Ameen Qudir

Published:
2018-05-08 23:54:52 BdST

বিয়ের আগে পরীক্ষা করলে রক্ত; সন্তান থাকবে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত


সকল রোগের নিরাময় হোক। প্রতিকী ছবি। ছবির চরিত্র বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের নয়।

 


ডা. হৃদয় রঞ্জন রায়
____________________________

৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস।

থ্যালাসেমিয়া জানুন
বংশ নিরাপদ রাখুন।।

ছবি দেখে ঘাবরানোর কিছু নেই। একদম সহজ!
আমাদের রক্তের লোহিত কণিকায় (RBC) হিমোগ্লোবিন থাকে। এর কাজ হল ফুসফুস থেকে কোষে অক্সিজেন নিয়ে যাওয়া ও কোষ থেকে ফুসফুসে কার্বন ডাই অক্সাইড ফিরিয়ে আনা। তো এই হিমোগ্লোবিনের ১টি অনু ৪টি প্রোটিন অনু দিয়ে গঠিত যার প্রত্যেকটির সাথে ১টি করে হিম অনু লাগানো থাকে। ৪টি প্রোটিনের (এখানে গ্লোবিন বলা হয়) ২টি আলফা গ্লোবিন, ২টি বিটা গ্লোবিন। থ্যালাসেমিয়া হয় এই গ্লোবিনের ত্রুটির কারনেই।

জেনেটিক্স সম্পর্কে আগেও আমরা শিখেছি। মানব কোষে ২৩ জোড়া (৪৬টি) ক্রোমোজম থাকে যার ২৩ টি বাবা ও ২৩টি মা থেকে আসে। এদের আকার আকৃতির উপর ভিত্তি করে ১ থেকে ২২, X, Y - এভাবে চিহ্নিত করা হয় যাকে বলে Kariotype. এদের মধ্যেই থাকে জিন (Genes) যা আমাদের শরীরের সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে।

তো ১১ নাম্বার ক্রোমোজমে ১টি বাবা থেকে আসা জিন ও ১টি মা থেকে আসা জিন (মোট ২টি) বিটা গ্লোবিন তৈরী করে। আর ১৬ নাম্বার ক্রোমোজমের ২টি বাবা ও ২টি মায়ের জিন (মোট ৪টি) আলফা গ্লোবিন তৈরী করে। এখন কোন কারনে (বংশগত) এই জিনগুলি যদি ক্রটিযুক্ত (Mutation) হয় তবে থ্যালাসেমিয়া হবে।

থ্যালাসেমিয়া একটি Autosomal Recessive Disease. অর্থাৎ বাবা মা উভয়ই যদি ক্রটিযুক্ত জিন বাহক (Carrier) হয় তবে এই অসুখ হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর যদি যে কোন একজন ক্রটিযুক্ত ও অন্যজন স্বাভাবিক হয় তবে এটা হবেনা। বিটা জিন ক্রটিযুক্ত হলে বিটা গ্লোবিন তৈরী হবেনা বা কম তৈরী হবে। ফলে বিটা থ্যালাসেমিয়া হবে। ঠিক তেমনি ত্রুটিযুক্ত আলফা জিনের কারনে আলফা থ্যালাসেমিয়া হবে। আরও অনেক বিষয় আছে। তবে সেসবের বর্ননায় আমরা যাব না।

থালাসেমিয়ার কারনে ক্রুটিযুক্ত হিমোগ্লোবিন হয়। ফলে লোহিত কণিকার আকার বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি হয় যা সহজে ভেঙ্গে যায়। এতে রক্তশূন্যতাসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।

প্রিয় ফেবু বন্ধুরা, কোন পরিবারে একটি থ্যালাসেমিয়া বাচ্চা থাকলে সেই পরিবারের উপর কি রকম মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ পড়ে তা কি জানেন? কিছুদিন পর পর বাচ্চাকে রক্ত দিতে হয়। আরও নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। আবার এটা নির্মূল করাও সম্ভব না। তাহলে উপায়? উপায় একটিই। আর তা হল বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে দেখা। হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফরেসিস পরীক্ষা করলে সেটা জানা যাবে (HbE থাকবে রেপোর্ট এ)। ছেলে মেয়ে উভয়ই বাহক হলে সেই বিয়ে আর দেয়া যাবেনা। যে কোন একজন বাহক হলে সমস্যা নেই।

সামাজিক সচেতনতা বাড়ান। থ্যালাসেমিয়ার অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকুন।

৮ ই মে এর বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস সফল হোক।
এবারের প্রতিপাদ্যঃ
বিয়ের আগে পরীক্ষা করলে রক্ত
সন্তান থাকবে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত।

______________________________

 

লেখক ডা. হৃদয় রঞ্জন রায়
লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক।সহযোগী অধ্যাপক, রংপুর মেডিকেল কলেজ।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়