Ameen Qudir

Published:
2018-05-28 15:32:00 BdST

'আমি পারলে আপনারা পারবেন না কেন?': বুড়িমার প্রশ্ন বিবেকের কাছে


 

মানবতার জন্য মানুষের অনন্য কর্ম যে কোন মানুষকে অনন্য উচ্চতায় পৌছে দেয়। গরীবের জন্য হাসপাতাল করেছিলেন আরেক গরীব সব্জী বিক্রেতা সুবাসিনী মিস্ত্রী (বুড়িমা) । অসাধারণ এই কর্মের জন্য তিনি এখন উপমহাদেশের সেবাপ্রাণ মাতায় পরিনত হয়েছেন। ইউনিসেফ দূত প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, সাবেক ভারত অধিনায়ক কিংবদন্তি মহারাজ সৌরভ গাঙ্গুলি সহ সবাই এখন বুড়িমার পাশে।
বুড়িমার সেই মহান প্রশ্নটি এখন সবার মুখে মুখে: 'আমি পারলে আপনারা পারবেন না কেন?'
এ বিষয়ে আরও জানাচ্ছেন চট্টগ্রামের
জিতেন কান্তি জিৎ ।

"বুড়িমা'র হাসপাতাল"


·

সবজি বিক্রির টাকায় গড়া মানবতার হাসপাতাল।
যেখানে গরীবের ফ্রি চিকিৎসা হয়-

প্রতিষ্ঠাতাঃ সুবাসিনী মিস্ত্রী (বুড়িমা)

১৯ কাঠা জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ৪৫ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। ২০ জন চিকিৎসক, এর মধ্যে ৪ জন বেতন নেন, বাকিরা বিনে পয়সায় কাজ করেন।
রয়েছে ৩২ জন নার্স। এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসায়
গরীব রোগীদের এক টাকাও লাগে না। বিনা পয়সায় দেয়া হয় ওষুধ।

১০ শয্যার আইসিসিইউ, ভেন্টিলেশন। আউটডোর ছাড়াও মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, আই, ইএনটি,
ইউরোলজি, পেডিয়াট্রিক, ইউরোলজি-সহ একাধিক বিভাগ চলে এখানে। অস্ত্রোপচার হয়, রয়েছে সব রকম পরীক্ষা ব্যবস্থা।

নাম 'হিউম্যানিটি হসপিটাল। তবে লোকমুখে পরিচিতি
'বুড়িমার হাসপাতাল' নামেই। কলকাতার নামি-দামি
হাসপাতালগুলোর দিকে সেবা কাকে বলে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন ৭৩ বছরের বৃদ্ধা। তার প্রশ্ন,
'আমি পারলে আপনারা পারবেন না কেন?'

কী ভাবে কম খরচে মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া যায় তা পরীক্ষা করে দেখতে কলকাতা
আধুনিক-কর্পোরেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আমন্ত্রণ
জানিয়েছেন বৃদ্ধা। তাঁর দাবী, 'ইচ্ছে থাকলে উপায় যে
হয় তা আমি ওদের দেখাতে চাই। মানুষের পাশে দাঁড়ালে আশীর্বাদ পাবেন।

বিশ বছর আগে সুবাসিনী মিস্ত্রীকে এলাকার মানুষ চিনতেন 'সবজি মাসি' বলে। তিনি এখন হাসপুকুরের
'হাসপাতাল দিদিমা'! কী ভাবে হলো?
সবজি বিক্রেতা এক নারী কীভাবে তৈরি করলেন একটা হাসপাতাল? এত টাকা বা পেলেন কোথা থেকে?

পাড়ার জেষ্ঠ্যরা বলেন সেই কাহিনী। সুবাসিনী মিস্ত্রি তাঁর দিনমজুর স্বামী সাধনের চিকিৎসা করাতে পারেননি। সরকারি হাসপাতালে শয্যা মেলেনি, আর বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর সামর্থ্য ছিল না।
বিনা চিকিৎসায় সাধন মিস্ত্রি যখন মারা যান, ছিল না কোন টাকা-পয়সাও। চারটি ছোট ছেলেমেয়ে। সুবাসিনী অক্ষর জ্ঞানহীন। এর পরের কাহিনী সিনেমার গল্পের মতো।

প্রতিবেশী এক প্রবীণ অধ্যাপক বলেন, লোকের বাড়ি কাজ করা দিয়ে উনার যুদ্ধ শুরু। বাদ দেয়া খাবার খেতেন। বাচ্চাদের নিয়ে ধাপার মাঠে ময়লা ঘেঁটে
কয়লা তুলে বিক্রি করতেন। সবশেষে চৌভাগা থেকে
ভোর তিনটায় ঠেলাগাড়িতে কয়লা তুলে বাচ্চা কোলে নিয়ে বাজারে বিক্রি করতেন। বাকি ছেলেমেয়েদের রেখেছিলেন অনাথ আশ্রমে।

 তার প্রশ্ন,
'আমি পারলে আপনারা পারবেন না কেন?'

 

সরশুনার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক রঘুপতি চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, 'প্রথম যে দিন এলাকার লোকদের ডেকে হাসপাতাল করবেন বলে উনি জানালেন, আমরা কেউ বিশ্বাস করিনি। যে দিন দেখলাম ধানি জমিতে কোমর পানি ঠেলে মাথায় করে মাটি নিয়ে ফেলছেন। তখন আমরা ভাবতে শুরু করলাম কিছু একটা করবেন উনি।

তখন আশপাশের মানুষ, গ্রাম প্রধান সবাই একসঙ্গে তৈরি করলেন ট্রাস্ট। সেচ্ছাসেবী বাহিনী তৈরি হলো।
সবাই টাকা দিল। সেটা নব্বই দশকের শুরুর দিকের কথা। প্রথমে তৈরি করা হয় আটচালা ঘর পরে এই ভবন-বাড়ি।

এখন আধময়লা শাড়ির ঘোমটাটা মাথায় টেনে বুড়িমা ঘুরে বেড়ান হাসপাতালের প্রতি কক্ষে, রোগীদের কাছে। ফোকলা দাঁতে হেসে বলেন, সবাই বলেছিল, মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু যে কাছের লোকটাকে হারিয়েছে সে-ই জ্বালাটা জানে। জিদ ছিল, যেন আমার স্বামীর মতো কাউকে মরতে না-হয়। ভাল কাজে ঠিক লোক আর টাকা জুটে যায়।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়