Ameen Qudir

Published:
2018-05-09 19:00:14 BdST

জিপিএ ৫ পাওয়া সন্তানের অভিভাবক এবং সচেতন নাগরিকের কাছে অভাজনের খোলা চিঠি


ফাইল ছবি।

 

 

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ
____________________________________

প্রিয় অভিভাবক -সচেতন নাগরিক ,

সালাম।সদ্য প্রকাশিত এস এস সি পরীক্ষায় আপনার সন্তান জিপিএ ৫ পেয়েছে। দীর্ঘ দশ বছর নিরলস শ্রম সাধনা ,মেধার সন্মিলনে এই সাফল্য সন্দেহাতীতভাবে অনেক বড় অর্জন।আমি গভীর আনন্দে আমাদের সন্তানদের আগাম অভিনন্দন জানাই ।প্রিয় অভিভাবক ,আপনারা যারা সন্তানদের এই পর্যায়ে আনতে সঠিক পথ দেখিয়েছেন,অনুপ্রাণিত করেছেন তাঁদেরকেও জানাই মোবারকবাদ। সমুদ্র সমান মানসিক কষ্ট করেছেন, নিজে না খাইয়ে সন্তানকে ভালমন্দ খাইয়েছেন ।নিজেদেরকে অনেক সুখ সুবিধা বঞ্চিত করে শিক্ষার বিপুল ব্যয় সাধ্য অনুযায়ী বহন করেছেন ।সৃষ্টিকর্তার কাছে হাত তুলে গোপনে হাত তুলে অশ্রুপাত করেছেন ।

২।সামনের অল্প কয়দিনের মধ্যেই শুরু হবে ভর্তি পরীক্ষা ।কমোলমতি আমাদের সন্তানেরা ঠাই করে নেবে দেশ বরেণ্য কলেজগুলিতে।সেই নির্বাচনী পরীক্ষায় অন্যতম সহায়ক হাতিয়ার হিসেবে এই ভাল রেজাল্টটি অবশ্যই কাজ দিবে ,পাশাপাশি তাদের আরো বেশী আত্মপ্রত্যয়ী করবে।

৩।স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল ।তাই ভর্তি পরীক্ষার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্য ঠিক রাখা বিশেষ দরকার। যতটুকু তারা ভার বহন করতে পারে তার চেয়ে বেশী দিলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যহানির আশংকা থাকে। আমাদের ঘরের সন্তানটি কতটুকু ভার বহন করতে পারে অভিভাবক হিসেবে আমরাই সবচেয়ে ভাল জানি ।তাই অন্য কারো সাথে অসম প্রতিযোগিতায় না নামিয়ে' সুষম ' ভার দেয়াটাই দূরদর্শিতার পরিচয় হবে।

৪।মেধা সবার সমান থাকে না।তাই 'অমুকের সন্তান পেরেছে,তুই কেন পারবি না ?' এই চাপাচাপিতে হিতে বিপরীত হতে পারে। মনে রাখতে হবে কলেজে সীট সংখ্যা হাতে গোণা মাত্র ।তাই ,বিরাট সংখ্যক জি পি এ ৫ পাওয়া ছাত্র -ছাত্রীর মাঝে অল্প সংখ্যক প্রত্যাশিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে ।অর্থাৎ অধিকাংশরাই পারবে না ।তাই ভর্তি পরীক্ষায় পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে না পারলে ' জীবনের সকল স্বপ্নের মৃত্যু ' এই ভয়াল উপলব্ধি যেন তাদের ভিতর না ঢুকে যায় ।

৫।কেউ কেউ এখনই সন্তানদের বিদেশে পড়াশুনা করাবার কথা ভাবছেন। সেখানেও ভুঁইফোঁড় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। আছে মোটা টাকা খরচের ধাক্কা ।সেটি সামাল দাওয়ার ক্ষমতা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত । আবার মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সদ্য সদ্য কৈশোর পেরুনো বয়েসে পাশ্চাত্যের খোলামেলা পরিবেশে কেউ যেন পথভ্রষ্ট না হয় সেটিও প্রজ্ঞার সাথে যাচাই করা উচিৎ ।

৬। সর্বোপরি চিত্তের সাথে ঐশ্বর্যের সমন্বয় ঘটুক ।পাঠ গ্রহণ কুইনিন গেলার মত তেতো না হয়ে হোক ভালবাসার বিষয় ।যুক্তি এবং নীতিবোধে সিক্ত হোক হৃদয় কুসুম ।সুশিক্ষিত মাত্রই স্বশিক্ষিত ।তাই অভিভাবক হিসেবে আমরা পথ দেখিয়ে দিতে পারি মাত্র গন্তব্যে তাঁদেরই পৌঁছুতে হবে। মনন হোক আলকিত ,অনুপ্রাণিত হোক উন্নত নৈতিক চরিত্রের দীপশিখায় ।শুধু ভারবাহী পশুর মত টেনে নেয়া জীবনই নয়,চাই সৃষ্টিশীল ,আনন্দিত, সমাজ -দেশের কাছে দায়বদ্ধ হোক তাদের জীবন ।

'আমাদের সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে '
ইতি,
খোশরোজ সামাদ,
সন্তানের এক অভিভাবক ।
________________________

 

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ

 

আর্মড ফোরসেস ফুড এন্ড ড্রাগ ল্যাবরেটরির উপ অধিনায়কের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন।

এর আগে ছিলেন আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজএ ।
ওয়েস্টার্ন সাহারায় শান্তিরক্ষী হিসেবে সফলভাবে এক বছরের কাজ শেষে আর্মড ফোরসেস মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়