Ameen Qudir

Published:
2018-04-13 17:48:42 BdST

আসিফা,মা আমার



ভারতে গুর্জ্জর শিশু অাসিফা বানুর ধর্ষণ ও কতল ঘটনা নিয়ে সারা ভারতবর্ষর মানুষ ক্ষোভে উত্তাল। লেখক কবি সমাজসেবী সাধারণ মানুষ সবাই প্রতিবাদ মুখর। প্রতিবাদে শামিল ডাক্তারসমাজও। অধ্যাপক ডা. অনির্বাণ বিশ্বাস প্রতিবাদ জানিয়েছেন কাব্যময় বিক্ষোভে।

আসিফা,মা আমার

অধ্যাপক ডা. অনির্বাণ বিশ্বাস
___________________________

( এই লেখাটি আমি কামদুনির পরে লিখেছিলাম...আবার আজ লিখছি..জানি ক্রমাগত লিখেই যাব..বেজন্মাদের মৃত্যু হয় না )
...........................................................................................

অপমৃত্যু যাদের হয়, তাদের শ্মশানবন্ধু পারতপক্ষে কেউ হতে চায় না; নানা অজুহাতে এড়িয়ে চলে।

চলমান সমাজে নির্যাতিত-মৃত মেয়েকে নিয়ে শ্মশানে বাবা..সঙ্গে অল্প সহমর্মী..

‘মুখাগ্নি কে করবে ?’ বাবা অবুঝের মতো জিজ্ঞাসা করে ।
‘কেন, আপনি....আপনারই তো মেয়ে।’

মেয়েটাকে যখন ধোয়ামোছা করে সাদা কাপড়ে জড়িয়ে শুকনো কাঠের ওপর দখিনমুখো করে শোয়ানো হলো, তখনো বাবা জানে না মেয়ের সংগোপন অভিমানের কথা।

যখন ঘি কেরোসিন ঢেলে শুকনো সব কাঠ আর এক টুকরো আদুরে মেয়েটাকে দাহযোগ্য করে তোলা হলো, তখনো সে জানে না মেয়ের মনের কথা।

কাঠের ভেতর মুখ-লুকানো মেয়ে আমার...। সে কাঁদছে না, রাগছে না, অভিমান করছে না, ডাকছে না,
‘বাবা, ওরা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। বাবা, ওরা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে!’
‘কারা মা ? কারা তোকে কষ্ট দিচ্ছে মা ?’
‘বাবা, ওরা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। বাবা, ওরা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে!’
‘নাম বল মা। ওদের নাম বল। আমি লোক নিয়ে আসব।পার্টিকে বলব। পুলিশ ডাকব। নাম বল মা? মা গো, নাম বল?’
‘বাবা, ওরা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। বাবা, ওরা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে!’

ওর শরীর মন্ত্রপূত পবিত্রতায় ঢাকা; বেদনার চিহ্নগুলো এখন আর চোখে পড়ে না।

বাবা স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে চিতার সামনে। ঊর্ধাঙ্গ উন্মুক্ত, পরনে দুভাঁজ করা ধুতি। মেয়েকে পোড়াবে বলে হাতে ধরে রয়েছে জ্বলন্ত কুশের গোছা। কাঁধে জলভরা কলসি; অন্তিম শয়ানে রেখে বাবা মেয়েকে প্রদক্ষিণ করবে বারবার তিনবার; প্রতিবার জীবন-কলসির গায় ফুটো করে ছড়িয়ে দেবে মেয়ের অসহায় প্রাণতরঙ্গ।

‘মুখাগ্নি করুন... দেরি করবেন না।’ পুরোহিত বলে ওঠে।
পেছনে ‘মা, মা গো ওকে পুড়িও না’ বলে মায়ের আর্তনাদ ।
....................................................
সদ্য সূক্ষ্ম দেহধারিণী মেয়েটিকে উদ্দেশ করে কলাপাতায় চাল-কলার যে-পিন্ড দেওয়া হয়েছে, একটি পাতিকাক সেটির দিকে ভয়ে-ভয়ে এগিয়ে আসে...
________________________________

অধ্যাপক ডা. অনির্বাণ বিশ্বাস

 

 । কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক। কবি। শুভ চিন্তক।

 

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়