলভাবে এক বছরের কাজ শেষে আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়