Ameen Qudir

Published:
2018-05-04 17:54:49 BdST

মেয়েটি আমাদের ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থার সর্বশেষ বলি


 

 

ডা. কামরুল হাসান সোহেল
__________________________________

বাংলাদেশ এক ভয়বাহ ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে, ধর্ষণ আর ধর্ষণ প্রচেষ্টাই হচ্ছে সেই ক্রান্তিকালের কারণ। কি যে হল এই দেশের ছাত্র,গুন্ডা,মাস্তান,ছেলে, বুড়ো,মুটে,মুজুর, ড্রাইভার,হেল্পার,হুজুর,মুয়াজ্জিন, শিক্ষক,চিকিৎসক ধর্ম,বর্ণ,গোত্র নির্বিশেষে সবাই ধর্ষণ আর ধর্ষণ প্রচেষ্টায় মেতে উঠেছে! এক অস্থির সময় যাচ্ছে, মেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়। মেয়েরা এই ব্যাপারে সচেতন ও নয়। নিজেদের নিরাপত্তার দাবীতে সোচ্চার ও নয় ওরা।

ক্লাস নাইনে পড়ে একটি বাচ্চা মেয়ে 'তাসফিয়া' ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে এক তারই সমবয়সী বদমাইশ ছেলে 'আদনানের' সাথে দেখা করতে গেল মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে। সেই ছেলে না কি এক গ্যাং এর লিডার? তারা দুইজন এক চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এ খাওয়া দাওয়া করে তারপর কি ঘটে তা এখনো অন্ধকারাচ্ছন্নই রয়ে গেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে আদনান মেয়েটিকে তার গ্যাং এর অন্য সদস্যদের হাতে তুলে দেয়,তারা সবাই মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে তারপর মেরে লাশ ফেলে রাখে পাথরের উপরে?

মেয়েটি ছেলেটিকে বিশ্বাস করেছিল,হয়তো বন্ধু ভেবে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল কিন্তু ছেলেটি মেয়েটির এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো, তাকে ধোকা দিয়ে বাড়ী থেকে বের করে নিয়ে এসে তার গ্যাং এর হাতে তুলে দিলো! বোকা মেয়ে বুঝতেই পারেনি মানুষ এতো খারাপ হতে পারে?এত ছোট মানুষ বুঝতে না পারাই স্বাভাবিক, তার সমবয়সী একটি ছেলে এতোটা ক্রিমিনাল মাইন্ডের হবে, কোন গ্যাং এর লিডার হবে তা হয়তো সে ভাবতে পারেনি।মেয়েটির উচিৎ ছিল কাউকে ভালোমতো না চিনে, না জেনে,না বুঝেই তার ডাকে সাড়া না দেয়া। কারো ডাকে সাড়া দিয়ে বাসা থেকে একা বাইরে বের না হওয়াই উচিৎ ছিল তার।

মেয়েটি আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া সমাজব্যবস্থার,ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থার সর্বশেষ বলির শিকার হয়েছে। মেয়েদের উচিৎ নিজেদের নিরাপত্তার দিকটি সবার আগে ভাবা,কাউকেই এতো সহজে বিশ্বাস না করা, একা একা কোথাও,কারো সাথে দেখা করতে না যাওয়া, বাসায় মা বা বড় বোন থাকলে কারো সাথে কোন সম্পর্ক থাকলে তার ব্যাপারে সব ইনফরমেশন জানানো,মায়েদের উচিৎ মেয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যেন মেয়ে মা কে সব কিছুই বলতে পারে। মেয়ের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে, তার বন্ধু-বান্ধব কে তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে, মেয়েকে একা কোথাও যেতে দেয়া যাবেনা,হয় নিজে সাথে যাবেন নাহয় কাউকে সাথে দিবেন। মেয়েরা বিপদে পরলে যেন নিজেদের রক্ষা করতে পারে তার জন্য জুডো-কারাতে শেখাতে পারেন।

ছেলেদের অভিভাবকদের আরো বেশি সতর্ক থাকা উচিৎ। ছেলে কার সাথে মিশে,কি করে তার খোঁজখবর রাখা উচিৎ। ছেলে যদি খারাপ সংগীদের সাথে মিশে তাকে সেই সংগীদের কাছ থেকে দূরে সরাতে হবে, খারাপ কোন কিছুতে জড়িয়ে পরলে তাকে সেই খারাপ পথ থেকে ফিরাতে হবে।ছেলেদের পারিবারিক মূল্যবোধ শিখাতে হবে,ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা দিতে হবে তাহলেই তার ছেলে খারাপ হয়ে যাবেনা,খারাপ সংগীদের সাথে মিশবেনা,খারাপ পথে পা বাড়াবেনা।

দেশে ধর্ষণ,ধর্ষণ শেষে হত্যা, ধর্ষণ প্রচেষ্টা বেড়ে গেছে এইগুলোর একটিরও কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়ায়।বিচারহীনতাই বর্তমান ক্রান্তিকাল সৃষ্টির জন্য দায়ী। তাসফিয়া ধর্ষণ ও হত্যাকান্ড সহ অতীতের সকল ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই, দোষীদের শাস্তি চাই। দেশে ধর্ষণ এর দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আইন এবং তা বাস্তবায়ন করার দাবীতে গণ আন্দোলন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবী। এই ব্যাপারে নারীবাদীরা চুপ কেন ঠিক বোধগম্য নয়, উনারা সোচ্চার হলেই,জনগণকে সচেতন করলেই, সবাইকে সমবেত করলেই একটি গণ আন্দোলন গড়ে।তোলা যেত এবং এতো দিনে সংসদে একটি যুগোপযোগী "ধর্ষণ এর দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ধারা" সম্বলিত আইন পাস হয়ে যেত।
আমরা ধর্ষণমুক্ত একটি সমাজ চাই, ধর্ষণমূক্ত একটি দেশ চাই।
______________________________

 

ডা. কামরুল হাসান সোহেল
আজীবন সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ , কুমিল্লা জেলা।
কার্যকরী সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
আজীবন সদস্য,বিএমএ কুমিল্লা।
সেন্ট্রাল কাউন্সিলর, বিএমএ কুমিল্লা

 

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়