Ameen Qudir

Published:
2018-05-31 18:36:44 BdST

সিজোফ্রেনিয়া নিয়ে যেসব মিথ মিথ্যে


ফাইল ছবি

 

 

প্রফেসর ডা.তাজুল ইসলাম
___________________________

মিথ-১:সিজোফ্রেনিয়া রোগীকে সারাজীবন চিকিৎসা নিতে হবে

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের ঔষধ খেয়ে যেতে হবে বলে একটি মিথ চালু রয়েছে।

প্রকৃত পক্ষে উল্লেখ যোগ্য সংখ্যক রোগী পুরোপুরি ভালো হয়ে যান,২য় বার নতুন করে আক্রান্ত হন না;
এক তৃতীয়াংশ রোগী স্বাভাবিক জীবন- যাপন করে থাকে;
আরো এক তৃতীয়াংশ রোগী প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।

খুব সামান্য সংখ্যক রোগীর তেমন উন্নতি হয় না

।শুধু সেই বিশেষ গ্রুপটিকে আমাদের নজরে পড়ে,রাস্তাঘাটে দেখা যায় ও হাসপাতালে ভর্তি থাকে।

এ জন্য মনে হয় সিজোফ্রেনিয়া রোগী ভালো হয় না ও সারাজীবন চিকিৎসা লাগবে।
তাছাড়া বর্তমানে সিজোফ্রেনিয়ার আরো আধুনিক ও কার্যক্ষম ঔষধ আবিষ্কৃত হয়েছে ও ভবিষ্যৎ এ আবিষ্কার হবে।

তাই এ ভুল ধারনা পরিহার করে তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষন করা বান্চনীয়

মিথ-২: সিজোফ্রেনিয়া রোগীকে বিয়ে করা যাবে না

যদি বিয়ের পর আপনার বা আপনার পার্টনারের সিজোফ্রেনিয়া রোগ হয় তাহলে কি তাকে পরিত্যাগ করবেন?

বা পার্টনার যদি আপনাকে পরিত্যাগ করেন আপনার কেমন লাগবে?

তাছাড়া আরো অনেক রোগ রয়েছে যেগুলো এ রোগের চেয়েও জটিল,দীর্ঘ স্হায়ী এবং অক্ষম করে তোলা।আমরা কি তাদের বিয়ে হতে দেখি না?

তাই এই রোগীদের প্রতি বৈষম্য দেখাবেন না।

যদি কেউ চিকিৎসার মধ্যে থাকে, তারা কর্মক্ষম থাকে, তারা ও তখন অন্যদের মতন সুখী জীবন যাপন করতে পারে।

মিথ-৩: সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা ভয়ঙ্কর, আক্রমনাত্মকও আগ্রাসী

এটিও ভুল ধারনা।

গবেষনায় দেখা গেছে স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে যেমন কিছু লোক আগ্রাসী, আক্রমনাত্মক ও অপরাধী হয়,সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা এরচেয়ে বেশি আক্রমনাত্মক নয়।

যদিও একুয়েট অবস্থায় এদের কেউ কেউ আক্রমনাত্মক হতে পারে,যা আপনার পরিবারের স্বাভাবিক সদস্য ও কখনো কখনো তেমনটি হতে পারে।

বরং মাদকাসক্তরা এ থেকে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর আচরন করতে পারে।

তাই তাদেরকে এরকম লেবেল দেওয়া উচিৎ হবে না

মিথ-৪: এরা কম বুদ্ধি সম্পন্ন / বোকা টাইপের

আগের পোস্টে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী জন ন্যাশ এর কথা উল্লেখ করেছি, যিনি ছিলেন সিজোফ্রেনিয়া রোগী।

তবে সবাই নোবেল বিজয়ী হবে তা নয়,কিন্তু সিজোফ্রেনিয়া রোগী অন্যদের চেয়ে বুদ্ধিমত্বার দিক থেকে কম থাকবে তা নয়।

বুদ্ধি কম হওয়া রোগের নাম " ইন্টেলেকচুয়াল ডিসএবিলিটি " ।

সিজোফ্রেনিয়ায় কারো বুদ্ধি কমে না,যদিও কিছু কগনিটিভ ফাংশন কমতে পারে।

মিথ-৫: শক থেরাপি ( ইসিটি- ইলেকট্রো কনভালসিভ থেরাপি) ক্ষতিকর

অনেকেই ইলেকট্রিক শক কথাটি শুনলেই আতকে উঠেন- ওরে বাবা শক!।

তারা মনে করেন নাটক সিনেমায় বা পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে যে যন্ত্রনাদায়ক শক থেরাপি দেওয়া হয় এটিও বুঝি সেরকম কিছু।

মূলত ইসিটি চিকিৎসা এন্যাসথেসিয়া দিয়ে করা হয়।এতে ব্যথা পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই

।তেমনি এ চিকিৎসায় বড় ধরনের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও নেই।

বরং যে সব ক্ষেত্রে ঔষধ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ (প্রেগনেন্সী) সে ক্ষেত্রে ইসিটি নিরাপদ।
___________________

প্রফেসর ডা.তাজুল ইসলাম
সোশাল সাইকিয়ট্রিস্ট
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল,ঢাকা
e- mail: [email protected]

 

 

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়